বিয়ানীবাজার: প্রাধান্য পাচ্ছে ব্যক্তি প্রতীক আঞ্চলিকতা

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মার্চ ২০১৯, ৪:৪৯ অপরাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের আর মাত্র ৪দিন বাকী। বহু প্রত্যাশিত এ নির্বাচন ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিত হওয়ায় প্রচারণা এখন বেশ জমে উঠেছে। আবার বিরোধী দলগুলো প্রার্থী না দেওয়ায় নির্বাচন নিয়ে ভোটারদেরও আগ্রহ তুলনামূলক কম। তাছাড়া নির্বাচনে কালো টাকার ছড়াছড়ি হওয়ার আভাস থাকলেও জয়-পরাজয় সমীকরণ জটিল হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীই হাত খুলেননি।
এবারের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনজন এবং সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান তিনজন প্রতিদ্বদ্বিতা করছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা নিয়ে আতাউর রহমান খান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁর সাথে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন (আনারস), কার্যকরি সদস্য শামীম আহমেদ (মোটর সাইকেল) ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব (হেলিকপ্টার), জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি আবুল হাসনাত (দোয়াত কলম) ও হাজি আলকাছ আলী (ঘোড়া) প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা দিনরাত প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হলেও আওয়ামী লীগের দু’স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় এখন ব্যক্তি, প্রতীক ও আঞ্চলিকতা নির্ভর নির্বাচন হয়ে উঠেছে। ভোটাররাও এ তিনটি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে ভোট দিতে চাচ্ছেন।
এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য সংগঠন নির্বাচন বর্জন করেছে। জাতীয় পার্টির দু’নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও শেষ পর্যন্ত দু’জন মিলে একজন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে আলকাছের সমর্থন আবুল হাসনাত পেতে পারেন। ইতিমধ্যে জাপার হাসনাতকে জামায়াতে ইসলামী অনানুষ্ঠানিক সমর্থন দিয়েছে। তাদের পরামর্শে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন বলেও খবর পাওয়া গেছে। জামায়াত ভোটে গেলে হাসনাতের দোয়াত কলম হিসেবের মধ্যে চলে আসবে।
এদিকে নির্বাচনে বিএনপির কোন নেতা বা সমর্থক প্রার্থী হয়নি। এ হিসেবে বিএনপির বৃহৎ একটি অংশ মোটর সাইকেল প্রতীকের শামীম আহমেদকে সমর্থন করার খবর পাওয়া গেছে। আঞ্চলিক ইস্যুতেও তিনি ফ্যাক্টর প্রার্থী। তাছাড়া সাবেক ছাত্রনেতা হিসেবে শামীমের জনপ্রিয়তা রয়েছে।
সবমিলিয়ে মূল লড়াইয়ে এখনো নৌকা, আনারস ও হেলিকপ্টার থাকার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নৌকার নিরব ভোট থাকলেও আনারসের জাকির ও হেলিকপ্টারের পল্লবের মধ্যে প্রচারণায় তীব্র প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। সাধারণ মানুষের ধারণা, এ দু’জন একে অপরকে টপকাতে গিয়ে শেষমেষ নৌকার পালে হাওয়া লেগে যেতে পারে। নতুবা জাকির-পল্লবের মধ্যে নতুন মুখ পাবে উপজেলা পরিষদ।
একাধিক সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের ৩ প্রার্থী জয়ের বন্দরে পৌঁছতে কঠিন সময় পার করছেন। শহীদ পরিবারের সন্তান সাবেক ভিপি জাকির হোসেন তাঁর ব্যক্তি ও রাজনৈতিক ইমেজ, পরিবারের আধিপত্য ও আর্থিক দিক মিলিয়ে ভোটের মাঠের একটি অংশ দখলে নিতে পেরেছেন। তাঁর সাথে আঞ্চলিক নেতাদের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতারা প্রকাশ্যে কাজ করছেন। এমনকি জাকির আহমদের বড়ভাই বিয়ানীবাজার পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন ভোট মেকার হিসেবে পরিচিত। পুরো উপজেলাজুড়ে তাঁর আধিপত্য রয়েছে।
প্রতিবেশি কসবা-শ্রীধরা গ্রামকে আঞ্চলিক ইস্যুতে এক করতে চাইছেন জাকির-তফজ্জুল। প্রায় সফল হলেও নৌকা অনুরাগীরা শেষ পর্যন্ত তফজ্জুলের কব্জা থেকে ছুটেও যেতে পারেন। তবে জাকিরের চেয়ারম্যার হওয়ার সুবর্ণ এ সুযোগকে হাতছাড়া করতে নারাজ তাঁর পরিবার। তাঁরা যেকোন মূল্যে আনারসের বিজয় নিশ্চিত করতে চাইছেন।
অপরদিকে আবুল কাশেম পল্লব নির্বাচনী রাজনীতিতে পরীক্ষিত। তিনি ইতিমধ্যে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। বিগত উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে আশানুরূপ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। এবার তিনি উপজেলা পরিষদের মসনদে বসার আশেপাশে অবস্থান নিয়েছেন। সাধারণ মানুষ তাঁর প্রতি অনেকটা সংবেদনশীল আচরণ করার আভাস পাওয়া গেছে। উপজেলার সর্বত্র পল্লবের বিশাল কর্মীবাহিনী রয়েছে।
এমনকি আ’লীগের ভোট মেকাররা পল্লবের দিকে ঝুঁকে আছেন। পল্লব আঞ্চলিক ভোটও তুলনামূলক বেশি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও তার এ ভোটে এবার মোটর সাইকেল প্রতীকের শামীম আহমেদ বাগড়া দিচ্ছেন। শেষতক শামীম আহমেদ আশানুযায়ী ভোট পেলে পল্লবের ভাগ্যে কালো দাগ পড়তে পারে। নতুবা তিনি হতে পারেন উপজেলা পরিষদ মসনদের কান্ডারি। এমনটাই উপজেলাজুড়ে আলোচনা চলছে।
এদিকে উপজেলাজুড়ে নৌকার একটি নিরব ভোট ব্যাংক রয়েছে। তাছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সহজ সরল প্রকৃতির লোক আতাউর রহমান খানকে সাধারণ মানুষ অনেকটা বেশি ভালোবাসে। তাঁর আচার-আচরণে মুগ্ধ মানুষ। তিনি বিগত ৫ বছর চেয়ারম্যান ছিলেন কিন্তু কারো কোন ক্ষতি করেননি বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
তাছাড়া আতাউর খানেরও একটি বড় আঞ্চলিক ভোট ব্যাংক রয়েছে। এজন্য ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে অপর প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের চেয়ে আতাউর রহমান খানকে সাধারণ ভোটার বেছে নেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ হিসেবে আতাউর রহমান খান হতে পারেন পুননির্বাচিত চেয়ারম্যান।
তবে নৌকার বিজয় ঠেকাতে আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা কৌশলে কাজ করছেন। তারা জেলা নেতাদের আগমণে নৌকার প্রচারণায় এলেও মূলতঃ তাঁরা হেলিকপ্টার ও আনারসের সাথে রয়েছেন। এ দু’জনের মধ্য থেকে তারা নিজেদের ভবিষ্যত গড়ার হিসেব-নিকেশ মেলাচ্ছেন। যদিও নির্বাচন শেষে নৌকা বিরোধী চিহ্নিত ঐ নেতারা যে তিমিরে ছিলেন, সেই তিমিরে থাকবেন। বরং এ কয়েক দিনে ক্লিন ইমেজের এসব নেতা সাধারণ নেতাকর্মীর কাছে মস্তাকের উত্তরসূরি গাদ্দার হিসেবে চিহ্নিত হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে।