`বাসুদেব প্রাঙ্গনে রথযাত্রা, পুজা-অর্চনা চলবে’
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ জুন ২০১৯, ৬:৪৬ অপরাহ্ণ।। আতাউর রহমান ।।
পূণ্যভূমি সিলেটের রত্নাগর্ভা উপজেলা বিয়ানীবাজার। এখানে সম্প্রীতির বন্ধন আছে। চিত্ত ও বিত্তের সমন্বয় আছে l তারই নিদর্শন এই বিয়ানীবাজার উপজেলার সুপাতলা গ্রামের শ্রীশ্রী বাসুদেব মন্দির। যা খ্রিষ্টীয় সপ্তম শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। যার ধারাবাহিকতায় এ জনপদে শতাধিক বছর ধরে ‘বাসুদেব রথযাত্রা’ ও মেলা হিন্দুদের তীর্থস্থান কালের সাক্ষী হয়ে আছে। বাসুদেব মেলায় সব ধর্মের মানুষের মিলন মেলা হয়।
এখানে বিয়ানীবাজার ছাড়াও পার্শ্ববর্তী বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ী, গোলাপগঞ্জ, জকিগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলার উৎসবপ্রেমী মানুষের পদচারণায় মেলা চত্ত্বর মুখরিত হয়।
জানা যায়, সরকারের অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বাসুদেব মন্দিরের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। উপজেলা প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় ব্যাক্তিবর্গের উপস্থিতিতে সে অনুযায়ী মন্দিরের পেছন দিকে ১০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা সমঝোতা সিদ্ধান্তর মাধ্যমে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু সীমানা প্রাচীর নিমার্ণ কাজ শুরুর দিনেই স্বার্থান্ধ বিষয় নিয়ে কিছু একটা অঘটন ঘটেছে। বাক বিতণ্ডা, হুমকির কথা শোনা যাচ্ছে। সেজন্য তো অসাম্প্রদায়িক বৃহৎ সমাজ আছে, আইন আছে, সম্প্রীতির বন্ধনের নেতৃত্ব আছে।
জনপ্রতিনিধিগন আছেন। এহেন আচরণ মেনে নেয়া যায় না। রথ যাত্রা কেন বন্ধ হবে। নির্মাণের সাথে রথ বন্ধ করার কি বা হেতু আছে? প্রশাসনের উচিৎ রথযাত্রার ধারাবাহিকতা রক্ষা করা। বিয়ানীবাজারে এই বাসুূদেব বাড়ী থাকবে, মন্দির থাকবে, সনাতনধর্মাবলম্বী সবই থাকবে পুজা অর্চনা, রথ সবই হবে। অস্থিরতার কিছু নেই। দেশে আইন আছে। চিন্তার কোন কারণ নেই। কিন্তু এই হীনস্বার্থের অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বাসুদেব সেবক সংঘের জরুরী মিটিং আহবান করা এবং অসাম্প্রদায়িক বিয়ানীবাজারের ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী বাসুদেব মন্দিরে রথ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘোষণায় কতটা যৌক্তিকতা আছে তাও খতিয়ে দেখার বিষয়!
আমি মনে করি, বাসুদেব মন্দিরের বিষয়টি একটি দ্বি-মাত্রিক ধারণা। এর গভীরতা দেখা দরকার! এখানে কোন রসায়ন নেই। আছে ভূগোল তত্ত্ব। আর যদি নাও হয়, তাহলে আমি বলবো, এটি অদৃশ্য কোন শক্তির টেস্ট নেওয়ার কৌশল ছাড়া কিছুই নয়। বিয়ানীবাজার একটি অসাম্প্রদায়িক অঞ্চলরূপে সর্বকালে সমাদৃত। এখানকার সম্প্রীতির ঐতিহ্য বরাবরই অনন্য। এক্ষেত্রে কোন উসকানি কিংবা মিথ্যাচার কাম্য নয়। প্রতিটি আন্দোলনে রাজনীতি’র একটু লেজ থাকলে তা যে-কোনো সময় নড়া-চড়া করে। কিন্তু এখানে তা আছে কি-না খতিয়ে দেখা দরকার। ভুলে গেলে চলবে না যে, সকল মত পথ ছাড়া আমাদের আরও একটি পরিচয় আছে।
সেটা প্রথমত মানুষ; দ্বিতীয়ত আমরা বাংলাদেশের সংবিধান স্বীকৃত “নাগরিক”। সুতরাং আমার সব কথা বলা স্রেফ নাগরিক হিসেবে। নাগরিক হিসেবে আমরা কেন ভালো নেই। আমরা কেন সরকারের শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর আস্থা রাখতে পারছি না। সরকার কেন আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দিচ্ছে না। সেটির দাবী জানানো গনতান্ন্ত্রিক আধিকার। তাতে কোন আপত্তি নেই। আমরা বাঁচতে চাই। আমাদের পেটে ক্ষুধা আছে, অন্নের তাড়না আছে। আমাদের মা’রা চুলার আগুনে ফু দেন সাদা ভাতের জন্য। মা’র রান্না ভাত খেয়ে রক্তে লাল হওয়ার ইচ্ছে তো পোষণ করি না। তাই সবাইকে মানবাধিকার রক্ষায় এগিয়ে আসতে হবে।
আমার কথা-বার্তা কারো পক্ষে কিংবা বিপক্ষে যেতে পারে। যাদের পক্ষে যাবে তারা আমাকে আপনাদের গোত্রীয় ভাববেন না, ভাবলে তা বোকামী হবে। এবং যাদের বিপক্ষে গেছে তারাও আমাকে শত্রু জ্ঞান করবেন না, করলে হয়তো আপনাদের অজান্তে আপনারা আপনার বন্ধুকে হারাবেন। শেষ এবং চূড়ান্ত কথা হলো, ধর্মে ধর্মে আমাদের মানসিক দুরত্ব হয়তো আছে কিন্ত তা দৌরাত্বের বাইরে না। সুতরাং কোনো পক্ষ উস্কানি দিবেন না, ইহা চুল্কানির সমান; সবাই চুলকাতে চাইবে।
তাই সজাগ হোন। কেউ যাতে মিথ্যাচার করতে না পারে। লেখক: কলামিস্ট ও শিক্ষক।
সভাপতি: বিয়ানীবাজার প্রেসক্লাব, সিলেট।