ভূয়া জন্মসনদ: গোলাপগঞ্জে ইউপি চেয়ারম্যানসহ ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৪ মে ২০১৯, ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণগোলাপগঞ্জ: গোলাপগঞ্জে ৫ ব্যক্তিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের স্থানীয় বাসিন্দা দেখিয়ে পাসপোর্ট তৈরির জন্য জাল জন্মসনদ ইস্যু করে প্রতারণার অভিযোগে গোলাপগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরীসহ ১১জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ।
পুলিশের জেলা বিশেষ (ডিএসবি) শাখার উপ-পরিদর্শক মফিজুর রহমান এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলার অপর আসামীরা হলেন ইউনিয়ন পরিষদের সচিব কামরান উদ্দিন, ডিজিটাল উদ্যোক্তা বাহার উদ্দিনের গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছত্রিশ গ্রামের সামছুদ্দিন মাষ্টারের ছেলে সিরাজুল কবির ও তার বোন রোজিয়া আক্তার লিপি, বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের আব্দুল খালিকের ছেলে ব্রাজিল প্রবাসী জয়নাল, সিলেট দক্ষিণ সুরমা থানার কদমতলী এলাকার মো: চুনু মিয়ার ছেলে আনোয়ার হোসেন (ব্রাজীল প্রবাসী), গোলাপগঞ্জ উপজেলার বহরগ্রামের মফুর আলীর ছেলে মাসরুর আহমদ, ভাদেশ্বর ইউপির আমকোনা গ্রামের মৃত আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে সাইদুর রহমান (ব্রাজীল প্রবাসী) , গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের আসদ্দর আলীর ছেলে মস্তাক আহমদ, মৃত আহমদ আলীর ছেলে মিসির আলী।
মামলাটি গত পহেলা মে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় (মামলা নং ০২) নথিভুক্ত হয়।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের ছত্রিশ গ্রামের বাসিন্দা দেখিয়ে জনৈক সিরাজুল কবির ও সুমি বেগমের ৫ সন্তান যথাক্রমে নাহিম আহমদ, আসিফ আহমদ, ছাহিম আহমদ, ফাহিম আহমদ, ও জলি আক্তার মেশিন রিডেবল পাসপোর্টে তৈরির জন্য গত বছরের ১৭এপ্রিল ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম সন্দ নেন। এরপর একই বছরের ২৬এপ্রিল ও ৫মে দুই দফায় বহিরাগমন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় অফিসে আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে নিয়মানুযায়ী আবেদনপত্রগুলো পুলিশ ভেরিফিকেশনের জন্য পুলিশের জেলা বিশেষ শাখায় (ডিএসবি) যায়। একই বছরের ৩০ এপ্রিল ও ২৬ মে ডিএসবির দুই তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক শামীমুর রহমান ও সৈয়দ মওদুদ আহমদ রুমী আবেদনপত্রে উল্লেখিত ঠিকানা যাচাই বাছাই করে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের খুজেঁ পাওয়া যায়নি মর্মে প্রতিবেদন জমা দেন। এরপর আবেদনকারীদের ব্যাপারে অধিকতর তদন্তের জন্য মামলার বাদী উপ-পরিদর্শক মো: মফিজুর রহমানের উপর দায়ীত্ব পড়ে। মফিজুর রহমান তদন্তে নেমেই মূল ঘটনা বেরিয়ে আসে। তিনি প্রকাশ্য ও গোপনীয় তদন্তে জানতে পারেন আবেদনকারীর পরিচয় সম্পূর্ন ভূয়া। আবেদনকারীদের মধ্যে নাহিম আহমদ হলেন মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থানার উত্তর লঘাটি গ্রামের দুবাই প্রবাসী ফয়েজ উদ্দিন ও লুতফা আক্তারের ছেলে আসাদুজ্জামান নায়িম।
জানা যায়, লুতফা আক্তারের তালতো ভাই বিয়ানীবাজার তিলপাড়া ইউনিয়নের আব্দুল খালিকের ছেলে জয়নাল ব্রাজীল প্রবাসী হওয়ায় তার মাধ্যমে কথিত সিরাজুল কবির আবেদনকারীর সাথে যোগাযোগ করে নাহিম আহমদকে ছেলে বানিয়ে অবৈধভাবে বিদেশ নেওয়ার জন্য পাসপোর্ট আবেদন করেন। একইভাবে পাসপোর্ট আবেদনকারী আসিফ আহমদের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় সিলেট কদমতলী (স্টারলাইট কলেজের পার্শ্বে) এলাকার চুনু মিয়া ও আঙ্গুর বেগমের ছেলে সাকিব হোসেন আসিফ। আবেদনকারী ছাহিম আহমদ হলেন বিয়ানীবাজার উপজেলার পূর্ব মুড়িয়া অষ্টঘরী গ্রামের আব্দুল আহাদ ওরফে মাসুক ও শেফালী বেগমের ছেলে আরিফ আহমদ সায়েম। ফাহিম আহমদের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায় গোলাপগঞ্জ উপজেলার লক্ষনাবন্দ ইউনিয়নের ফুলসাইন্দ গ্রামের মৃত রুনু মিয়া ও মৃত হালিমা বেগমের ছেলে ফাহিম আহমদ। জলি আক্তারের প্রকৃত পরিচয় পাওয়া যায গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের সৌদি প্রবাসী মজির উদ্দিন রোজিয়া আক্তার লিপির মেয়ে জলি আক্তার। ২য় দফা তদন্তে পাসপোর্ট আবেদনকারীদের আসল পরিচয় বেরিয়ে আসে। মামলার এজাহারে আরো উল্লেখ করাহয় আসামী সিরাজুল কবির এর কথিত স্ত্রী অপর আসামী রোজিয়া আক্তারের স্বামীর বাড়ী পাশ্ববর্তী গ্রামে হওয়ায উভয়ের মধ্যে সুসম্পর্ক ছিলো। তাই তারা নকল বাবা-মা সেজে মামলার অপর আসামীদের সাথে পরস্পর যোগসাজশ করে অন্যের সন্তানকে নিজের সন্তান পরিচয়ে পাসপোর্ট তৈরী করে বিদেশে নেওয়ার জন্য মিথ্যা জন্ম নিবন্ধন সনদ তৈরী করে প্রতারনা করেন।
এবিষয়ে জানতে ইউপি চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যাযনি। খোজঁ নিয়ে জানা গেছে মামলার খবর পেয়ে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
ইউপি সচিব কামরান আহমদ মুঠোফনে অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, জন্ম সনদ তৈরীর দায়িত্ব ডিজিটাল উদ্যোক্তা বাহার উদ্দিনের আমি এর সাথে জড়িত নই। স্থানীয় ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদেস্যের সত্যায়ন ছাড়া কিভাবে জন্ম সনদ ইস্যূ হলো এই প্রশ্নের কোন সঠিক উত্তর তিনি দিতে পারেননি।
এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (অতিরিক্ত দায়িত্ব) দিলীপ নাথ জানান, আসামীদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে।