শোধ তুলে ফাইনালে কুমিল্লা
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ৮:৩৫ পূর্বাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
বিপিএলের তৃতীয় আসরে দল গড়েই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। কিন্তু গেল আসরে কোয়ালিফায়ারে রংপুর রাইডার্সের কাছে হারায় ফাইনালে খেলতে পারেনি।
এবারের টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বের দুই দেখাতেই রংপুরের কাছে হেরেছে। এসব কিছুর শোধ কুমিল্লা গতকাল তুলে নিল প্রথম কোয়ালিফায়ারে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন রংপুরকে হারিয়ে বিপিএলের ফাইনালে উঠল দ্বিতীয়বার।
মিরপুরে এই লড়াইয়ে হেরে গেলেও মাশরাফী বিন মোর্ত্তজার রংপুরের ফাইনালে খেলার আশা শেষ হয়ে যায়নি। শীর্ষ দল হিসেবে কোয়ালিফায়ারে উঠেছিল।
তাই দ্বিতীয় সুযোগ থাকছে। আগামীকাল মিরপুরেই দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে ফাইনালে ওঠার শেষ লড়াইয়ে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ঢাকা ডায়নামাইটস। সাকিব আল হাসানের দল গতকালই এলিমিনেটর ম্যাচে চিটাগং ভাইকিংসকে বিদায় করে ওই ম্যাচে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে।
১৬৬ রানের টার্গেট দেওয়া রংপুরকে শুরু থেকে তামিম ইকবাল চাপে রেখেছিলেন। অবশ্য পঞ্চম ওভারে বল হাতে নিয়েই মাশরাফী আউট করেন দেশসেরা ওপেনারকে। ১৪ বলে ১৭ রান তোলা তামিম আউট হওয়ার ঠিক আগের বলে মাশরাফীকে ছক্কা হাঁকিয়েছিলেন।
দুই ম্যাচ আগে অপরাজিত সেঞ্চুরি হাঁকানো ইভিন লুইস খেলেছেন দুর্দান্ত। ফর্ম হারিয়ে বসেছিলেন যে এনামুল হক বিজয় সেই তাকে নিয়ে ৯০ রানের ম্যাচ জেতানো জুটি লুইসের। যে ছক্কাগুলো তারা হাঁকিয়েছেন দ্বিতীয় উইকেটে ব্যাট করার সময় তার বেশিরভাগ গেছে গ্যালারিতে। সুযোগ পাননি বোলার-ফিল্ডাররা।
৩২ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৩৯ করে বিজয় বোল্ড হয়েছেন শফিউল ইসলামের বলে। কিন্তু লুইস পুরোটা সময় ম্যাচটাকে হাতের মুঠোয় নিয়ে ব্যাট করে গেছেন। ক্যারিবিয়ান এই দুর্ধর্ষ ওপেনার শেষে ৫৩ বলে ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৭১ রানে অপরাজিত থেকে জয় নিয়ে ফিরেছেন।
ম্যাচসেরা তিনি। বিজয়ের বিদায়ের পর ব্যাটে আগুন ঝরিয়েছেন শামসুর রহমান। ১৫ বলে ২ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে ৩৪ নটআউট তিনি। তাতে সাত বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের বিরাট জয়ে ফাইনালে কুমিল্লা।
আগে ব্যাট করে রংপুরের ১৫ ওভারে ৪ উইকেটে ৯১। হতাশ সমর্থকদের এরপর জাগিয়ে তোলেন বেনি হাওয়েল। চলমান আসরে অবিশ্বাস্য ধারাবাহিকতা দেখানো রাইলি রুশো তাকে সঙ্গ দিয়ে হাত মিলিয়েছেন।
ইংলিশ হাওয়েল ২৮ বলে ৫ ছক্কা ও ৩ চারে ৫৩ রানে থাকেন অপরাজিত। শেষ পাঁচ ওভারে ৭৪ রান তুলে কুমিল্লাকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পেরেছিল রংপুর। শেষে সংগ্রহটা ৫ উইকেটে ১৬৫।
কুমিল্লা পুরোটা সময় বোলিং ছন্দ ধরে রাখতে পারেনি। রুশো-হাওয়েলের পঞ্চম উইকেটের ৭০ রানের জুটি মূলত রংপুরের ইনিংসের মেরুদণ্ড গড়েছে। শুরুর কাজটা ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৪৪ বলে ৪৬ রানে করে দিয়ে গিয়েছিলেন ক্রিস গেইল। অবিশ্বাস্য ধারাবাহিক রুশো ৩১ বলে ৪ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কায় অমূল্য ৪৪ রানে দলকে দিয়েছেন বাড়তি অক্সিজেন।
তবে সবার আগে আসবে হাওয়েলের নাম। আগে খেলা ছয় ম্যাচে সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ১৩। এবার ছয় নম্বরে যখন ক্রিজে আসেন তখন ১২.১ ওভারে ৪ উইকেটে ৭৬ রংপুরের। কুমিল্লার বোলাররা চেপে ধরেছেন। গোটা দুয়েক ক্যাচ সাবেক চ্যাম্পিয়নরা ফেললেও পুষিয়ে দিয়েছে। এই অবস্থায় রানটা যখন দ্রুত বাড়ানোর দরকার তখন ষোড়শ ওভার থেকে চিত্র বদলাতে থাকে।
প্রথম দুই ওভারে ১১ রান দেওয়া মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১৭ ও ১৯ ওভারে যথাক্রমে দেন ১২ আর ১৯। এই দুই ওভারে রুশো ও হাওয়েলের কাছে ৩ ছক্কা ও ২টি চারের শিকার বোলার। অবশ্য রুশোকে নিজের শেষ ওভারে আউট করতে পেরে সাইফউদ্দিন কিছুটা স্বস্তি পেয়েছেন কষ্টের মাঝে।
তারও আগে আট ওভারে ২ উইকেটে রংপুর তোলে ৫০। গেইল তখন ৪২ রানে। রুশোর ২। মেহেদী মারুফ ১ ও মোহাম্মদ মিঠুন ৩ রানে আউট। এই আসরে নিজের ছায়া হয়ে থাকা গেইল শুরু থেকে দারুণ সতর্ক। চারের ওপর ভর করেছিলেন।
স্প্রিন্টারের মতো দৌড়ে দূরত্ব কাভার করছিলেন কখনো। একটি রান নিতেও মরিয়া। জায়গায় দাঁড়িয়ে বিশাল ছক্কা হাঁকানো গেইল যেন উধাও। একটি অবশ্য মারলেন মেহেদী হাসানকে। ওই মেহেদীর কারণেই চল্লিশ পেরিয়ে নতুন জীবন পেলেন। তরুণ ফিল্ডার সহজ ক্যাচ ছেড়েছেন সঞ্জিত সাহার বোলিংয়ে।
অবশ্য তার পরের ওভারেই স্পিনার মেহেদী শিকার করেছেন গেইলকে। এবারও ছক্কার চেষ্টা ছিল। লং অন থেকে নিজের ডানে দৌড়ে থিসারা পেরেরা ক্যাচ নেন। ১০.১ ওভারে ৩ উইকেটে ৬৭। লড়ার পুঁজি না পাওয়ার শঙ্কায় পড়া রংপুরকে শেষে কিছুটা নির্ভরতা দিতে পেরেছিল হাওয়েল ও রুশোর ব্যাট। যদিও শেষে জয়ী দলটা কুমিল্লা।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
রংপুর রাইডার্স :
১৬৫/৫, ২০ ওভার (হাওয়েল ৫৩*, গেইল ৪৬, রুশো ৪৪, নাহিদুল ৬*, মিঠুন ৩, বোপারা ৩; সঞ্জিত শাহা ১/১৪, মেহেদী ১/২৮, সাইফউদ্দিন ১/৪২)।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স :
১৬৬/২, ১৮.৫ ওভার (লুইস ৭১*, এনামুল ৩৯, শামসুর ৩৪*, তামিম ১৭; শফিউল ১/২১, মাশরাফী ১/৪৩)।
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮ উইকেটে জয়ী।ম্যাচসেরা : ইভিন লুইস।