২ ইস্যুতে মতভেদ, নতুন চেষ্টায় জামায়াত
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:৩৬ অপরাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
নানামুখী চাপে চরম বেকায়দায় পড়েছে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতা করে বিতর্কে থাকা রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামী। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানোর পর আদালতের রায়েও দলটি নিষিদ্ধ হয়ে যেতে পারে।
আর এ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে দলের সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে জামায়াত ভবিষ্যৎ নিয়ে।
২০০১ সালে চারদলীয় জোটের ভূমিধস জয়ে প্রথমবারের মতো ক্ষমতার অংশীদার হওয়ার সুযোগ আসে জামায়াতের সামনে। সরকারে যাওয়া উচিত হবে কি-না, গেলে মন্ত্রিসভায় যাবেন কারা, তা নিয়ে সেসময় দলটির ভেতরে বিতর্ক দেখা দেয়।
শেষ পর্যন্ত মতিউর রহমান নিজামী ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ দলের অনেকের আপত্তি উপেক্ষা করে মন্ত্রিসভায় যোগ দেন। জরুরি অবস্থার সময়েও যুদ্ধাপরাধের বিচারের ইস্যুটি নতুন করে সামনে আসে। এরপর পানি অনেক দূর গড়িয়েছে।
জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় পাঁচ নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। আরও দুই নেতার ফাঁসির রায় হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। একজন ভোগ করছেন আমৃত্যু কারাদণ্ড। যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালে আন্দোলনে নেমেও সফল হতে পারেনি জামায়াত।
তবে মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা আজও তাড়া করছে দলটিকে। এটিসহ আরো কয়েকটি ইস্যুতে জামায়াতে তৈরি হয়েছে বড় ধরনের অস্থিরতা। এর সর্বশেষ সংযোজন হিসেবেই দলটির সহকারি সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক পদত্যাগ করেছেন। এই পরিস্থিতিতে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। সেখানে নতুন দল গঠনে দলের সিদ্ধান্তের কথা বলা হয়েছে। এজন্য সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
চিঠির ভাষ্য অনুযায়ী, গত ১৪ই জানুয়ারি দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের একটি অধিবেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। ওই প্রস্তাব কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার বিবেচনা জন্য পাঠানো হয়। কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সুনির্দিষ্ট কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। সেখানে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তোলার জন্য চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়নের জন্য দলের সেক্রেটারির নেতৃত্বে ৫ সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে।
চিঠিতে বলা হয়, সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত দলের আমীর, সেত্রেুটারি, অঞ্চল দায়িত্বশীল, জেলা ও মহানগর আমীরের মাধ্যমে যথা সময়ে সরাসরি জানানো হবে। এর বাইরে কারও আবেদন-নিবেদন ও অনুরোধে নেতা-কর্মীরা যাতে সাড়া না দেয় সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলা হয় দলের পক্ষ থেকে।
যে ২ ইস্যুতে মতভেদ: মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়া এবং নতুন নামে দল গঠন নিয়েই মূলত জামায়াতে মতভেদ দেখা দিয়েছে। ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক গতকাল পদত্যাগপত্রে দাবি করেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে তিনি জামায়াতকে একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে তার সেই পরামর্শ উপেক্ষা করা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াতের নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানও কারাগার থেকে লেখা এক চিঠিতে দলে সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছিলেন। দীর্ঘ ওই চিঠিতে বিশ্ব রাজনীতির প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে কামারুজ্জামান লিখেছিলেন, প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যৎ কী? এক. যা হবার হবে। আমরা যেমন আছি তেমনি থাকবো (বতমানে এই কৌশলই অবলম্বন করা হয়েছে)।
দুই. পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জামায়াত সিদ্ধান্ত নিয়ে পেছন থেকে একটি নতুন সংগঠন গড়ে তুলবে। এই সংগঠন প্রজ্ঞা ও দৃঢ়তার সঙ্গে ধর্মহীন শক্তির মোকাবিলা করবে। তিন. আমাদের যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে তারা জামায়াতের নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়াবো এবং সম্পূর্ন নতুন লোকদের হাতে জামায়াতকে ছেড়ে দেবো।
এদিকে প্রথমবারের মতো জামায়াতে ইসলামীকে নতুন অবয়বে আনার প্রস্তাব করেছেন দলটির কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার সদস্যরা। দেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ও গত ১০ বছরের পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে শূরা সদস্যরা এ প্রস্তাব করেন। দলের বর্তমান সংগঠন ও কাঠামো ঠিক রেখে নতুন নামে নতুন সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পুরো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদকে।
এই সংগঠনের নাম, কাঠামো, ধরন নিয়ে এ কমিটি কাজ শুরু করেছে। ছড়িয়ে থাকা জামায়াত ও ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের নতুন সংগঠনে যুক্ত করা হবে। এ ছাড়া অন্যান্য দল থেকে আগ্রহী হলে তাদেরও যুক্ত করা হবে।