টানা গণবিক্ষোভের মুখে আলজেরিয়ার স্বৈরশাসকের পদত্যাগ
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৩ এপ্রিল ২০১৯, ১:২৯ অপরাহ্ণটানা গণ-বিক্ষোভের মুখে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফলিকা পদত্যাগ করেছেন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে দেশটির এই স্বৈরশাসকের পদত্যাগের ঘোষণা দেয়া হয়। গত ২০ বছর ধরে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী ৮২ বছর বয়সী আবদেল আজিজকে তার দায়িত্ব পালনে অযোগ্য ঘোষণা করেছে। অসুস্থ এই প্রেসিডেন্ট ছয় বছর আগে স্ট্রোক করেছিলেন। তখন থেকে তাকে খুব কম সময়ই জনসম্মুখে দেখা যায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণা আসার পর রাজধানী আলজিয়ার্সে দেশটির নাগরিকরা গাড়ির হর্ন বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন; রাস্তায় নেমে আসেন শত শত মানুষ। এসময় তাদের হাতে শোভা পায় জাতীয় পতাকা এবং মুখে গান শোনা যায়।
সেলমাউয়ি সিদ্দিক নামের এক আলজেরীয় বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আমাদের এখন ১০০ ভাগ গণতান্ত্রিক যাত্রা শুরু হবে; এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের এখন আগের পুরো শাসনব্যবস্থাকে উপড়ে ফেলা দরকার এবং এটি একটি কঠিন কাজ।
মুশতফা বোচ্যাচি নামের অপর এক বিক্ষোভকারী প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণার আগে বলেছিলেন, আবদেল আজিজের পদত্যাগের ঘোষণার পরও কোনো কিছুতেই পরিবর্তন ঘটবে না। যে কারণে আমাদের বিক্ষোভ চলবে।
আলজেরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তাসংস্থা এপিএসে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের ঘোষণার এক বিবৃতি আসে। পরে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেলে বলা হয়, পদত্যাগের এই ঘোষণা শিগগিরই কার্যকর হবে।
সংবিধান অনুযায়ী, পরবর্তী নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশটির সিনেটের স্পিকার আলজেরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।
যেভাবে এল পদত্যাগ
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে পঞ্চম মেয়াদে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচনে লড়াইয়ের ঘোষণা দেন আবদেল আজিজ। তার এই ঘোষণার পরপরই দেশটিতে গণবিক্ষোভ শুরু হয়; তখন থেকে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়তে থাকেন তিনি।
গত ১ মার্চ দেশজুড়ে লাখ লাখ মানুষ বিক্ষোভ করেন। গণ-বিক্ষোভের মুখে প্রেসিডেন্ট আবদেল আজিজ বুতেফলিকা পঞ্চম মেয়াদে নির্বাচনে লড়বেন না বলে অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তার এই অঙ্গীকারের পরও গণবিক্ষোভ চলতে থাকে।
বুতেফলিকা প্রস্তাব দেন, তার মেয়াদ ২৮ এপ্রিল শেষ হবে এবং এই সময় পর্যন্ত দেশের শাসন ক্ষমতায় থাকতে চান তিনি। কিন্তু বিক্ষোভকারী নেতারা তার এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে যতদ্রুত সম্ভব পদত্যাগের দাবি জানান।
বিক্ষোভকারীদের প্রস্তাবে দেশটির শক্তিশালী সেনাবাহিনী একমত পোষণ করে। মঙ্গলবার সকালের দিকে আলজেরিয়ার সেনাবাহিনীর প্রধান লে. জেনারেল আহমেদ গায়িদ সালাহ বলেন, সময় নষ্ট করার আর কোনো সুযোগ নেই।
কী ঘটবে এখন?
বিক্ষোভকারীরা দেশটির পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার ডাক দিয়েছেন। আলজেরিয়ার রাজনীতিতে দেশটির সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিক্ষোভকারীদের অধিকাংশই তরুণ এবং তারা বলছেন, তারা নতুন ধরনের সরকার ব্যবস্থা চান।
বুতেফলিকার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে, তাকে দেশটির একদল ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ ও সামরিক কর্মকর্তা ব্যবহার করে ফায়দা লুটছে।
আগামী ১৮ এপ্রিল দেশটির সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নির্ধারিত থাকলেও তা শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায়। দেশটিতে রাজনৈতিক সংস্কার আনার জন্য জাতীয় সম্মেলনের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট।
সাত বছরের প্রাণঘাতী সংঘাতের পর ১৯৬২ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে আলজেরিয়া। স্বাধীনতার পর থেকে দেশটির ক্ষমতায় রয়েছে ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট। ১৯৯৯ সালে দেশটির ক্ষমতায় আসেন বুতেফলিকা। দেশটির ইসলামি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে রক্তাক্ত এক গৃহযুদ্ধের পর ক্ষমতা পোক্ত করেন তিনি। ওই গৃহযুদ্ধে অন্তত দেড় লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত দেশটির সংসদের উচ্চ কক্ষের স্পিকার আবদেল কাদের বেনসালাহ অন্তঃর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স।