প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে দলীয় নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত

ছাদেক আহমদ আজাদ
প্রকাশিত হয়েছে : ২১ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:৪৪ অপরাহ্ণছাদেক আহমদ আজাদ : আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিলেট আগমনে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আনন্দিত ও উজ্জীবিত। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় প্রধানের এ আগমন নৌকার বিজয়ে নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করবে-এমনটি মনে করছেন সিলেটের দায়িত্বশীল নেতারা। বিগত সংসদ নির্বাচনে সিলেট বিভাগের ১৯ টি আসনের মধ্যে বিরোধীপক্ষ দু’টি আসন পেলেও এবার দলের নেতারা জাতীয় পার্টির ঐক্যের একটিসহ প্রধানমন্ত্রীকে বিভাগের সবক’টি আসন উপহার দিতে চান। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় দলের অনেক নেতা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন।
আওয়ামী লীগের আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম জনসভা গতকাল বুধবার সিলেটের ঐতিহাসিক আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। জনসভা লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠেছিল। রঙ বে-রঙের টি-শার্ট ও ক্যাপ পরিহিত হয়ে সকাল ১০টা থেকে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ¯্রােত নামে মাদ্রাসা মাঠ অভিমুখে। মিছিলে মিছিলে আর নানা স্লোগানে মুখরিত ছিল পুরো নগরী। তাতে অংশ নেন বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ। রাজনৈতিক উৎসবের এ আবহ থেকে বাদ যায়নি আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ’র অংশীদার শিশুরা। সবার চোখে মুখে ছিল আনন্দের ছাপ।
সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা অত্যন্ত সফল ও সার্থক হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সার্বিক ক্ষেত্রে সিলেট বিভাগে যে উন্নয়ন করেছে তা অতীতে হয়নি। এজন্য আমরা আত্মবিশ্বাসী, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে বিভাগের সবক’টি আসন উপহার দিতে পারবো। তিনি সিলেটের জনসভা সফল করায় দলীয় নেতাকর্মীসহ সিলেটবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বলেন, গতকালের সভার মধ্য দিয়ে সিলেটে আওয়ামী লীগ আরো ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে দলের নিবেদিত কর্মীরা আরো উজ্জীবিত হয়েছেন। তিনি বলেন, নৌকার কাছে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা তেমন একটা সুবিধা করতে পারবে না। দিনশেষে নৌকার-ই বিজয় হবে। এজন্য তিনি নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে গিয়ে ভোট প্রার্থনার আহ্বান জানান।
জনসভা ছিলো লোকে লোকারণ্য
আওয়ামী লীগের জনসভায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নিরাপত্তা বলয় পাড়ি দিয়ে বেলা একটায় পূর্ণ হয়ে যায় আলীয়া মাদ্রাসার মাঠ। এরপর সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে লোকসমাগম বাড়তে থাকে। যা শেষ পর্যন্ত জনসভাস্থলের চারিদিক অর্থাৎ রিকাবীবাজার-নয়াসড়ক, আম্বরখানা-জিন্দাবাজার সড়ক ও আশপাশ এলাকায় ছিল মানুষের ঢল। শীতল আবহের মধ্যেও খানিকটা গরমে ও ভিড়ে কেউ কেউ জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় কিংবা সভাস্থলে বসে পড়েন। তখন সতীর্থরা মাথায় পানি দিলে কিছুসময় পরে তারা সুস্থ হয়ে উঠেন। এছাড়া জনসভাস্থলের আশেপাশে তেমন কোনো বিড়ম্বনার চিত্র চোখে পড়েনি বা শোনা যায়নি।
ঘড়ির কাটায় যখন বেলা পৌণে একটা, তখন পবিত্র কোরআন, বাইবেল, ত্রিপিটক ও গীতা পাঠের মধ্যদিয়ে জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী জনসভার কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান এবং মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন এর পৃথক কণ্ঠে একে একে ভেসে উঠে বক্তাদের নাম। এভাবে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ তাদের বক্তব্যে সিলেট থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করায় গণতন্ত্রের মানসকন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। পাশাপাশি তারা সিলেটের সবক’টি আসনে মুক্তিযুদ্ধ ও গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির প্রতীক নৌকা মার্কা’র বিজয় নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন।
যখন বিকেল চারটা ছুঁইছুঁই করছে তখন ছোটবোন শেখ রেহানাকে নিয়ে বিশাল জনসভামঞ্চে উঠেন ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ অভিধায় ভূষিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তখন অজ¯্র জনতা দাঁড়িয়ে মুহর্মুহ করতালির মাধ্যমে প্রধান অতিথিকে স্বাগত জানান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর বোন স্টেজ’র সামনে জাতীয় পতাকা নাড়িয়ে আনন্দ উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী পাগল জনতাকে অভিনন্দিত করেন। তখন নেতাকর্মীরা শেখ হাসিনা, নৌকা ধ্বনির উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেন।
৪ টা ২০ মিনিটে বক্তব্য শুরু করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানা ঘটনার উল্লেখ করে দীর্ঘ ৩৫ মিনিটের বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় নৌকায় ভোট চান প্রধানমন্ত্রী। তিনি জনতাকে দু’হাত তুলে অঙ্গীকারও করান।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী জনসভাস্থলে এসে পৌঁছুলে সিলেটের প্রবীণ শিল্পী জামাল উদ্দিন হাসান বান্না’র নেতৃত্বে ‘সুরমা নদীর তীরে- আমার ঠিকানারে, বাবা শাহজালালের দেশ, সিলেট ভূমিরে; ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইছে, কেমন দেখা যায়, ঝিলমিল ঝিলমিল করে-রে ময়ুর পংকী নায়’ গান দু’টি পরিবেশন করেন। এ সময় মঞ্চে বসে প্রধানমন্ত্রী অপলক দৃষ্টিতে তাদের দিকে তাকিয়ে সঙ্গীত উপভোগ করেন।
জনসভায় সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে এসেছেন অশীতিপর বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশে যেতে কখনো আমার বয়স বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। আর এখানে নেত্রীকে দেখতে ও তাঁর মূল্যবান কথা শুনতে এসেছি। জনসভায় আগত বিয়ানীবাজারের একটি ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্বাস উদ্দিন মজনু বলেন, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে আমরা উজ্জীবিত হয়েছি। তিনি স্পষ্টভাবে নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিতে বলেছেন। আমরা নৌকার বিজয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
মঞ্চে ছিলেন ৭ স্বতন্ত্র প্রার্থী
জনসভায় আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর পাশাপাশি দলের কমপক্ষে ৭ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।
তারা হচ্ছেন, সুনামগঞ্জ-১ সংসদীয় আসনে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন এমপি, সুনামগঞ্জ-২ আসনে জয়াসেন গুপ্তা এমপি, সুনামগঞ্জ-৫ আসনে শামীম আহমদ চৌধুরী, হবিগঞ্জ-১ আসনে কেয়া চৌধুরী ও গাজী মো. সাহেদ, হবিগঞ্জ-২ আসনে আব্দুল মজিদ খান এমপি, হবিগঞ্জ-৪ আসনে ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক জগলু চৌধুরী এ তথ্য নিশ্চিত করেন।