আসন ভাগাভাগিতে মন ভরেনি কারও

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ৯:৩৩ পূর্বাহ্ণআওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা গতকাল জানান, শরিক ও মিত্রদলগুলোর কাকে, কতটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে এরই মধ্যে তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেকেই অনেক কিছু প্রত্যাশা করেছিলেন, সেটা থাকতেই পারে, তবে বাস্তবতা ভিন্ন। শরিক ও মিত্রদলগুলোকে নিয়ে আওয়ামী লীগের যে পূর্বপরিকল্পনা বা ভাবনা ছিল, সে অনুযায়ীই কাজ করা হয়েছে। বাস্তবতার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সব সময় সবার সব প্রত্যাশা পূরণ করা যায় না।
দলীয় সূত্র আরও জানায়, আজ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হলেই প্রকৃত দৃশ্যপট সবার কাছে পরিষ্কার হয়ে যাবে। ছাড় দেওয়া আসনগুলোতে নৌকার প্রার্থীদের তুলে নেওয়া হবে। একই সঙ্গে সেসব আসনে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বিষয়েও সাংগঠনিক নির্দেশনা দেওয়া হবে। তবে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই জিতে আসতে হবেÑ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সেটা মাথায় রেখে প্রস্তুতি নিতে বলে দেওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ও ভোটারদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দলীয়ভাবে কোনো চাপে না রাখার অবস্থানও বহাল রাখা হবে। তাতে ভোটের চিত্র এবার কিছু ক্ষেত্রে অনুমান করা কঠিন হয়ে যেতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ ডিসেম্বর গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকে বসেন জোটের নেতারা। তার আগে অর্ধশতাধিক আসন চেয়ে একটি তালিকা দেওয়া হয়। গত তিন নির্বাচনের চেয়ে এবার কিছু বেশি আসনের প্রত্যাশা করেছিল শরিকরা। কিন্তু এবার আগের চেয়ে কম আসন দেওয়া দেওয়া হয়েছে তাদের। দলগুলোর সাংগঠনিক সক্ষমতা মূল্যায়ন করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে।
এবার শরিক দলগুলোকে ৭টি আসন ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও তালিকায় নাম না থাকা তরীকত ফেডারেশন ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) এ নিয়ে আপত্তি তুলে তা পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়েছে। জাসদকে আগের মতোই ৩টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে। তবে দলটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু আরও বেশি আসন পাওয়ার প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন। তবে তাতে সাড়া দেয়নি আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে বিগত সময়ে চট্টগ্রাম-২ আসনটি জোটের আরেক শরিক তরীকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এবারের তালিকায় তার নাম নেই। মিত্র বিকল্পধারাকে এবার একটিও দেওয়া হয়নি।
নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী এসব নিয়ে কথা বলতে ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা করে সিদ্ধান্ত জানতে চাইলেও তা পারেননি। চট্টগ্রাম-২ আসনটি এবার তাকে ছাড়া হবে কি হবে না, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানতে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গেও দেখা করেন নজিবুল বশর। নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে বলেন, ‘আমাকে আসন দেওয়া হবে কি হবে না সেটার একটা ঘোষণা পেতে চাই। কারণ আমার দলের ৪০ থেকে ৪৫ জন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে মাঠে রয়েছেন। আমাদের নিজেদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্যই আওয়ামী লীগের অবস্থানটা আগে জানা দরকার।’
অন্যদিকে জাসদের দেওয়া প্রস্তাব নিয়েও আওয়ামী লীগের দিক থেকে কোনো কিছু জানানো হয়নি। এ অবস্থায় পরবর্তী অবস্থান কী হবে, সেটা ঠিক করতে নিজেদের মধ্যে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেছে জাসদের একাধিক সূত্র।
এদিকে জাপার পক্ষ থেকে প্রথম দিকে ৬০টি আসনে ছাড়ের জন্য একটি তালিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনা শুরু হয়। গত শুক্রবার পর্যন্ত চার দফা বৈঠকের পর ২৬টি আসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার খবর মিলেছে। গতকালের বৈঠকে এই সংখ্যা বাড়ানোর জোর দাবি জানানো হয় জাপার পক্ষ থেকে। অন্যদিকে সংখ্যার উল্লেখ না করে জাপাকে এবার যে কয়টি আসনে ছাড় দেওয়া হয়েছে তার থেকে আর বেশি দেওয়ার সম্ভাবনা কম বলে জানিয়েছে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র। তাদের মতে, প্রত্যাশা থাকতেই পারে তবে সার্বিক বিচারে তাদের যেটা জানিয়ে দেওয়ার ছিল তা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত দলের যে পরিকল্পনা তাতে এই সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পরিকল্পনায় বড় কোনো পরিবর্তন এলে সেটা হবে ভিন্ন কথা।
শরিক ও মিত্রদলগুলোর সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম গতকাল প্রতিদিনের বাংলাদেশকে এ প্রসঙ্গে বলেন, শুক্রবারের বৈঠকে জাপার আসন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। তাদের আরও বেশি দাবি করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দাবি তো করতেই পারে, প্রত্যাশাও থাকতে পারে। তবে এটা নিয়ে বলার কিছু নেই। আমাদের দল থেকে সুনির্দিষ্ট করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এটাই হচ্ছে দলের অবস্থান।’
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জাপাকে যেসব আসনে ছাড় দেওয়া হবে সেগুলোতে আওয়ামী লীগের ‘নৌকা’ প্রতীকের প্রার্থী থাকবে না। আজ সেসব আসনের প্রার্থীদের বসিয়ে দেওয়া হবে। এসব আসনে জাপার প্রার্থীরা বিগত নির্বাচনের মতো দলীয় ‘লাঙ্গল’ প্রতীকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তবে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা বহাল থাকবেন। সমঝোতা হওয়া আসনগুলোর বাইরে অন্য আসনগুলোতে যে যার নিজস্ব প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।
এদিকে জাপাকে গত নির্বাচনে ২৯টি আসন ছেড়েছিল আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদে দলটির ২৩ জন এমপি রয়েছেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিএনপিবিহীন নির্বাচনে লাঙ্গলকে ৪২ আসন ছেড়েছিল নৌকা। তবে নেতৃত্ব ও দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিরোধের জেরে জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদের অনুসারীরা এবার নির্বাচন বর্জন করেছেন। মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কয়েকজন স্বতন্ত্র হিসেবে মাঠে রয়েছেন। জানা গেছে, আসন সমন্বয় ইস্যুতে এ বিষয়গুলোও গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে আওয়ামী লীগ।
দলীয় একটি সূত্র আরও জানায়, আসন সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে খুব বেশি গোপনীয়তা রক্ষা করা না হলেও সমালোচনা এড়াতে নতুন মিত্রদের সঙ্গে সমঝোতার ক্ষেত্রে বেশ রাখঢাক বজায় রাখতে দেখা যাচ্ছে। সুপ্রিম পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বিএনএম এবং বিএনপির জোট ছেড়ে আসা কল্যাণ পার্টির কিছু নেতাকে জয়ী করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে এসব নেতার আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী তুলে নেওয়ার কোনো চিন্তা নেই। ৩০০ আসনের মধ্যে শরিক ও মিত্রদের মোট ৪০টি আসনে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক ছাড় দেওয়াই এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মূল পরিকল্পনা হিসেবে দৃশ্যমান রয়েছে। এখন পর্যন্ত ১৪ দলের শরিক ও জাপা বাদে অন্য যেসব আসনে আওয়ামী লীগের দিক থেকে প্রার্থীদের আশ্বাস দেওয়ার কথা জানা গেছে তার মধ্যে রয়েছেÑ মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিমের কক্সবাজারের আসন, ফরিদপুরে বিএনএমের শাহ আবু জাফরের আসন, তৃণমূল বিএনপির শমসের মবিন চৌধুরীর আসন। এ ছাড়াও সুপ্রিম পার্টির সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারীকে চট্টগ্রাম-২ আসন থেকে বিজয়ী করতে ছাড় দেওয়া হবে বলে শোনা যাচ্ছে। মূলত সৈয়দ সাইফুদ্দিন মাইজভান্ডারীকে ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই ১৪ দলের নেতা ও এই আসনের বর্তমান এমপি নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নাম ছাড়ের তালিকায় আসেনি। অন্যদিকে ইসলামপন্থি দলগুলোর মধ্যে অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতিসহ দলের অনেক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে এলেও তাদের কাউকে আসন ছাড়ের বিষয়ে কোনো আশ্বাস দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
এবারের নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এর বেশিরভাগই সরাসরি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আসন সমঝোতার আগ্রহ প্রকাশ করে এসেছে। তবে আওয়ামী লীগ যাদের আসন ছাড়ের আশ্বাস দিয়েছে তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্তও চূড়ান্ত করে ফেলেছে। আজ প্রার্থিতা প্রত্যাহারের মধ্য দিয়ে বিষয়টি সবার কাছে পুরোপুরি পরিষ্কার হয়ে যাবে। সূত্র: প্রতিদিনের বাংলাদেশ