আজ আ’লীগের কর্মসূচী নেই : মনিয়া, বর্ণাঢ্যভাবে পালন হবে : আতাউর
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ২৩ জুন ২০১৯, ১১:৪৬ পূর্বাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিয়ানীবাজারে দলগত কর্মসূচী নিয়ে ভিন্নমত পাওয়া গেছে। ‘নৌকা’ অনুসারীদের নিয়ে আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান বর্ণাঢ্যভাবে নানা কর্মসূচী পালনের উদ্যোগ নিয়েছেন। আবার দলের সভাপতি হাছিব মনিয়া প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচী নেই বলে জানিয়েছেন।
এ কর্মসূচী পালনের মাধ্যমে দলের সভাপতি হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়া ও তাঁর দলভূক্তদের ‘মাইনাস’ করা হচ্ছে। অনেকের সাথে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরিণ বিভাজন অনেকটা প্রকাশ্যে চলে এসেছে।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আজকের কর্মসূচীর মধ্যে রয়েছে বেলা দু’টায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড প্রাঙ্গনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ, পৌরশহরে আনন্দ শোভাযাত্রা, কেক কর্তন ও আলোচনা সভা।
এ ব্যাপারে আ’লীগ সভাপতি হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়া বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কোন কর্মসূচী হাতে নেয়নি। শুনেছি ব্যক্তিগতভাবে আতাউর ভাই দাওয়াত করছেন নেতাকর্মী তাঁর অফিসে আসার জন্য। তিনি বলেন, আমি জেলা আ’লীগের কর্মসূচীতে যোগ দিতে সিলেট যাচ্ছি।
আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান বলেন, আ’লীগ করবো আর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন হবেনা, তা-তো হয়না। প্রকৃত আ’লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে এবার ৭০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করবো। এখানে মুখে আ’লীগ আর নির্বাচনে নৌকার বিরোধীতা করেন এমন নেতাদের দাওয়াত দেয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ প্রোগ্রাম থেকে নৌকা বিরোধীদের আনুষ্ঠানিকভাবে নেতাকর্মীরা প্রত্যাখান করবে। তিনি বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ সকল কর্মসূচীতে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণ করার আহŸান জানান।
আ’লীগের প্রচার সম্পাদক হারুনুর রশীদ দীপু বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে বলেন, উপজেলা আ’লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। তিনি বলেন, দলের সভাপতি প্রকৃত আ’লীগ হলে অবশ্যই জানতেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৌকা প্রতীকের বিরোধীতা করায় হয়তো নেতাকর্মী তাকে লালকার্ড দেখাচ্ছে।
জানা যায়, বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে বিভিন্ন কারণে মতপার্থক্য থাকলেও দলীয় কর্মসূচী পালনে তারা ছিলেন একাট্টা। এরনেপথ্য কারণ কিংবা শক্তি ছিল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ঐক্যবদ্ধ বোঝাপড়া। কিন্তু বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দু’জনের আন্তরিকতা একেবারেই ফিকে হয়ে গেছে। যা আ’লীগের গতিশীল কর্মকান্ডে কিছুটা হলেও প্রভাব পড়বে।
সূত্রমতে, বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলে প্রার্থী ছিলেন হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়া, আতাউর রহমান খান, মোহাম্মদ জাকির হোসেনসহ প্রায় একডজন নেতা। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আতাউর রহমান খানকে নৌকা’র চ‚ড়ান্ত মনোনয়ন দেন। এতে মানসিকভাবে কিছুটা হলেও ভেঙ্গে পড়েন সভাপতি হাছিব মনিয়া। তবে তিনি বিদ্রোহী প্রার্থী হননি। আবার নৌকার বিজয়ে যে ভ‚মিকা রাখার কথা ছিল, রহস্যজনক কারণে নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে ছিলেন অনেক দূরে। এরপরও শহরকেন্দ্রীক দু’একটি পথসভায় উপস্থিত ছিলেন হাছিব মনিয়া।
দু’মেয়াদে দেশের শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। এ হিসেবে মন্ত্রীগুণে যারা বিয়ানীবাজারে নিয়ামক শক্তি হয়ে উঠেছিলেন উপজেলা নির্বাচনে তাদের অনেকের ভ‚মিকা ছিল ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’র মতো। ব্যক্তি নয়, প্রতীকের সাথে এসব নেতাদের আচরণ দেখে স্থানীয় নেতাকর্মীরা ছিলেন দিশেহারা, পথহারা। একপর্যায়ে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সকল ষড়যন্ত্র এক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান খানের পরাজয়; ভোটের অনেক আগেই নিশ্চিত করা হয়।
মূলত: উপজেলা নির্বাচনের পর থেকেই বিয়ানীবাজারে আওয়ামী লীগে প্রকাশ্যে বিভাজন শুরু হয়। যারা নির্বাচনে নৌকা’র বিরোধীতা করেছিলেন তাদের সাথে আপোষ করতে নারাজ আতাউর খানসহ তাঁর সমর্থকরা। নির্বাচন পরবর্তী দু’বার এলাকায় এসেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। এ সময় বিভিন্ন প্রোগ্রামে তাঁর সাথে নৌকা বিরোধী নেতারা এবং বিদ্রোহী প্রার্থী মঞ্চে থাকায় তা বর্জন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খানসহ বেশক’জন দায়িত্বশীল নেতা। তাঁরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ, আগামীতেও চিহ্নিত নৌকা বিরোধী নেতারা এমপি নাহিদের সাথে থাকলে সভা-সমাবেশ বর্জন করবেন।
এদিকে আগামী মাসেই দীর্ঘ দেড়যুগ পর বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্মেলনে ভোটে কমিটি, না সমঝোতার মাধ্যমে শক্তিশালী কমিটি গঠন হবে এ নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গন বেশ সরগরম। গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে অনেকেই স্থানীয় কাউন্সিলরদের পাশাপাশি জেলা নেতাদের ধর্ণা দেওয়া রীতিমতো শুরু করেছেন।