অধ্যক্ষের যৌন হয়রানির আরো ঘটনা দেখেছি
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৫ জুলাই ২০১৯, ৮:৫৪ পূর্বাহ্ণফেনী: ‘সিরাজ উদ দৌলার যৌন হয়রানির আরো কয়েকটি ঘটনা আমি দেখে ফেলি। একদিন দুপুরে তাঁর কক্ষে গিয়ে দেখতে পাই তিনি এক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছেন। পরে তিনি আমাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, কাউকে বলবি না। আর বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না। আর শোন, পাথরে মাথা ঠুকলে মাথাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।’ মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলার সাক্ষী মাদরাসার নৈশপ্রহরী মোস্তফা তাঁর সাক্ষ্যে এসব কথা বলেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ দিনে এই পাঁচ নম্বর সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৭ জুলাই তারিখ ধার্য করেছেন আদালত। ওই দিন হত্যায় ব্যবহার হওয়া কেরোসিন বিক্রেতা, বোরকা বিক্রেতা ও দোকানের কর্মচারীর সাক্ষ্য গ্রহণের কথা রয়েছে।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ জানান, গতকাল সকাল ১১টায় কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে মামলার সব আসামিকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সকাল সাড়ে ১১টায় শুরু হয় মাদরাসার নৈশপ্রহরী মো. মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ। বিকেল ৩টায় সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষে আসামিদের জেলহাজতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী এম. শাহজাহান সাজু বলেন, গত বুধবার পঞ্চম দিনে সাক্ষী সোনাগাজী ফাজিল মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিন ও আগের দিন মঙ্গলবার নুসরাতের সহপাঠী নাসরিন সুলতানার জেরা শেষে মাদরাসার পিয়ন নুরুল আমিনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। এরপর গতকাল শেষ হয় নৈশপ্রহরী মোস্তফার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা পর্ব।
গতকাল সাক্ষ্য প্রদানকালে মোস্তফা বলেন, ‘তখন অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অফিস কক্ষ ছিল নিচে। একদিন দুপুরে তাঁর কক্ষে গেলে দেখি তিনি এক ছাত্রীকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করছেন। উনি বিব্রত হন। পরে ওই ছাত্রী বেরিয়ে গেলে অধ্যক্ষ আমাকে বলেন, যা দেখেছিস কাউকে বলবি না। বললেও কেউ বিশ্বাস করবে না। আর শোন, পাথরে মাথা ঠুকলে পাথরের কিছু হয় না; শুধু মাথাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তোরা কেউ আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবি না।’ সাক্ষ্যদানকালে মোস্তফা এমন আরো দুটি ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘এসব ঘটনা মাদরাসার ভেতরই চাপা পড়ে যায়। কেউ এগুলো নিয়ে প্রতিবাদ করেনি।’
মোস্তফা গত ৬ এপ্রিলের ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে আদালতকে বলেন, ‘সেদিন লোকজনের চিৎকারে জড়ো হই সাইক্লোন শেল্টারের নিচে। দেখি কয়েকজন ধরাধরি করে একটি পোড়া দেহ নিচে নামিয়ে আনছে। এগিয়ে গিয়ে দেখি ওটা নুসরাত। তার গায়ে তখনও আগুন। আমি দ্রুত আগুন নেভানোর চেষ্টা করতে গেলে আমার হাতই পুড়ে যায়। পরে আমাকে বহুদিন চিকিৎসা নিতে হয়।’ তিনি বলেন, সেদিন একজন ছাত্র নুসরাতের দেহ ঢেকে দিতে নিজের পরনের পাঞ্জাবি খুলে এগিয়ে দেন। বাংলার শিক্ষক খুজিস্তা খানম নুসরাতের দেহ ঢেকে দিতে একটি ওড়না এগিয়ে দেন। পরে তিনি আরেক ছাত্রীর কাছ থেকে আরো একটি ওড়না এনে নুসরাতের আগুনে পোড়া দেহ ঢেকে দেন। এ সময় নুসরাতকে হাসপাতালে নিতে সাহায্য করেন মাদরাসা গেটে কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল।’
প্রায় দেড় ঘণ্টার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হলে মোস্তফাকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াসউদ্দিন নান্নু, কামরুল হাসান, নাসির উদ্দিন বাহার, নুরুল ইসলাম (৪), আহসান কবির বেঙ্গল, মাহফুজুল হকসহ কয়েকজন আইনজীবী। রাষ্ট্র ও বাদীপক্ষে ছিলেন পিপি হাফেজ আহাম্মদ, অ্যাডভোকেট আকরামুজ্জামান, এপিপি এ কে এস ফরিদ উদ্দিন হাজারী ও এম শাহজাহান সাজু। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা মোস্তফাকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘তুমি পিবিআইয়ের চাপে পড়ে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা সাক্ষ্য দিচ্ছ।’ জবাবে মোস্তফা বলেন, ‘আমি যখন যা দেখেছি তাই বলেছি। আমার ওপর কেউ কোনো প্রভাব খাটায়নি বা মিথ্যা সাক্ষ্য দিতে চাপ দেয়নি।’