সিলেট-৬: এবার নাটাই ঘুরাবে গোলাপগঞ্জ!
স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জানুয়ারি ২০২৪, ১:১১ পূর্বাহ্ণস্টাফ রিপোর্টার: শুক্রবার সকাল ৮ টায় শেষ হচ্ছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণা, সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ। প্রতীক বরাদ্দের পর ১৮ দিনের ব্যস্ত সময় শেষে দু’দিন হোমওয়ার্ক করবেন প্রার্থী ও তাদের দায়িত্বশীল নেতারা। বহুকাঙ্ক্ষিত এ নির্বাচনে আগামী ৭ জানুয়ারি রোববার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত একটানা ভোটগ্রহণ চলবে। ইতিমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার থেকে সশস্ত্রবাহিনী নির্বাচনী এলাকায় টহল শুরু করেছে।
সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) আসনে প্রচারণার শেষ দিনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৬ প্রার্থীর মধ্যে নৌকা প্রতীকের নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বিকেলে গোলাপগঞ্জ পৌরশহরে, সোনালী আঁশ’র শমসের মুবিন চৌধুরী বীর বিক্রম সন্ধ্যায় বিয়ানীবাজার পৌরশহরের মধ্যবাজারে এবং ঈগল প্রতীকের প্রার্থী সরওয়ার হোসেন বিকেলে পৌরশহরের উত্তর বাজারে শেষ জনসভা করেছেন। প্রত্যেকের জনসভা ছিল কম-বেশি লোকে লোকারণ্য। এতে প্রার্থীরা নিজেদেরকে সৎ ও যোগ্য দাবী করে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেছেন।
এদিকে, সিলেট-৬ আসনে উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আভাস পাওয়া গেছে। এতে প্রতিদ্বন্দ্বী ৬ প্রার্থীর মধ্যে তিনজনের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অপর প্রার্থীদের জামানত বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করেছেন অনেকেই।
নির্বাচনের শেষ সময়ে এসে হঠাৎ প্রচারণায় নেমে ভোটের পুরো দৃশ্যপট পালটে দিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মুবিন চৌধুরী। এতদিন তিনি গুজব-রটনায় ভাসলেও এবার সত্যি ভোটের ইতিবাচক আলোচনায় রয়েছেন। দু’উপজেলায় জনসভা করে রীতিমতো তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মুবিন চৌধুরী। ভোটার ও বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও তাঁর সম্ভাবনার কথা উঠে এসেছে। এতে অগ্রণী ভূমিকায় রয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির সাফি এলিম। গোলাপগঞ্জ উপজেলার অধিবাসী শমসের মুবিন চৌধুরীর নিজ দলের ভোট না থাকলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেকের উপর বেশই দাঁড়িয়েছেন। তারাও নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে সোনালী আঁশের প্রার্থী আঞ্চলিকতা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন বলে আওয়াজ পাওয়া গেছে।
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১৯৯১ সাল থেকে পরপর সাতবার সংসদ নির্বাচনের মাঠে রয়েছেন। এরমধ্যে মাত্র দু’বার পরাজিত হলেও তাঁর ঝুলিতে রয়েছে চারবার বিজয়ের অভিজ্ঞতা। এবার দলীয় উন্মুক্ত নির্বাচনের শুরুর দিকে তিনি কিছুটা চাপে ছিলেন। সহসাই তা দ্রুত কেটে উঠে মূল লড়াইয়ে ফিরেছেন। এরপর থেকে নৌকা পাগল জনতা ঐক্যবদ্ধ হওয়ায় সময়ে সময়ে ভোট বাড়ার স্পষ্ট আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এতে নেতাকর্মীরা নৌকার জয়ের ব্যাপারে খুব আত্মবিশ্বাসী। আবার, নানা শঙ্কার কথা বাতাসে উড়ছে। এসব গুজব, অপপ্রচারকে ‘না’ বলে রীতিমতো উড়িয়ে দিয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট নাসির উদ্দিন খান। তিনি নেতাকর্মীদের নৌকার ভোট দেওয়ার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী কানাডা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার হোসেন। তিনি ঈগল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে বেশ শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। প্রথম থেকেই তাঁর ঈগল আকাশে উড়াল দিয়ে বাজিমাত করছে। তবে, ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ঈগল ক্লান্তিহীনভাবে উড়বে, না প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রাচীরে বাধার সম্মুখীন হবে, এ নিয়ে ভোটারদের মনে নানা আশঙ্কা কাজ করছে। কিন্তু এসব বাধা ডিঙাতে সরওয়ার হোসেনের আষ্টেপৃষ্টে রয়েছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ছাত্রনেতা মো. আব্দুল বারী, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব ও গোলাপগঞ্জ পৌরসভার সাবেক মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু।
নির্বাচনে জয়ের আলোচনায় রয়েছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ, শমসের মুবিন চৌধুরী ও সরওয়ার হোসেন। এরমধ্যে দু’জন প্রার্থীর বাড়ি বিয়ানীবাজার ও একজন গোলাপগঞ্জ উপজেলায়। আবার, বিয়ানীবাজারের চেয়ে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ভোট বেশি। এসব নানা কারণে জয়-পরাজয়ের নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠেছে গোলাপগঞ্জ উপজেলা। এখানকার ভোটে যিনি আধিপত্য বিস্তার করবেন, তিনি জয়ের বন্দরে সবার আগেই পৌছাবেন। সচেতন মহল ও ভোটারদের সাথে কথা বলে এমন ধারণা পাওয়া গেছে।
নির্বাচনে অপর তিন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী হলেন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের মো. সেলিম উদ্দিন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের ছড়ি প্রতীকের আতাউর রহমান আতা ও ইসলামী ঐক্যজোটের মিনার প্রতীকের প্রার্থী সাদিকুর রহমান।
সূত্রমতে, সিলেট-৬ আসনে নারী ও পুরুষ মিলে মোট ভোটার ৪ লাখ ৭২ হাজার ৭৪৯ জন। এরমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৭১১ জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার এক লাখ ৩৪ হাজার ৯২৬, মহিলা ভোটার এক লাখ ৩১ হাজার ৭৮৪ ও হিজড়া ১ জন। বিয়ানীবাজার উপজেলায় মোট ভোটার ২ লাখ ৬ হাজার ৩৮ জন। এরমধ্যে পুরুষ এক লাখ ২ হাজার ৫৮৩ ও মহিলা এক লাখ ৩ হাজার ৪৫৫ জন। সবমিলিয়ে এবার বিয়ানীবাজার থেকে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ৬০ হাজার ৬৭৩ ভোট বেশি।