সিলেটে একযুগ পর চলতি মাসেই যুবলীগের ৮ ইউনিটের কমিটি!

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১০:০৮ পূর্বাহ্ণছাদেক আহমদ আজাদ: সিলেটের বিভিন্ন উপজেলায় একযুগেরও বেশি সময় থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কমিটি নেই। এজন্য সংগঠনের ব্যানারে মিছিল-মিটিং কিংবা সভা-সমাবেশ তেমন একটা হয়নি। এমনকি যে কয়েক উপজেলায় কমিটি আছে সেখানেও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ভর করেছে মন্থর গতি।
তথ্যমতে, যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২০০৪, বালাগঞ্জে ২০০৫, বিয়ানীবাজারে ২০০৬, বিশ্বনাথে ২০১২ ও সিলেট সদর উপজেলায় ২০০৬ সালে। তবে, সকল দ্বিধা-দ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা কেটে চলতি মাসেই আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে নতুন ৮ ইউনিট কমিটি। এছাড়া, অন্যান্য উপজেলাতেও জোরোশোরে ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হবে। দৃঢ়কণ্ঠে এসব কথা বলেছেন জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমদ।
জানা যায়, সম্প্রতি জেলা যুবলীগের দায়িত্বশীলরা কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে বৈঠক করেন। সেখানে যুবলীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের গতি ফেরাতে সিলেটের সবক’টি উপজেলা ও পৌর কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার জেলা যুবলীগ তাদের আওতাধীন ৫ উপজেলা ও ৩ পৌরসভায় আহবায়ক কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। এতে মুহূর্তের মধ্যে নড়েচড়ে উঠেছেন ঝিমিয়েপড়া যুবলীগ নেতারা। তারা পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করায় সিলেট জেলা যুবলীগের দায়িত্বশীলদের ধন্যবাদ এবং নিজেদের জানান দিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করতে দেখা যাচ্ছে। নানা প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত যুবলীগের কমিটি আলোর মুখ দেখবে কি-না এ নিয়েও অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কারণ, অতীতেও এভাবে উদ্যোগ নিয়ে কমিটি গঠন ভেস্তে গিয়েছিল। বিভিন্ন উপজেলায় যুবলীগ নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।
সার্বিক বিষয়ে জেলা যুবলীগের সভাপতি ভিপি শামীম আহমদ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা পেয়ে আমরা যুবলীগের ৮ ইউনিট কমিটি গঠনের কাজ শুরু করেছি। নানা কারণে অতীতে কমিটি না হলেও আশা করি এবার হবে। এজন্য তিনি সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৪ সালে ওয়েছুর রহমানকে আহ্বায়ক করে গোলাপগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছিল। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও কমিটি পূর্ণাঙ্গ কিংবা বাতিল করা হয়নি। এ কমিটির অনেকেই এখন আওয়ামী লীগ নেতা।
একইভাবে, ২০০৫ সালে বিয়ানীবাজার উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয়। কেন্দ্রীয় যুবলীগ এ কমিটি অনুমোদন করে। এর কয়েকমাস পর ২০০৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি জেলা যুবলীগ পূর্বের কমিটি বাতিল করে আব্দুল কুদ্দুছ টিটু সভাপতি, বর্তমান পৌর মেয়র ফারুকুল হক সহ সভাপতি, আব্দুল মুমিতকে সাধারণ সম্পাদকসহ ১২ সদস্যের কমিটি ঘোষণা করে। এ কমিটি গঠনতন্ত্র বহির্ভূত আখ্যা দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে আবারও কেন্দ্রীয় যুবলীগ তা বাতিল করে। এরপর থেকেই আহ্বায়ক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, যুগ্ম আহ্বায়ক ছফর উদ্দিন লোদী ও জুবের আহমদ যুবলীগের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। কিন্তুএ কমিটির দু’জন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ও একজন আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল হওয়ায় গত দু’বছর থেকে বিয়ানীবাজারে যুবলীগের কোন কার্যক্রম চোখে পড়েনি।
বালাগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০০৫ সালের ২৭ এপ্রিল। ৩ মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের শর্ত দিয়ে মো. রফিকুল আলম আহবায়ক ও মো. জুনেদ মিয়াকে ১ম যুগ্ম আহবায়ক করে ৪২ সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি অনুমোদন করে সিলেট জেলা যুবলীগ। কিন্তু দীর্ঘ প্রাড় দেড়যুগে নতুন কমিটি হওয়াতো দূরের কথা, আহ্বায়ক কমিটি পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ হয়নি। ফলে যুবলীগের কর্মকাণ্ডে স্থানীয় নেতাকর্মীদের অনীহা তৈরি হয়েছে। এবার যদি যুবলীগের কমিটি সত্যি আলোর মুখ দেখে তাহলে যুবসমাজ নতুনভাবে যুবলীগে সম্পৃক্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
বিশ্বনাথ উপজেলা যুবলীগের সর্বশেষ কমিটি হয়েছিল ২০১২ সালে। এ কমিটির আহবায়ক ছিলেন মকদ্দুছ আলী। দীর্ঘ ১০ বছরে অনেকবার নতুন কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়া হলেও নানা কারণে সফলতা আসেনি। এ নিয়ে স্থানীয় যুবলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা চেপে বসে। তবে, এবার জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন হওয়ায় নতুন কমিটি হবে, নেতাকর্মীদের মধ্যে এমন প্রত্যাশা দোলা দিচ্ছে।
সম্ভবত ২০০৬ সালে সিলেট সদর উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। জুনায়েদ খোরাসানীকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের এ কমিটি শেষ পর্যন্ত যুবলীগের সম্মেলন করতে পারেনি। পরবর্তীতে ২০১৭ সালের ১৫ মার্চ সদর উপজেলা যুবলীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এরপর দীর্ঘ ৫ বছর অতিবাহিত হলেও আজোবধি যুবলীগের কমিটি হয়নি। এবার নেতাকর্মীরা সেই অন্ধকার পথ ভুলে আলোর মুখ দেখতে চায়। এজন্য তারা জেলা যুবলীগের দু’শামীমের ওপর নির্ভার হয়েছেন।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে সিলেট জেলা যুবলীগের সভাপতি শামীম আহমদ ভিপি ও সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমদ ৫ উপজেলা ও ৩ পৌরসভা কমিটি গঠনের লক্ষ্যে পদপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত আহ্বান করেন। যুবলীগের নতুন কমিটি হবে এমন সাংগঠনিক ইউনিট হচ্ছে, গোলাপগঞ্জ উপজেলা ও পৌর, বিয়ানীবাজার উপজেলা ও পৌর, বিশ্বনাথ উপজেলা ও পৌর, বালাগঞ্জ উপজেলা এবং সদর উপজেলা।
উল্লেখিত উপজেলা ও পৌর কমিটিতে পদ পেতে ইচ্ছুক যুবলীগ নেতাদের গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আগামী ৫ সেপ্টেম্বর সোমবারের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি, সদ্য তোলা পাসপোর্ট সাইজের এক কপি ছবি ও সর্বশেষ শিক্ষা সনদের ফটোকপিসহ পূর্ণাঙ্গ জীবনবৃত্তান্ত জেলা যুবলীগের সভাপতি অথবা সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি আবেদন ফরম সিলেট যুবলীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজ অথবা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছ থেকে সংগ্রহ করা যাবে।