নৌকা জিতবে কী?

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ মার্চ ২০১৯, ১০:০২ অপরাহ্ণসিলেট অফিস:: সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত দু’টি উপজেলা বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ। এ দু’উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ সংসদীয় আসন গঠিত। বিগত সংসদ নির্বাচনে এ দু’উপজেলায় নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কিন্তু উপজেলা নির্বাচনে এ দু’উপজেলায় প্রথকদিকে নৌকার অবস্থা তেমন ভালো না থাকলেও শেষ মুহূর্তে এসে নৌকার পালে ধমকা হাওয়া লাগার আভাস পাওয়া গেছে। এর নেপথ্য কারণ হিসেবে উপর মহলের ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি এবং স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতাদের আন্তরিকতা কাজ করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজারে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খানের সাথে দলের অপর ৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ প্রার্থী উন্মুক্ত করে দেওয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়াসহ নীতিনির্ধারকদের অনেকেই স্বতঃস্ফ‚র্তভাবে প্রচারণায় নামেননি। শুধুমাত্র দু’একদিন হাসিখুশি ভঙ্গিতে তাদেরকে পৌরশহরে প্রচারণা করতে দেখা গেছে।
এজন্য উপজেলাব্যাপী নৌকার জোয়ার কিংবা সুর উঠেনি। কিন্তু শেষলগ্নে এসে নিয়ন্ত্রক নেতাদের গোপন বৈঠকে নৌকাকে যেকোনমূল্যে বিজয়ী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। শনিবার বিকেলে এ খবর তাদের অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাৎক্ষনিক অনেকেই দলের অন্যপ্রার্থীকে গুডবাই জানিয়ে ফের জোরালোভাবে নৌকার প্রচারণা শুরু করেন।
এ কারণে রাত পোহানোর আগেই সাধারণ মানুষের কাছে এর প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। রোববার (আজ) মানুষের মুখে মুখে ‘নৌকা পাস করিলার’ ‘অবা’ ‘নৌকা পাস করিলার’ ধ্বনী শোনা যায়। আবার কেউ কেউ আ’লীগের মূলধারার অপর এক প্রার্থীর সমর্থনে নৌকা পাস করছে বলেও মন্তব্য করতে শোনা গেছে।
অপরদিকে হঠাৎ করে ‘নৌকা পাস’ ‘নৌকা পাস’ রব উঠায় প্রতিদ্ব›িদ্ব অপর প্রার্থীদের সমর্থকরাও ফেসবুকে ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের গন্ধ’সহ নানা তীর্যক বক্তব্য সম্বলিত পোস্ট দেন। এমনকি হেলিকপ্টার প্রতীকের প্রার্থী আবুল কাশেম পল্লবের পক্ষে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক রিপন পদকর ফেসবুকে তাদের কর্মী সমর্থকদের ‘নিজ নিজ গ্রাম ও কেন্দ্র পাহারা’ দেওয়ার অনুরোধ করেছেন। এসব ঘটনায় বিগত নির্বাচনের মতো এবারও নৌকা কী বিজয়রথে পৌছে যাচ্ছে না হেলিকপ্টার-আনারসের মধ্যে জয়-পরাজয় নির্ধারণ হবে তা নিয়ে ধু¤্রজাল তৈরি হয়েছে।
তবে রহস্যজনক কারণে হঠাৎ করে রোববার (আজ) দিনেদিনে নৌকার জোয়ার উঠায় তৃণমূল কর্মী সমর্থকরাও দ্রæত বেগে উজ্জীবিত হয়েছেন। রাতে তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকায় ভোট চেয়েছেন এবং ভোটার টুকন দেওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এরপরও নৌকার জয়-পরাজয় নিয়ে অনেকেই চিন্তিত রয়েছেন।
অপরদিকে গোলাপগঞ্জে দলের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী একক প্রার্থী হওয়ায় তিনি শুরু থেকে তূলনামূলকভাবে সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। তার সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন বিএনপির বিদ্রোহী এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ (আনারস), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী জহির আহমদ (মিনার)। তবে এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী ও এডভোকেট রশীদ আহমদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, না বিএনপির একটি অংশ রশীদ আহমদের প্রকাশ্যে বিরোধীতা করায় সহজ জয় নিশ্চিত করতে যাচ্ছেন নৌকার কান্ডারি ইকবাল চৌধুরী। আবার অশীতিপর বৃদ্ধ ইকবাল চৌধুরীর বিজয় ঠেকাতে একটি মহল নিরবে কাজ করছে। যদি কালো রাত পর্যন্ত তা টিকে থাকে তাহলে বিগত উপজেলা নির্বাচনের মতো এবারও তাঁকে ভাগ্যবরণ করতে হবে। যদিও তিনি প্রতিক‚ল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে প্রানপণ চেষ্টা করেছেন এবং সফলও হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠন নির্বাচন বর্জন করেছে। বিয়ানীবাজারে জাতীয় পার্টির দু’নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও তাদের সাথে ভোটারের তেমন সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গোলাপগঞ্জে বিএনপি সমর্থক মাওলানা রশীদ আহমদ স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। বিগত নির্বাচনেও তিনি শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্ব ছিলেন। তখন দলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরীকে পরাজিত করে জামায়াতের প্রার্থী বিজয় লাভ করে।
গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার দু’লাখ ২৬ হাজার।
এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাচনে মোট ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ৬শ’ ৯৫জন। পরিষদ নির্বাচনে মোট ভোটার এক লাখ ৭০ হাজার ৬শ’ ৯৫। এরমধ্যে পুরুষ ৮৩ হাজার ৯শ’ ০৮জন এবং মহিলা ৮৬ হাজার ৭শ’ ৮৭জন। পুরুষের চেয়ে মহিলা ভোটার ২ হাজার ৮শ’ ৭৯জন বেশি।
সবচেয়ে বেশি ভোট বিয়ানীবাজার পৌরসভায়। ২৫ হাজার ৭শ’ ৮২ ভোটের মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৭শ’ ৬৬ এবং মহিলা ভোটার ১৩ হাজার ১৬জন। এবং সবচেয়ে কম ভোট মোল্লাপুর ইউনিয়নে ৯ হাজার একশ’ ১৬। এরমধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৪শ’ ও মহিলা ৪ হাজার ৭শ’ ১৬জন।
একইভাবে আলীনগর ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৪ হাজার ৭শ ৬১জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৩শ’ ১৪ এবং মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৪শ’ ৪৭জন।
চারখাই ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৭শ’ ২জন। এরমধ্যে পুুরষ ৯ হাজার ৪শ’ ৮৫ এবং মহিলা ৯ হাজার ২শ’ ১৭জন।
দুবাগ ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৫ হাজার ২শ’ ৫জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৫শ’ ৭১ এবং মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৬শ’ ৩৪জন।
শেওলা ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৩ হাজার ৫শ’ ৯০। এরমধ্যে পুরুষ ৬ হাজার ৬শ’ ২৯ এবং মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৯শ’ ৬১জন।
কুড়ারবাজার ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৭ হাজার ৫শ’ ৯৪। এরমধ্যে পুরুষ ৮ হাজার ৫শ’ ১৮ এবং মহিলা ভোটার ৯ হাজার ৭৬জন।
মাথিউরা ইউনিয়নে মোট ভোটার ৯ হাজার ২শ’ ৩২। এরমধ্যে পুরুষ ৪ হাজার ৪শ’ ১১ এবং মহিলা ভোটার ৪ হাজার ৮শ’ ২১জন।
তিলপাড়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ১২ হাজার ২শ’ ৮৭জন। এরমধ্যে পুরুষ ৫ হাজার ৮শ’ ৭৩ এবং মহিলা ভোটার ৬ হাজার ৪শ’ ১৪জন।
মুড়িয়া ইউনিয়নে মোট ভোটার ১৮ হাজার ৬শ’ ৫৫। এরমধ্যে পুরুষ ৯ হাজার ৯৮ এবং মহিলা ভোটার ৯ হাজার ৫শ’ ৫৭জন।
লাউতা ইউনিয়নের মোট ভোটার ১৫ হাজার ৭শ’ ৭১জন। এরমধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৮শ’ ৪৩ এবং মহিলা ভোটার ৭ হাজার ৯শ’ ২৮জন।