সিলেট-৬: ভোটের লড়াইয়ে দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা

ছাদেক আহমদ আজাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১১:৫৬ পূর্বাহ্ণছাদেক আহমদ আজাদ: গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ সংসদীয় আসন গঠিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ছয়জন। এরমধ্যে ভোটে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়েছেন দু’জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। হেভিওয়েট এ দু’প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এবং তৃণমূল বিএনপি’র সোনালী আঁশ প্রতীকের যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মুবিন চৌধুরী। তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত।
তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী এ দু’প্রার্থীর মধ্যে এমপি নাহিদের বাড়ি বিয়ানীবাজার ও শমসের মুবিন চৌধুরীর বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। এ কারণে নির্বাচনী লড়াই জমজমাট হওয়ার পাশাপাশি ভোটের হিসেব-নিকেশ অনেকটা জটিল হয়ে উঠেছে।
ক্লিন ইমেজের রাজনীতিবিদ নুরুল ইসলাম নাহিদ। মহান মুক্তিযুদ্ধে একজন ছাত্রনেতা হিসেবে জনমত গঠনে দেশ-বিদেশে দক্ষ সংগঠকের ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি একজন লেখক হিসেবেও সর্বমহলে সুপরিচিত। প্রাজ্ঞ এ রাজনীতিবিদ ১৯৯১ সাল থেকে পরপর সাতবার সংসদ নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এরমধ্যে মাত্র দু’বার পরাজিত হলেও তাঁর ঝুঁলিতে রয়েছে চারবার বিজয়ের অভিজ্ঞতা। এরমধ্যে তিনি দু’বার শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দু’বার প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। বর্তমানে উপদেষ্টামন্ডলির সদস্য।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতীক দিলেও নেতাকর্মীদের জন্য নির্বাচন উন্মুক্ত রেখেছে। এজন্য দলীয় স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকায় নির্বাচনের শুরুর দিকে নুরুল ইসলাম নাহিদ কিছুটা চাপে ছিলেন। তবে মূল লড়াইয়ে ফিরতে তেমন বিলম্ব হয়নি। এরপর থেকেই নৌকা পাগল জনতা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় সময়ে সময়ে ভোট বাড়ার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এতে নেতাকর্মীরা নৌকার জয়ের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী। আবার, নানা শঙ্কার কথা বাতাসে উড়ছে। এসব গুজব, অপপ্রচারকে ‘না’ বলে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। তিনি দু’উপজেলায় নির্বাচনী শেষ জনসভায় ভাষণ দিয়ে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করেন এবং নৌকার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
সর্বশেষ তথ্যমতে, বিয়ানীবাজার উপজেলায় নৌকা এগিয়ে রয়েছে। গোলাপগঞ্জে এগিয়ে থাকলে সোনায় সোহাগা। তা না হয়ে ধারে কাছে থাকলেও নুরুল ইসলাম নাহিদের নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া অনেকটা সহজ হওয়ার কথা রয়েছে।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী। একজন জাদরেল কূটনীতিবিদ হিসেবে তাঁর খ্যাতি রয়েছে। ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশক’টি দেশের রাষ্ট্রদূত। এতসবের পর মাঠের রাজনীতিতে শমসের মুবিন অনেকটা নতুন। পটু না হলেও ‘রাজনৈতিক ম্যাকানিজম’র সাথে তিনি দীর্ঘদিন থেকে জড়িত। কয়েক মাস আগেই হঠাৎ করে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন শমসের মুবিন চৌধুরী। এরপর আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি কয়েক দফা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠক করেন। তখন থেকেই খবর রটে সিলেট-৬ আসনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন এবং বাজিমাত করবেন।
এ আসনে তৃণমূল বিএনপি’র নেতাকর্মী না থাকায় অনেকের কাছে এতোদিন বিষয়টি ছিল রহস্যঘেরা। কিন্তু মনোনয়ন জমা থেকে শুরু করে নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে হঠাৎ প্রচারণায় নেমে ভোটের পুরো দৃশ্যপট পালটে দেন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সামনে তিনি আনুষ্ঠানিক হিসেব খুলে ভোট কুড়ানো শুরু করেন। এতে গুজব-রটনা পেছনে পড়ে যায়।
কম সময়ের একপর্যায়ে তিনি জয়ের লড়াইয়ে একজন হয়ে উঠেন। এতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির সাফি এলিম। দলীয় নির্দেশনায় তিনি ভিন্ন আঙ্গিকের এ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেন। এতে এ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে উঠে। গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতাসহ বিয়ানীবাজারে তাঁর বলয়ে যুক্ত হন বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোহাম্মদ জাকির হোসেন। এ কারণে সিলেট-৬ আসনে শক্ত ভিত গড়তে সক্ষম হন শমসের মুবিন চৌধুরী। দুই উপজেলায় দু’টি জনসভা তার প্রমাণ বহন করে। এতে মানুষের মুখে মুখে সোনালী আঁশ স্থান করে নেয়।
সর্বশেষ তথ্যমতে, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় সোনালী আঁশ আধিপত্য ধরে রাখতে পারলে এবং বিয়ানীবাজারে আশাব্যঞ্জক ভোট পেলে শমসের মুবিন চৌধুরীও বাজিমাত করার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৯ জন। এরমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭১১ ও বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২ লাখ ৬ হাজার ৩৮ ভোট। বিয়ানীবাজার থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬০ হাজার ৬৭৩ ভোট বেশি।
এদিকে, সিলেট-৬ আসনে এখনো শমসের মুবিন চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম নাহিদকে নিয়ে জয়-পরাজয়ের স্বপ্ন দেখছেন ভোটাররা, এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তবে অনেকের মতে, ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেন শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছেন। যেকোন সময় তিনিও বাজিমাত করতে পারেন।
ভোটের লড়াইয়ের গতিপথ পরিবর্তনশীল। যেকোন সময় ইউটার্ণ নিতে পারে। ভোটাররা চায়, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। উৎসবমুখর পরিবেশে এ নির্বাচন রাত পোহালেই শুরু হবে। শেষ হাসি কে হাসেন, তা দেখতে চূড়ান্ত ফলাফল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।