বিয়ানীবাজারে রিমা মৃত্যুর এক মাস: ফরেনসিক রিপোর্টই ভরসা!
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ জুলাই ২০১৯, ২:১২ অপরাহ্ণছাদক আহমদ আজাদ
বিয়ানীবাজারে গৃহবধূ রিমা বেগম (২৮) ওরফে বুশরা’র মৃত্যু রহস্য এক মাসেও উদ্ঘাটিত হয়নি। ফরেনসিক রিপোর্ট ছাড়া রহস্য অজানাই থেকে যাচ্ছে। এ রিপোর্ট পেতে আরো কিছুদিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা এখনো বাড়িছাড়া রয়েছেন।
গত ৯ জুন দুপুরে রান্নাঘরের ঘুণেধরা একটি কাঠের বর্গার সাথে রিমার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়। এরপর থেকেই রিমার দেড় বছরের শিশু আফরোজা জান্নাত নুরী তার নানাবাড়িতে রয়েছে।
রিমার মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠেছিল, সে আত্মহত্যা করেনি। তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আবার দু’একজন ঘনিষ্ট আত্মীয় বলেছেন, ননদ-জামাই হোসেন আহমদের লোলুপ দৃষ্টি থেকে বাঁচতে হয়তো রিমা আত্মহত্যা করতেও পারে।
এদিকে, রিমার মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর শ্বশুর-শ্বাশুড়ি বাড়ি থেকে অন্যত্র চলে গেছেন। যাওয়ার সময় ঘরের আসবাবপত্রও সাথে নিয়ে গেছেন। এমনকি এ ঘটনার মূল কিংবা প্ররোচিত কথিত ঘাতক প্রবাসে চলে যাওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে। এসব আশংকা এবং দুঃখের কথা জানিয়েছেন রিমার ছোটভাই সাহেল আহমদ।
রিমার গর্ভধারিনী মা জয়নব বেগম আবারও দাবী করেছেন, তার মেয়েকে (রিমা) বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করে নাটক সাজাতে ঝুলানো হয়েছে।
নিহত রিমা’র শ্বশুর ফলিক মিয়া গতকাল সোমবার রাতে বলেন, ‘আমি নতুন কিচ্ছু জানি না। পুলিশ কইছে রিপোর্ট আইলে বোঝা যাবে কিতা অইছিল।’ তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ের জামাই হোসেন কোথায় আছে আমার জানা নেই। সে আমাদের সাথে যোগাযোগ করে না।’
নিহত রিমার ননদ জামাই হোসেন আহমদের মোবাইল ফোন এখনো বন্ধ রয়েছে। তবে ঘটনার দিন থেকে সে বাড়িতে নেই কিংবা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন বলে জানিয়েছেন তার পিতা সফিকুল ইসলাম। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদকের সাথে সেলফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, আমার ছেলের ব্যাপারে পত্রিকা পড়ে যা জেনেছি তা খুবই অন্যায় কাজ। আমি আগে বিষয়টি জানলে ছেলেকে শাসন করতাম। তিনি বলেন, আমি আইনকে শ্রদ্ধা করি। এতে আমার ছেলে অপরাধী হলে তার বিচার হোক।
আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, ‘আমি রিমার মরদেহ দেখেছি। এটি আত্মহত্যা নাকি অন্য কিছু তা বলা মুশকিল।’
বিয়ানীবাজার থানার এসআই ও তদন্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম গতকাল সোমবার রাতে বলেন, আমরা এখনো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পাইনি। রিপোর্ট পেলেই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জানা যায়, উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের উত্তর চন্দগ্রামে ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি কাতার প্রবাসী চাচাতো ভাই জুবের আহমদের সাথে রিমা বেগম (২৮) ওরফে বুশরা’র বিয়ে হয়। কয়েকমাস পর ছুটি শেষ হলে জুবের কাতার চলে যান। এর কিছুদিন পর তার এক মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়।
এদিকে, রিমা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যুর এক সপ্তাহ পর ১৬ জুন দৈনিক সিলেটের ডাক পত্রিকার শেষ পৃষ্ঠায় এবং অনলাইন বিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম-এ বিয়ানীবাজারে গৃহবধূ রিমার মৃত্যু: প্ররোচিত আত্মহত্যা, না পরিকল্পিত হত্যা? শিরোনামে একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশিত হয়।
তখন জানা যায়, মৃত্যুর ৩-৪ মাস আগ থেকে রিমা বেগমকে কু-প্রস্তাব দেন তারই ননদজামাই হোসেন আহমদ (৩২)। সে গোলাপগঞ্জ উপজেলার রণকেলী ইয়াগুল গ্রামের শফিকুল ইসলামের পুত্র। অনৈতিক এসব প্রস্তাবে সম্মত না হওয়ায় এ ঘটনা ঘটতে পারে বলে তখন অনেকে ধারণা করেন।
গত পবিত্র ঈদুল ফিতরের দু’দিন পর রিমার মা তার সন্তানদের নিয়ে পিত্রালয়ে বেড়াতে যান। এ সময় রিমাকে সাথে যাওয়ার কথা বলা হলেও তিনি যাননি। পরে রিমার মৃত্যুর দিন বিশেষ কাজে বাড়ি ফিরেন তার ভাই সাহেল আহমদ। উঠানে পা রাখতেই চিৎকার শুনতে পান। রান্নাঘরে প্রবেশ করে দেখেন ঝুলন্ত অবস্থায় রয়েছেন তার বোন রিমা বেগম। এ সময় বোনের শ^শুর ফলিক মিয়া ও তার ভাগ্নে নুরুল হক রান্নাঘরে ছিলেন। পরে স্বজনরা নগরীর উপকণ্ঠে ইবনে সিনা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক রিমা বেগমকে মৃত ঘোষণা করেন।
খবর পেয়ে ঐদিন বিকেলে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে যায়। এ ঘটনায় পুলিশ রাতে অপমৃত্যু মামলা রেকর্ড করে। মামলা নং ৯, তারিখ ০৯/০৬/২০১৯ ইংরেজি। তবে নিহতের ছোট ভাই সাহেল আহমদ অভিযোগ করে আসছেন, তার কাছ থেকে পুলিশ খবরদাতা হিসেবে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে। তিনি আত্মহত্যা মামলা করেননি।