ছাতকে পৌর মেয়র কালামের পাঁচ সহোদরের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ জুন ২০১৯, ২:২৭ পূর্বাহ্ণছাতক: সুনামগঞ্জের শিল্পনগরী ছাতকে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বন্দুক যুদ্ধ, ওসিসহ সাত পুলিশ ও সাধারণ মানুষ আহত ও ভ্যান চালক নিহত হওয়ার ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরীর সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীসহ তাঁর পাঁচ ভাইয়ের পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে।
শনিবার পাঁচ সহোদরের আগ্নেয়াস্ত্র’র লাইসেন্স বাতিলের আদেশ সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসনের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত হয়।
এর আগে ৩০মে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ এক আদেশে তাদের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেন।
আদেশের অনুলিপি সদয় জ্ঞাতার্থে প্রধান মন্ত্রীর মুখ্য সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের জননিরাপক্তা বিভাগের সচিব, ব্যবস্থাপণা পরিচালক বাংলাদেশ মেশিন টুুলস ফ্যাক্টরী লিমিটেড গাজীপুর সেনানিবাসসহ সংশ্লিষ্ট সকল দফতরে প্রেরণ করা হয়েছে।
যাদের আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তারা হলেন- ছাতক বাগবাড়ির মৃত আরজ মিয়া চৌধুরীর ছেলে শাহীন আহমদ চৌধুরীর একটি ডিবিবিএল বন্দুক, তার সহোদর জামাল আহমদ চৌধুরীর পর্তুগালের তৈরী একটি এসবিবিএল বন্দুক, জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরীর এক্সটা ব্যারেলে একটি শটগান, কামাল চৌধুরীর তুর্কির তৈরী এক্সটা ব্যারেলে একটি শটগান, আহমদ সাখাওয়াত চৌধুরী সেলিমের তুর্কির তৈরী এক্সটা ব্যারেলের একটি শটগান।
১৪ মে মঙ্গলবার রাতে ছাতকের সুরমা নদীর নৌপথে টোল আদায়ে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ছাতক পৌর মেয়র আবুল কালাম চৌধুরী ও তার সহোদর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা শামীম আহমদ চৌধুরীর দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রাণ হারান এক নিরীহ ভ্যান চালক সাহাবউদ্দিন (৪৫)। তিনি পৌর শহরের আবদুস ছোবানের ছেলে।
এছাড়াও ওই ঘটনায় ছাতকের ওসি, দুই এসআই ও চার পুলিশ সদস্যসহ আহত হন অর্ধশতাধিক।
আহতরা পরবর্তীতে এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও ছাতক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
ঘটনার পরপরই প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানায়, ছাতকের সুরমা নদীতে বালু পাথর সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে চাঁদা সংগ্রহে সম্প্রতি ছাতক পৌরসভার মেয়র নিয়ন্ত্রিত ৯ কাউন্সিলর জোট বেধে ‘শাহজালাল সমিতি’ নামে একটি সংগঠন গঠন করেন।
এই সংগঠনের ব্যানারে পৌর শহর ঘেঁষে বয়ে চলা সুরমা নদীতে বালু, পাথর, সিমেন্ট পরিবাহী কার্গো, জাহাজ বাল্ক হেড নৌকা থেকে টোল আদায়ের নামে চাঁদা উত্তোলন করা হতো।
এনিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির জের ধরে ছাতক পৌরসভার মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা কালাম চৌধুরী ও তার বলয়ের কাউন্সিলদের সঙ্গে তারই প্রতিপক্ষ সহোদর শামীম আহমদ চৌধুরীর গ্রুপ বন্ধুকযুদ্ধে জড়ায় ।
এ সংঘর্ষের পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে ঘটনার রাতেই পৌর মেয়র শামীম চৌধুরীর ভাই জামাল চৌধুরী, চাচা এলাইস চৌধুরীসহ কমপক্ষে ২৮ জনকে আটক করে।
এ ঘটনায় পরদিন ১৫ মে ছাতক থানায় পুলিশ বাদী হয়ে পৌরসভার ৯ কাউন্সিলরসহ ৯৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আড়াই শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে থানায় একটি পুলিশ এসল্ট মামলা (নং-১৭(০৫)২০১৯) দায়ের করেন।
এরপর ১৬ মে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত ভ্যান চালক শাহাবউদ্দিনের স্ত্রী ফাতেমা বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৪০ তেকে ৫০ জনকে আসামি করে ছাতক থানায় আরেকটি ত্যা মামলা (নং-১৯(০৫)২০১৯) দায়ের করেন।
পরবর্তীতে ১৭ মে ছাতক থানায় পুলিশ বাদি হয়ে ৯৮জনের নাম উল্লেখ করে আরো ২ শতাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে পৃথক আরো একটি মামলা (নং-২০ (০৫)২০১৯) দায়ের করে।
শনিবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ পাঁচজনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিলের বিষযটি নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশের প্রতিবেদন অনুযায়ী যাদের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে তারা ছাতকে ৩০০ থেকে ৪০০ জন লোক বে আইনি সমাবেশে সমবেত হয়ে দাঙ্গায় লিপ্ত হয়ে উভয়ে পক্ষের লোকজন আগ্নেয়াস্ত্র দ্বারা গুলিবর্ষণ, ককটেল, পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে। যে কারণে একজন ভ্যান চালক নিহত, পুলিশের সদস্যরা ও সাধারণ লোকজন গুরুতর আহত হন। ওই ঘটনায়পরবর্তীতে তারা পুলিশের এসল্ট ও বিস্ফোরক মামলার আসামিও হয়েছেন। তাই জননিরাপক্তার স্বার্থে আগ্নেয়াস্ত্র লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ব্যবহার নীতিমালায় ২০১৬ এর ২৫ ধারার নীতিমালার ১৯ এর (চ) ধারা মোতাবেক উপরোক্ত ব্যাক্তিদের অনুকুলে ইস্যুকৃত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করা হয়।