‘যারা ৭ই মার্চের ভাষণকে নিষিদ্ধ করেছিল, তারা আস্তাকুঁড়ে যাবে’

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ মার্চ ২০১৯, ৭:২৩ অপরাহ্ণঢাকা: আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ৭ই মার্চের ভাষণ শুধু বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ না, সারাবিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের প্রেরণা হিসেবে যুগ যুগ ধরে ঠিকে রইবে। আর যারা এটাকে একসময় নিষিদ্ধ করেছিল তারা ধীরে ধীরে আস্তাকুঁড়ের দিকেই চলে যাবে, নিঃশেষ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশের মানুষকে যারা ভালবাসবে।
বৃহস্পতিবার (৭মার্চ) বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষণের ওপর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব বলেন। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় আওয়ামী লীগ।
ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ভাষণের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে হত্যার পরে, প্রথম মোশতাক বেঈমানি করে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে দু’মাসও ক্ষমতায় থাকতে পারল না। এরপর আসল জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশে এই ভাষণ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল, বঙ্গবন্ধুর ছবিও নিষিদ্ধ ছিল।
‘প্রশ্ন হচ্ছে, এটা তাহলে কেন নিষিদ্ধ ছিল?’ যে ভাষণ পাকিস্তানিরা পছন্দ করে নাই, যে ভাষণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পছন্দ ছিল না বলেই জিয়াউর রহমান এই ভাষণ নিষিদ্ধ করে দিয়েছিল। আর সেটাই অনুসরণ করে গেছে একের পর এক মিলিটারি ডিকটেটর যারা এসেছিল বা যারা ক্ষমতা ওই ক্যান্টনমেন্টে বন্দি করে রেখেছিল, বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি আরও বলেন, কিন্তু নিষিদ্ধ করলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কিন্তু পিছিয়ে থাকেনি। সারা বাংলাদেশে ৭ই মার্চ আসলে গ্রামে-গঞ্জে, হাটে-বাজারে, সব জায়গায় কিন্তু এই ভাষণ বাজতে শুরু হল। এই ভাষণ বাজাতে যেয়ে আওয়ামী লীগের বহু নেতাকর্মী জীবন পর্যন্তও দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বারবার একটা প্রশ্ন রাখি কেউ উত্তর দিতে পারে না। বোধহয় পারবেও না। পৃথিবীর বহু দেশে বহু নেতারা ভাষণ দিয়েছে। আড়াই হাজার বছরের ভাষণ নিয়ে গবেষণা হয়েছে, সেখানেও এই ভাষণটাই হয়ে গেছে সবথেকে সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। অথচ এই ভাষণ ৭৫’র পর দীর্ঘদিন নিষিদ্ধ। তারপরও এই ভাষণ যতবার বাজানো হয়েছে, পৃথিবীর কোন শ্রেষ্ঠ ভাষণ যতই থাকনা কেন, কোন ভাষণ কিন্তু এতো বার বাজানো হয় নাই। এটা কতদিন বাজানো হয়েছে, কত ঘণ্টা বাজানো হয়েছে, কত মিনিট বাজানো হয়েছে, কেউ হিসাব করে বলতে পারবে না। সারাবিশ্বের ৭মার্চের ভাষণ হচ্ছে একমাত্র ভাষণ, যে ভাষণ এখনো আবেদন রাখে।’
শেখ হাসিনা তার ভাষণে প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতাদের স্মরণ করে বলেন, আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মী এবং সহযোগী সংগঠন, যারা জীবনকে বাজি রেখে বঙ্গবন্ধুর চেতনাকে ধরে রেখেছেন, সেই চেতনা সমগ্র বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ গ্রহণ করে নিয়েছে। তাদের মাঝে যে চেতনা এসেছে, তার জন্য এই আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর মহান অবদান রয়েছে। আজকে হয়ত তাদের অনেকেই নেই।
সে সকল নেতাকর্মীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমি এই বাংলাদেশে এসেও দেখেছি কত প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে এই ভাষণ (৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণ) বাজাতে হয়েছে। ভাষণের প্রত্যেক লাইন হচ্ছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আমাদের জন্য। প্রতিটি অক্ষর প্রতিটি শব্দ, সেটা যে আমাদের জন্য কত গুরুত্বপূর্ণ, আর এই আবেদন যেন কোনদিন নিঃশেষ হওয়ার নয়।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা পাওয়ার পরও, আমাদেরকে রাজনীতিতে আদর্শবান হওয়ার, দেশপ্রেমে উদ্বদ্ধু হওয়া এবং দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকার করার এক মহান প্রেরণা এই ভাষণের মধ্যে পেতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত আত্মজীবনী, কারাগারে রোজনামচা এবং সিক্রেটস ডকুমেন্টস ইনটেলিজেন্স ব্রাঞ্চ অব বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার যে রিপোর্ট বের করেছি, আমি চাই আওয়ামী লীগের প্রত্যেকটা নেতাকর্মী এটা যদি পড়েন তাহলে আপনাদের আর কোন কিছুর প্রয়োজন হবে না। রাজনীতি শেখা বা ইতিহাস জানার বা দেশকে ভালবাসার ; সব শিক্ষা আপনারা সেখান থেকেই পেতে পারবেন।
কত কষ্ট করে এদেশের মানুষের স্বাধীনতা বঙ্গবন্ধু আমাদের এনে দিয়ে গেছেন, বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, কাজেই ৭ই মার্চের এই ভাষণ; সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণ। এটা শুধু বাংলাদেশের মুক্তিকামী জনগণ না, সারাবিশ্বের মুক্তিকামী জনগণের প্রেরণা হিসাবে যুগ যুগ ধরে এটা ঠিকে রইবে। আর যারা একসময় এটাকে নিষিদ্ধ করেছিল, তারা যেমন আজকে ধীরে ধীরে আস্তাকুঁড়ের দিকে যাকে। তারা আস্তাকুঁড়েই চলে যাবে আর নিঃশেষ হয়ে যাবে। বেঁচে থাকবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা এই বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের মানুষকে ভালবাসবে তারাই।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিম, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বেগম মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জি. মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, শিক্ষা সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, কার্যনির্বাহী সদস্য আনোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত, উত্তরের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
এছাড়াও সভায় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেও সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। যৌথভাবে সভা পরিচালনা করেন দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এবং উপ-প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন।