শুভ জন্মদিন শাবিপ্রবি

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১২:২৬ অপরাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম ডেস্ক।।
আজ ১৩ই ফেব্রুয়ারি পহেলা ফাল্গুন, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৯১ সালের এই দিনে সিলেট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দুরে ৩২০ একর জায়গায় ৩টি বিভাগে ১২০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। আজ ২৮তম বছর পেরিয়ে ২৯তম বছরে পদার্পণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। বর্তমানে ২৮টি বিভাগ এবং ২টি ইন্সটিটিউশনের অধিনে প্রায় সাড়ে পাঁচশত শিক্ষক এবং ১২ হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ১৯৮৬ সালের ২৫ আগস্ট ভিত্তি প্রস্তর স্থাপিত হয়। এটি দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চালের শীর্ষ বিদ্যাপিঠ। বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম আকর্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রধান ফটক থেকে ক্যাম্পাসে আসার ‘এককিলো রোড’, নিউজিল্যান্ড খ্যাত ছোট ছোট পাহাড়ের টিলা, পাহাড়ের পাদ দেশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হলগুলো, পাহাড়ের উপরের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবোর্চ্চ স্থানে অবস্থিত শহীদ মিনার।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল, মুক্তিযুদ্ধের ভাষ্কর্য ‘চেতনা-৭১’, নান্দনিক সুবিশাল ত্রিকোণাকার কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন।
শাবিপ্রবি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও সুনাম ছড়িয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও গবেষণাসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সফলতার পাশাপাশি পেয়েছে দেশী ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে (আইসিটি) অবদান স্বরুপ ২০১৭ সালে দেশের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ‘ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড-২০১৭’ পুরষ্কারে ভূষিত হয়েছে শাবিপ্রবি। ২০১৬ সালে স্পেনের ‘সিমাগো রিসার্চ গ্রুপ’ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্কপাস’ থেকে প্রকাশিত এক তালিকায় বিশ্বে সম্মিলিত র্যাংকিংয় ৬১০তম এবং দেশে প্রথম অবস্থানে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বিভিন্ন আবিষ্কার এবং চালুর ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়টি অগ্রপথিকের ভূমিকা পালন করছে। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পযার্য়ে প্রথম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, পূর্ণ ক্যাম্পাস ওয়াইফাই সেবার আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গাতে সিসি ক্যামেরার ব্যবহার, নিজস্ব ডোমেইনে ই-মেইল চালু, প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলা ভাষার সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, অনলাইনে টান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ডসহ অসংখ্য উদ্ভাবনী রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের। সম্প্রতি পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমীন হকের নেতৃত্বে একদল গবেষক রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যান্সার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন, যা তাক লাগিয়ে দিয়েছে পুরো বিশ্বকে।
এছাড়া দেশি-বিদেশী বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থীরা সফলতার সাথে অর্জন করেছে সম্মানজনক স্থান। গতবছরের ১০ নভেম্বর কম্পিউটার প্রোগ্রামিংয়ের সবচেয়ে মর্যাদাকর ইভেন্ট ইন্টারন্যাশনাল কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং কনটেস্ট (আইসিপিসি) প্রতিযোগিতায় ঢাকা সাইটে ৭ম বারের মত চ্যাম্পিয়ন হয় বিশ্ববিদ্যালয়টি। এবারের দলটি চলতি বছর ৩১ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্তুগালে অনুষ্ঠিতব্য প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করবে।
গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত ২৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাবিপ্রবির দল সাস্ট অলিক। আবার গত বছর মাঝামাঝি সময়ে খাগড়াছড়ির পাহাড়ী অঞ্চলে নিচ থেকে উপরে বিদ্যুৎ ছাড়া বিশেষ পদ্ধতিতে পানি তোলার যন্ত্র আবিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিইই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তাছাড়া মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে রক্ত সংগ্রহের অ্যাপস তৈরি করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। চলতি বছরের শুরুতে পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ পদক অর্জন করেছেন পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের পাঁচ শিক্ষার্থী।
এছাড়া আগামী ১৫ থেকে ১৭ মার্চ ভারতের উত্তরাখন্ডে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি (আইআইটি) রুর্কি আয়োজিত অ্যানুয়াল টেক ফেস্ট ‘কগনিজেন্স’ এ বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে রোবটিক্স টিম ‘সাস্ট ক্র্যাকারনাট’।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শাবিপ্রবি পরিবারের সবাইকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি বলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারাবাহিক সফলতাকে ধরে রাখতে হলে সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা বিগত দিনগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা-গবেষণার দিকে গুরুত্ব দিয়েছি সামনে এই বিষয়গুলোতে আরো বেশি পরিমাণে কাজ করা হবে।
এদিকে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় প্রশাসনিক ভবন-২ এর সামনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন, পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ, সকাল ১০টায় প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের অংশগ্রহণে আনন্দ র্যালি এবং পরবর্তীতে মুক্তমঞ্চে কেক কাটা হবে।