আগামীকাল রাতে পবিত্র শবে মি’রাজ
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১০:৩৬ অপরাহ্ণআগামীকাল রাতে- যথাযথ ধর্মীয় মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে আগামীকাল বুধবার দিবাগত রাতে সারাদেশে পবিত্র শবে মি’রাজ উদযাপিত হবে বলে জানিয়েছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ তথ্য জানায়।
পবিত্র শবে মি’রাজ উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগ বুধবার বাদ আসর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ‘লাইলাতুল মি’রাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য’ শীর্ষক এক ওয়াজ ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে।
সেখানে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের পেশ ইমাম হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মহিউদ্দিন কাসেম মি’রাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্য বিষয়ে জ্ঞানগর্ব আলোচনা করবেন। এতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সচিব কাজী নূরুল ইসলাম সভাপতিত্ব করবেন।
বুধবার দিন পেরিয়ে রাতের আঁধার নামলেই আবির্ভাব ঘটবে এক অলৌকিক, অসামান্য, মহাপূণ্যে ঘেরা রজনী। এ রজনী মহাপবিত্র মহিমান্বিত লাইলাতুল মে’রাজের।
আমাদের ‘প্রিয় নবী’ হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম নবুওয়াতের একাদশ বর্ষের ২৬ রজবের দিবাগত গভীর নিশিথে মহান আল্লাহর খাস রহমতে হযরত জিব্রাঈল আলাহিস্সালামের সাথে পবিত্র কাবা হতে ভূমধ্যসাগরের পূর্ব তীরে ফিলিস্তিনে অবস্থিত পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে সপ্তাকাশের উপর সিদরাতুল মুনতাহা, অত:পর সত্তর হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহ তা’য়ালার দিদার লাভ করেন এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের হুকুম নিয়ে দুনিয়াতে প্রত্যাবর্তন করেন।
মেরাজকালে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সৃষ্টি জগতের সমস্ত কিছুর রহস্য অবলোকন করেন। এ রাত অতি পবিত্র ও মহান আল্লাহ তা’য়ালার অফুরান রহমত-বরকত-মাগফিরাতে সমৃদ্ধ।
আরবী শব্দ মে’রাজ অর্থ উর্ধারোহণ। এ মেরাজের বড়দাগে অর্থ দাঁড়ায়-সপ্তম আসমান, সিদরাতুল মুনতাহা, জান্নাত-জাহান্নাম পরিদর্শন ও ধনুক কিংবা তার চে’ কম দূরত্বে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য পর্যন্ত ভ্রমণ।
এ ছিল আল্লাহ তাআলার মহান কুদরত, অলৌকিক নিদর্শন, নবুয়তের সত্যতার স্বপক্ষে এক বিরাট আলামত, জ্ঞানীদের জন্য উপদেশ, মোমিনদের জন্য প্রমাণ, হেদায়েত, নেয়ামত, রহমত, মহান আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্যে হাযির হওয়া, ঊর্ধ্বলোক সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান অর্জন, অদৃশ্য ভাগ্য সম্পর্কে বিশেষ জ্ঞান লাভ, ইহকাল ও পরকাল সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন, স্বচক্ষে জান্নাত-জাহান্নাম অবলোকন, পূর্ববর্তী নবী-
রাসূলগণের সাথে সাক্ষাত্ ও পরিচিত হওয়া, সুবিশাল নভোমণ্ডল পরিভ্রমণ করা, এবং সর্বোপরি এটিকে একটি অনন্য মু‘জিযা হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা। এই রাত্রিতে উম্মতে মুহাম্মাদীর প্রতি ৫ ওয়াক্তের নামাজ ফরজ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এর জীবনের সবচেয়ে আলোড়ন সৃষ্টিকারী ঘটনা ‘মি‘রাজ’। মি‘রাজ ইসলামের ইতিহাসে এমনকি পুরা নবুওয়াতের ইতিহাসেও এক অবিস্মরণীয় ঘটনা।
কারণ সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব ও রাসূল হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম ছাড়া অন্য কোন নবী এই পরম সৌভাগ্য লাভ করতে পারেননি। আর এ কারণেই হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম সর্ব শ্রেষ্ঠ নবী। এ মি‘রাজ রজনীতেই মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ইবাদত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরয হয়। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও যথাযথ মর্যাদায় মুসলিম জাহানের সঙ্গে এদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরাও আজ পবিত্র শবে মেরাজ পালন করবেন।
যে দোয়া পড়লে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হবে না
জীবন-মৃত্যুর মালিক আল্লাহ তাআলা। জন্মের পর মানুষ মৃত্যুবরণ করবে এটাই সুনিশ্চিত এবং আল্লাহর বিধান। অনেক মানুষই বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মারা যায়। তেমনি আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ করাও একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।
হাদিসে পাকে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকতে তাঁর উম্মতকে শিখিয়েছেন দোয়া ও আমল।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আগুনে দগ্ধ হওয়াসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে থাকতে এ দোয়াটি পড়তেন। যারা এ দোয়াটি নিয়মিত পড়বে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে আগুনে দগ্ধ হওয়াসহ অনেক দুর্ঘটনা থেকে হেফাজত করবেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আবুল ইয়াসার রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ التَّرَدِّي، وَالْهَدْمِ، وَالْغَرَقِ، وَالْحَرِيقِ،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ يَتَخَبَّطَنِي الشَّيْطَانُ عِنْدَ الْمَوْتِ،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ فِي سَبِيلِكَ مُدْبِرًا،
وَأَعُوذُ بِكَ أَنْ أَمُوتَ لَدِيغًا
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাত তারাদ্দি ওয়াল হাদমি ওয়াল গারাক্বি ওয়াল হারিক্বি। ওয়া আউজুবিকা আইঁ ইয়াতাখাব্বাত্বানিশ শায়ত্বানু ইংদাল মাওতি, ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা ফি সাবিলিকা মুদবিরা। ওয়া আউজুবিকা আন আমুতা লাদিগা। (ইবনে মাজাহ)
অর্থ : হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
– উঁচু স্থান থেকে পড়ে এবং
– কোনো কিছুর নিচে চাপা পড়ে এবং
– আগুনে পুড়ে যাওয়া এবং পানি ডুবে যাওয়া থেকে। আর আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
– মৃত্যুকালে শয়তান যেন আমাকে বিপথগামী করতে না পারে। এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই-
– আপনার পথে জিহাদ করার সময় যেন পালিয়ে মৃত্যুবরণ না করি।
এবং আপনার কাছে আশ্রয় চাই- – যেন সাপ-বিচ্ছুর মৃত্যুবরণ না করি।
উল্লেখ্য যে, কোথাও আগুন লাগলে তা দেখে উচ্চস্বরে (اَللهُ اَكْبَر) তাসবিহ পড়া এবং আজান দেয়ার মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া জরুরি।
হজরত ইবরাহিম আলালাইহিস সালামের জন্য প্রজ্জ্বলিত করা আগুনের লেলিহান শিখা বন্ধ হতে আল্লাহ তাআলা আগুনকে যে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তাও বেশি বেশি পড়ে আল্লাহর কাছে আগুণ বন্ধ হওয়ার জন্য দোয়া করা-
يَا نَارُ كُونِي بَرْدًا وَسَلَامًا عَلَىٰ إِبْرَاهِيمَ
উচ্চারণ : ‘ইয়া নারু কুনি বারদাও ওয়া সালামান আলা ইবরাহিম।’
অর্থ : হে আগুন! তুমি ইবরাহিমের জন্য শীতল ও নিরাপদ হয়ে যাও।’
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আগুনে মৃত্যুবরণ করা থেকে বিরত থাকাসহ বিপদ-আপদ ও দুর্ঘটনা থেকে হেফাজত থাকতে উল্লেখিত দোয়াটি বেশি বেশি পড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।