বৃটেনে মৌলভীবাজারবাসীর মিলন মেলা
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০১৯, ৪:২৩ অপরাহ্ণযুক্তরাজ্য: প্রাচীন সংগঠন মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিল মিডল্যান্ডস ইন ইউকের উদ্যোগে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে থাকা প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীর উপস্থিতিতে প্রথমবারের মত বার্মিংহামে অনুষ্ঠিত হয়েছে মৌলভীবাজারী মিলন মেলা।
গত ৯ জুন স্থানীয় পিকাডিলি বাঙ্কুয়েটিং হলে আয়োজিত এ মিলন মেলায় লন্ডন, লুটন, ম্যানচেষ্টার, ওল্ডহাম, শেফিল্ড, লিভারপুল, ষ্টোকেন্ট ট্রেন্ট, কভেন্ট্রি, কার্ডিফ, নিউক্যাসল, সোয়ানসী, পোর্টসমাউত এর পাশাপাশি সুদূর আয়ারল্যান্ড-স্কটল্যান্ড থেকেও ছুটে এসেছিলেন মৌলভীবাজার জেলার ৭ টি উপজেলার প্রবাসী মৌলভীবাজারবাসীরা।
মূল অনুষ্ঠান শুরুর নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই অনুষ্ঠানস্থল বার্মিংহামের পিকাডিলি বাঙ্কুয়েটিং হল মৌলভীবাজারবাসীর উপস্থিতিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠে। পরিবার পরিজন নিয়ে আসা মৌলভীবাজারবাসীদের সরব পদচারনায় মূখরিত হয়ে উঠা বাঙ্কুয়েটিং হলটি তখন হয়ে উঠে একখন্ড মৌলভীবাজার।
মৌলভীবাজারী মিলন মেলায় অংশ নিয়ে যুক্তরাজ্যেও মৌলভীবাজার প্রবাসী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, সলিসিটর, রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, কবি-সাহিত্যিক-সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক কর্মী, সমাজকর্মীরা আড্ডায় মেতে উঠেন নানাভাবে। দীর্ঘদিন পরে দেখা হওয়া পুরনো বন্ধুরা আনন্দে-উচ্ছ্বাসে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন, রোমন্থন করেন পুরোনো স্মৃতিগুলো। মৌলভীবাজারীদের মিলন মেলায় যোগ দিতে বার্মিংহামের বাঙালী কমিউনিটির নানা রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের শীর্ষজনরাও উপস্থিত হোন।
অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে যোগ দেন বৃটিশ শেডো মিনিষ্টার ফর ডিজিটাল লিয়াম ব্রায়ান এমপি, শেডো মিনিষ্টার ফর ফরেন এন্ড কমনওয়েলথ এফেয়ার্স খালেদ মাহমুদ এমপি ও বার্মিংহামের বাংলাদেশি সহকারী হাইকমিশনার নাজমুল হকসহ অন্যরা। আসন সঙ্কুলান না হওয়ায় তাৎক্ষনিকভাবে প্রায় দুই শত আসন বসানোর পরও আসন না পেয়ে অনেককেই দাঁড়িয়ে মিলন মেলার আয়োজনগুলো উপভোগ করতে দেখা যায়। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে শুরু হয় মৌলভীবাজারী প্রবাসীদের বহু আকাংখিত এ মিলন মেলা। চ্যানেল এস এর রিয়াদ আহাদ ও বার্মিংহাম কুইন এলিজাবেথ হাসপাতালের ডাক্তার মেহনাজ মুনার প্রাণবন্ত সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মৌলভীবাজারী মিলন মেলা শুরু হয় ধর্ম সম্পাদক ফরিদ আহমেদের পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াতের মাধ্যমে।
স্বাগত বক্তব্য দেন মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বাবলু, সভাপতির বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সভাপতি হাবিবুর রহমান। তারা মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিলের গৌরবোজ্জ্বল ৬৭ বছর পূর্তি নিয়ে মৌলভীবাজারী মিলন মেলা আয়োজনের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।
এসময় মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিলের কার্যকরী কমিটির সকল সদস্যদের মঞ্চে এনে পরিচয় করিয়ে দেওয়া ছাড়াও মৌলভীবাজারী মিলন মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত একটি সংকলনের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। অনুষ্টানে মূলধারার রাজনীতি করে মৌলভীবাজারীদের আলোকিত মুখ হিসেবে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন কাউন্সিল থেকে নির্বাচিত হওয়া ১৪ জন কাউন্সিলরকে মঞ্চে এনে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
মরোণত্তর সম্মাননা প্রদান করা হয় মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিলের প্রতিষ্টাকালীন প্রয়াত: সদস্যদের; যা গ্রহণ করেন বিভিন্ন শহরে বসবাস করা তাদের পরিবারের সদস্যরা। এছাড়া সংগঠনের সাবেক বয়ো:বৃদ্ধ সদস্যদেরও মঞ্চে এনে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। জীবনের শেষ লগ্নে আসা সেসব বয়ো:বৃদ্ধরা তাদেরকে এখনো মনে রেখে মঞ্চে এনে সম্মাননা প্রদান করায় তাদের আবেগঘন অনূভুতি প্রকাশ করলে এক অন্যরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
বয়ো:বৃদ্ধদের অনেকে হুইল চেয়ার এবং পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতায় মঞ্চে আসলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত সকলে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এসময় বক্তব্য রাখেন বিশ্ব বিখ্যাত ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ড. হাশেম ইউ আহমেদ, দল-মত যাই থাকুক, মৌলভীবাজারী মিলন মেলায় মঞ্চে এসে একই স্থানে দাঁড়িয়ে মৌলভীবাজারী হিসেবে এক প্লাটফরমে আসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ যেনো এক প্রাণের বন্ধন।
বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি জালাল উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এম মাহিদুর রহমান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সহ সভাপতি এম লুতফুর রহমান, মৌলভীবাজার মুক্তকথার সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশীদ, বাংলা সাহিত্যের অন্যতম শক্তিশালী কবি শামিম আজাদ, সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক নবাব উদ্দিন, কমিউনিটি লিডার সিনিয়র সাংবাদিক কে এম আবু তাহের চৌধুরী, সাপ্তাহিক দেশ সম্পাদক তাইছির মাহমুদ, বাংলা কাগজের চেয়ারম্যান আজাদ আবুল কালাম, মৌলভীবাজার থেকে প্রকাশিত দৈনিক মৌমাছির কন্ঠের সম্পাদকমন্ডলীর সভাপতি কমিউনিটি লিডার ও সাংবাদিক মোহাম্মদ মকিস মনসুর, বাংলা পোষ্টের হেড অফ প্রোডাকশন সালেহ আহামেদ,
কবি আতউর রহমান মিলাদ, চ্যানেল এসের সিনিয়র প্রযোজক আহাদ আহমেদ, এলবি টুয়েন্টি ফোর টিভির আতাউর রহমান শাহীন, চ্যানেল এস এর স্কীল ফর ওয়ার্কের উপস্থাপক জামাল আহমেদ, বেতার বাংলার মিলন মোস্তফা ও নুরুল ইসলাম ওকিব, নর্থ ইংল্যান্ড বাংলাদেশি জার্নালিষ্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্টাতা সভাপতি সৈয়দ সাদেক আহমেদ, এটিএন বাংলা ইউকে’র কভেন্ট্রি প্রতিনিধি কবি রায়হান তালুকদার, এনটিভি’র প্রতিনিধি আব্দুল হান্নান, টিভি ওয়ানের আমিরুল ইসলাম বেলাল, বাংলা টিভির প্রতিনিধি এবাদুর রহমান খালেদ প্রমূখ।
এছাড়াও বিভিন্ন শহর থেকে আগত অতিথিদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- লেষ্টারের মতিউর রহমান চৌধুরী, ফজলুর রহমান, টিপু রহমান, পোর্টসমাউথের মসুদ আহমেদ, স্টোকেন ট্রেন্টের ইকবাল চৌধুরী, সোয়ানসীর আবু সালেহ সুয়েব হাবিবুর রহমান মকবুল আব্দুল মতলিব, নর্থ ইষ্ট মৌলভীবাজার অ্যাসোসিয়শনের আনোয়ার মিয়া, নিউপোর্টের শাহ শাফি ক্বাদির, কার্ডিফের হারুন তালুকদার, শেখ আতিকুর রহমান, মুহিবুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল ওয়াহিদ বাবুল, ইকবাল আহমদ ম্যানচেষ্টারের বুরহান আহমেদ, লন্ডনের তাজ উদ্দিন, মিসবাহ কামাল, এম এ সালাম, আহবাব হোসেন খান বাপ্পি, রোমান আহমেদ, নজরুল খান, জুবায়ের আহমেদ সেলিম, আয়ারল্যান্ডের আহাদ চৌধুরী, স্কটল্যান্ডর নজরুল ইসলাম প্রমূখ।
এমনকি এটিএন বাংলা ইউকের জয়নাল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্টিত মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্টানেও ছিল মৌলভীবাজারী শিল্পীদের অংশগ্রহণ। যন্ত্রসঙ্গীতে মৌলভীবাজারের পাপ্পু আর সঙ্গীতে শিবলু রহমান, ময়না মিয়া, সৈয়দ সুহেলদের পাশাপাশি বার্মিংহামের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পি শেবুল ও লন্ডনের শতাব্দি কর সঙ্গীত এবং কভেন্ট্রির শিশু শিল্পি ফাতিহা, নাবিহা ও সামিহা পরিবেশন করেন। সবশেষে মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিলের কার্যকরী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মৌলভীবাজারী মিলন মেলা উপলক্ষ্যে তৈরী বিশাল কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘঠে।
প্রসঙ্গত, ১৯৫২ সালে মিডল্যান্ডসে প্রতিষ্টিত মৌলভীবাজার জেলাবাসীর ঐতিহ্যবাহী সংগঠন মৌলভীবাজার জেলা জনকল্যাণ কাউন্সিলের গৌরবোজ্জ্বল ৬৭ বছর পূর্তি উপলক্ষে বার্মিংহামে ‘মৌলভীবাজারী মিলন মেলা’ এর আয়োজন করা হয়। প্রায় ১২শ’ অতিথির উপস্থিতিতে এই প্রথমবারের মতো অনুষ্টিত হওয়া মৌলভীবাজারী এই মিলন মেলায় বার্মিংহামের কোন অনুষ্ঠানে বাঙালী কমিউনিটির অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম- এমন মন্তব্য করেন উপস্থিত সবাই।
অনুষ্ঠানে বক্তারা মৌলভীবাজারে সরকারি মেডিকেল কলেজ দ্রুত বাস্তবায়নের চুড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।