মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে থাকা ২০ কেজির কালো ব্রিফকেসে কী?

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৩:৩৩ অপরাহ্ণআমেরিকার প্রেসিডেন্ট যেখানেই যান না কেন সবসময় তার ঠিক পিছনে কিছুটা দূরত্বে আরও এক জনকে স্যুট-বুট পরে হাটতে দেখা যায় যিনি প্রেসিডেন্টের একজন সহকারী। এই সহকারীর হাতে সবসময় কালো রঙের একটি ব্রিফকেস দেখা যায়। আকারে খুব বড় নয়, তবে ওজন প্রায় ২০ কিলোগ্রাম। কালোর ওপর সোনালি রঙের তালাটিও চোখে পড়ে স্পষ্ট। এখন সবার মন একটাই প্রশ্ন, কী থাকে এই ব্রিফকেসটিতে?
কী কী আছে এই ব্রিফকেসের ভিতরে? উপাদান খুব বেশি নয়। মাত্র চারটি। দু’টি বই, একটি ফাইল এবং একটি কার্ড। তা দিয়েই যে কোনও মুহূর্তে পরমাণু আক্রমণের জন্য প্রস্তুত হতে পারেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।
ব্রিফকেসের দ্বিতীয় উপাদান আরও একটি বই। এর আকারও ‘ব্ল্যাক বুক’-এর মতোই। এই বইতে তালিকার আকারে রয়েছে নিরাপদ কিছু ঠিকানা, জরুরি পরিস্থিতিতে যেখানে প্রেসিডেন্ট আশ্রয় নিতে পারেন। এই বইয়ের পৃষ্ঠাগুলো সম্পূর্ণ কালো রঙে ছাপা।
নিউক্লিয়ার ফুটবলে রয়েছে একটি ফাইল, যার নাম ম্যানিলা ফোল্ডার। এতে আট থেকে দশটি খোলা পাতা পিন করা রয়েছে। আপৎকালীন সতর্কতা ব্যবস্থা (ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেম) ব্যবহারের বর্ণনা রয়েছে এই ফাইলে।
এ ছাড়াও প্রেসিডেন্টের ব্রিফকেসে একটি ছোট কার্ড থাকে। তার দৈর্ঘ্য ৫ ইঞ্চি, প্রস্থ ৩ ইঞ্চি। এই কার্ডে বিভিন্ন অথেন্টিকেশন কোড লেখা থাকে। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন, তা হলে একমাত্র তার নির্দেশে এই ব্রিফকেস খোলা হবে। সঙ্গে সঙ্গে সতর্কবাণী পৌঁছে যাবে দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধানের কাছে।
মন্ত্রণালয়ের অন্যান্যদের সঙ্গে আলোচনা করে আক্রমণের কী কী সুযোগ আছে তা খতিয়ে দেখবেন প্রেসিডেন্ট। তার পরেই দেশের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেবেন প্রেসিডেন্ট।
নিশ্চিদ্র নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে এগোবে গোটা প্রক্রিয়া। আমেরিকার সামরিক বাহিনী পরমাণু আক্রমণের নির্দেশ পাওয়ার পর নির্দেশদাতা সত্যিই প্রেসিডেন্ট কি না, তা যাচাই করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া রয়েছে।
‘বিস্কুট’ নামের একটি প্লাস্টিকের কার্ডে লেখা বিশেষ কিছু কোড রয়েছে। সেই সঙ্কেতের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টের পরিচয় যাচাই করবেন আমেরিকার সেনাকর্তারা। নির্দেশদানকারীর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগ করা ছাড়া প্রতিরক্ষা প্রধানের সামনে আর কোনও উপায় থাকে না।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী, প্রেসিডেন্টের হাতেই পরমাণু আক্রমণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়েছে। তবে আইনে বলা হয়েছে, প্রেসিডেন্ট কোনও বেআইনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। যদি তার সিদ্ধান্ত বেআইনি হয় তাহলে সেনারা তা অমান্য করতে পারেন।
আমেরিকার ছ’টি সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিটি শাখা থেকে এক জন করে পালা অনুযায়ী নিউক্লিয়ার ফুটবল বহন করে থাকেন। এই বহনকারী বার বার পরিবর্তিত হয়। কে কখন এই দায়িত্ব পাবেন তা কেউ আগে থেকে টের পান না।
আমেরিকার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিউক্লিয়ার ফুটবলের সংখ্যা অবশ্য একটি নয়। একই ধরণের তিনটি ব্রিফকেস রয়েছে। একটি প্রেসিডেন্ট এবং একটি ভাইস প্রেসিডেন্টের কাছে থাকে। যদিও এ সম্পর্কে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন প্রেসিডেন্টই। কোনও কারণে প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিতে অক্ষম হলে ভাইস প্রেসিডেন্টের হাতে সেই ক্ষমতা হস্তান্তরিত হবে। এ ছাড়া, তৃতীয় ফুটবলটি রাখা থাকে আমেরিকার প্রশাসনিক দফতর হোয়াইট হাউসে।
ফুটবলের মধ্যের কার্ডটিতে যে সংকেত লেখা থাকে তা একমাত্র প্রেসিডেন্টই ব্যবহার করতে পারেন। নির্বাচনের পর প্রেসিডেন্ট বদল হলে নিজে থেকেই সংকেতগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। পরে নতুন প্রেসিডেন্টের জন্য আবার তা সক্রিয় করা হয়।