আঙ্কারা হাতছাড়া হলেও সারাদেশে এরদোগানের প্রত্যাশিত জয়
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১:৪৭ পূর্বাহ্ণমোস্তফা ফয়সাল।।
তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে রোববার। এই নির্বাচনে সারাদেশে এরদোগানের প্রত্যাশিত জয় হলেও হাতছাড়া হয়েছে রাজধানী আঙ্কারা।
এই নির্বাচনে তুরস্কের সকল সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, কাউন্সিলর, গ্রাম সরকারসহ সমগ্র তুরস্কে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের মাধ্যমে প্রায় ৫ লক্ষাধিক জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এরদোগানের একে পার্টি ও জাতীয়তাবাদী দল এম এইচপি কিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করেছে।
রোববারের স্থানীয় নির্বাচনে সারাদেশে ৪৪.৯৫% ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে এরদোগানের একে পার্টি। আতার্তুকের সিএইচপি ৩০.২৫% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থান করলেও তারা রাজধানী আঙ্কারায় একে পার্টিকে পরাজিত করে চমক লাগিয়ে দিয়েছে।
এদিন সর্বমোট ৩০টি সিটি কর্পোরেশন, ৫১টি জেলা পৌরসভা, ৩৩৪টি সিটি কর্পোরেশন অধিনস্থ পৌরসভা এবং ৯৭৩ টি উপজেলা পৌরসভায় (বাংলাদেশের ইউনিয়নের মত) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
তুরস্কে মোট ৩০টি সিটি কর্পোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি সিটিতে জয়ী হয়ে এরদোগানের একে পার্টি। বিজয়ী সিটিগুলো হলো-ইস্তানবুল, কোনিয়া, বুরসা, কায়সেরি, উরফা, গাজি আনতেপ, ট্রাবজন, এরজুরুম, বালিকসেহির, দেনিজলি, কাহরামান মারাশ, খোজায়েলি, মালাতিয়া, ওর্দু, সাকারিয়া ও সামসুন।
এছাড়া সিএইচপি (আতার্তুক) জয়ী হয় ১০টি সিটিতে। জয়ী হওয়া সিটিগুলো হলো- আঙ্কারা, ইজমির, আনতালিয়া, এসকেসেহির, আদানা, মার্সিন, মুলা, আইদিন,হাতায় ও টেকিরদাগ।
এমএইচপি (জাতীয়তাবাদী) জয় পায় মানিসা সিটিতে।
এছাড়া এইচডিপি (কুর্দিশ): ৩ টি সিটিতে (কুর্দিশ অধ্যুষিত ভান, দিয়ারবাকির ও মার্দিন) জয় পায়।
জেলা পর্যায়ের পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫১টিতে। এর মধ্যে- একে পার্টি: ২৪ টি, সিএইচপি: ১০ টি, এমএইচপি: ১১ টি, এইচডিপি: ৪ টি ও অন্যান্য: ২ টিতে জয়ী হয়।
এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে মোট পৌরসভা ৯৭৩টিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর মধ্যে-একে পার্টি: ৫৩৮টি, সিএইচপি: ১৮৯টি, এমএইচপি: ১৪৯টি, এইচডিপি: ৫০টি, ইয়ি পার্টি: ১৯টি, সাদেত পার্টি: ৮টি ও অন্যান্য: ২৩টি।
ইউনিয়ন সমমানের পৌরসভা (বেলদে): ৩৩৪টির মধ্যে- একে পার্টিঃ ২০০টি, সিএইচপিঃ ৩৩টি, এমএইচপিঃ ৭৫টি, এইচডিপিঃ ১১টি, ইয়ি পার্টিঃ ৩ টি, সাদাত পার্টিঃ ৫টি ও অন্যান্যঃ ৪টি।
সামগ্রিক ফলাফলে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রাপ্ত ভোট হলো- একে পার্টি- ৪৪.৯৫%, সিএইচপি- ৩০.২৫%, এমএইচপি- ৬.৮০%, এইচডিপি- ৪.০১%, ইয়ি পার্টি- ৭.৩৯%, সাদাত পার্টি- ২.৪৭%। একে পার্টি সিটি নির্বাচনে আঙ্কারা এবং আনতালিয়ার মত গুরুত্বপূর্ণ সিটিতে পরাজিত হলেও দেশের সামগ্রিক ফলাফলে তারা অতীতের চেয়ে বেশি ভোট পেয়েছে।
যেমন আঙ্কারায় একে পার্টি সিটি নির্বাচনে পরাজিত হলেও আঙ্কারা সিটির অধিনস্থ ২৫টি পৌরসভার মধ্য একে পার্টি ১৯টি, জাতীয়তাবাদী এমএইচপি ৩ টি এবং আতার্তুকের সিএইচপি মাত্র ৩টিতে বিজয়ী হয়েছে। সিএইচপি আঙ্কারা সিটি নির্বাচনে ৫০.৬২% ভোট পেলেও পৌরসভাগুলোতে মাত্র ৩৬.৭৯% ভোট পেয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে শুধুমাত্র আঙ্কারার বহিরাগত প্রার্থীকে দাঁড় করানোর কারণেই আঙ্কারায় একে পার্টি পরাজিত হয়েছে।
এই নির্বাচনে কুর্দিশ দল এইচডিপির ভোট অনেক বেশি কমে গেছে, সে তুলনায় সাদাত পার্টির ভোট কিছুটা বেড়েছে। কুর্দিশ জাতীয়তাবাদী দল এইচডিপি আঙ্কারায় ও ইস্তানবুলে তাদের প্রার্থী না দিয়ে আতার্তুকের সিএইচপিকে সমর্থন দেয়ায় এরদোগানের একে পার্টিকে অনেক বেশি সমস্যা মোকাবেলা করতে হলো। সাদাত পার্টির ভোট বাড়ার অন্যতম কারণ হলো কুর্দিশ এইচডিপির ৮২ জনপ্রার্থী কুর্দিশ অধ্যুষিত এলাকায় পৌরসভা ও কাউন্সিলর হিসেবে সাদাত পার্টি থেকে নির্বাচন করেছে।
তবে তাদের ভোট বাড়লেও পৌরসভা ও ইউনিয়ন সমমানের পৌরসভায় তাদের বিজয়ী জনপ্রতিনিধিদের সংখ্যা যেখানে ২০১৪ সালে ছিলো ২৬ জন, এই নির্বাচনে সেটা কমে ১৩ জন হয়েছে।
জাতীয়তাবাদী দল এমএইচপির ভোট কমলেও একে পার্টির সাথে জোট থাকায় তারা আগের চেয়ে জেলা পৌরসভা ও প্রচুর পরিমানে উপজেলা পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছে। তবে নব গঠিত ইয়ি পার্টির তুলনামুলক ভরাডুবি হয়েছে। যেখানে সংসদে তাদের ৫০ জন এমপি রয়েছে সেখানে তারা মাত্র ২২টি পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছে।
নির্বাচনের পূর্বে জরিপগুলো আঙ্কারায় পরাজয়ের পাশাপাশি সারাদেশে এরদোগানের একে পার্টির যে সম্ভাব্য ধ্বসের কথা বলেছিল বাস্তবে তুরষ্কের সাধারণ জনগণ সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে এরদোগানকে অনেক বেশি ভোট দিয়ে বিজয়ী করেছে। আঙ্কারায় নিয়ে এরদোগানের আক্ষেপ থাকলেও ভোট বৃদ্ধির দৃষ্টিকোণ থেকে সামনের দিনগুলোর জন্য একে পার্টি কিছুটা হলেও স্বস্তিতে থাকবে।
তবে সামনের দিনগুলোতে সকল বিরোধী দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ জোটকে যে একে পার্টিকে অনেক সাবধানে মোকাবেলা করতে হবে সে সংকেত এই নির্বাচনে ইতিমধ্যে তারা পেয়ে গেছে।
লেখকঃ পিএইচডি গবেষক, গাজি ইউনিভার্সিটি, আঙ্কারা, তুরস্ক