নির্বাহী কমিটির সভা নিয়ে চাপে বিএনপি

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০১ এপ্রিল ২০১৯, ৯:১৮ পূর্বাহ্ণখালিদ হোসেন।।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপির নির্বাহী কমিটির সভা আয়োজনের দাবি ক্রমশই প্রবল হচ্ছে। দলীয় ফোরামের ভেতরে ও বাইরে এ বিষয়ে কথা বলছেন অনেকে। ফলে বিষয়টি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারণীরা বেশ চাপের মধ্যে আছেন।
অনেকে বিষয়টি সম্পর্কে না জানলেও যারা জানেন তারা বলছেন, এ বিষয়ে কাজ চলছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন। দল সে সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
সম্প্রতি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এক আলোচনা সভায় নির্বাহী কমিটির সভা ডাকার দাবি জানান। ওই অনুষ্ঠানে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
অপর এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের উপস্থিতিতে ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া একদাশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার তীব্র সমালোচনা করেন।
গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের এমন বক্তব্যে দলের ভেতরে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, তারা নির্দিষ্ট ফোরামের বাইরে যেয়ে এ ধরনের কথা বলে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করছেন। আবার কেউ কেউ বলছেন, নীতিগত বিষয় নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলে নেতারা বিশৃঙ্খলাকে উস্কে দিচ্ছেন।
তবে দলীয় ফোরামের বাইরে গিয়ে নীতিগত বিষয়ে বক্তব্য দিয়ে কার লাভ হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির বিশেষ সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।
জোরালো দাবির পরও কেন নির্বাহী কমিটির সভা হচ্ছে না তা জানতে চাইলে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘নির্বাহী কমিটির সভা হচ্ছে না কেন- এটা সর্বোচ্চ পর্যায়ের নীতিনির্ধারকরা বলতে পারবেন। কিন্তু আমার মতে হওয়া উচিত। এটা হলে আমার মতো কর্মীদের মনের ভারটা হালকা হয়। আমরা কথা বলতে পারি, ওনাদের কথাও শুনতে পারি। কিন্তু এখন বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন সব আলোচনা হচ্ছে। বিচ্ছিন্ন আলোচনাগুলো এক জায়গায় করে একটা সাংগঠনিক শক্তিতে রূপ দেয়ার জন্যই তো আমার এ প্রস্তাবনা।’
সভা করতে বাধা কোথায়- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাধাটা কোথায় তা জানি না। তবে স্থায়ী কমিটির সদস্যরা যখন নিজেরা বসেন, তখন যদি এটা নিয়ে তাগিদ অনুভব করেন যে, নেতাকর্মীরা বার বার বলছেন এ বিষয়ে, কী সিদ্ধান্ত নেয়া যায়? যদি আলোচনা হয় তাহলে সেখানে একটা সিদ্ধান্ত আসতে পারে। আলোচনা হচ্ছে কিনা- সেটাও তো জানতে পারছি না।’
আপনি তো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে এ বিষয়ে প্রস্তাব রেখেছেন; রাখলে ওনারা কী বলছেন? জবাবে আলাল বলেন, ‘ওনারা বলেছেন, হ্যাঁ এটার প্রয়োজনীয়তা আমরা অনুভব করছি। আরও প্রায় এক মাস আগে আমি এ প্রস্তাব দিয়েছি।’
এদিকে দলের একাধিক সূত্র জানায়, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে। তাদের অনুপস্থিতিতে নির্বাহী কমিটির সভা হলে বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সাধারণ নেতাকর্মীরা বিষয়টি ভালোভাবে নিতে নাও পারেন। সে সময় পরিস্থিতি সামাল দেয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এ কারণে নির্বাহী কমিটির সভা করতে সিনিয়র নেতারা সাহস পাচ্ছেন না।
একই সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জোরালো কর্মসূচি না থাকা, ঐক্যফ্রন্ট এবং ২০ দলের যে সাত দফা দাবি ছিল সেসব পূরণ না করে নির্বাচনে অংশ নেয়া, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির মনোনয়ন প্রক্রিয়া, মনোনয়ন পেয়েও নির্বাচনী মাঠে না থাকাসহ নেতাকর্মীদের মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সব প্রশ্ন একই সঙ্গে উদয় হলে কী পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে, সে বিষয়ে সিনিয়র নেতারা আঁচ করতে পারছেন বলেই তারা সভার কথা ভাবছেন না। এটা কৌশলগত কারণও। উত্তপ্ত পরিস্থিতি ঠান্ডা করতে একটু সময় নিতে হয়। পরিবেশ-পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে নিশ্চয়ই নির্বাহী কমিটির সভা ডাকা হবে- এমনটি মনে করছেন কেউ কেউ।
অপর এক সূত্রের দাবি, বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পর মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সবচেয়ে জনপ্রিয়। তার নামে কমিটি বা মনোনয়ন বাণিজ্যসহ কোনো প্রকার অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এখন পর্যন্ত নেই। যাদের নামে এসব অভিযোগ রয়েছে তারা সম্মিলিতভাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে কোণঠাসা করে মহাসচিব পরিবর্তনের চেষ্টা করছেন।
এদিকে দলের মধ্যে নির্বাহী কমিটির সভার যে দাবি উঠেছে তা জানেন না স্থায়ী কমিটির দুই সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান ও ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার।
তবে স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছেন। উনিই সিদ্ধান্ত নেবেন।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বলেন, বিষয়টি নিয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিদ্ধান্ত নেবেন।