‘ডাকাতের এলাকা’ কোম্পানীগঞ্জের ১২ কিলোমিটার সড়ক
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মার্চ ২০১৯, ১১:২৬ পূর্বাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ মহাসড়কের তেলিখাল-বর্ণী-গৌড়িনগরের প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়ক। এই সড়কে সন্ধ্যার পর থেকে ভোর পর্যন্ত প্রতিদিন ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাতরা লোকজনকে মারধর করে সঙ্গে থাকা জিনিসপত্র হাতিয়ে নিচ্ছে।
নিয়মিত ডাকাতির কারণে সন্ধ্যা নামার পরপরই এই সড়কে যাত্রীবাহী যানচলাচল কমে যাচ্ছে। এতে দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। আর এসব ঘটনা নিয়মিত ঘটলেও অন্ধকারে রয়েছে পুলিশ।
সর্বশেষ গত বুধবার সন্ধ্যায় তেলিখাল এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়েন তেলিখাল গ্রামের আমিনুর রহমান এবং ছাদিক মিয়া। ডাকাতরা ধারাল অস্ত্র দিয়ে এলোপাতারি কুপিয়ে তাদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইফোনসহ সব ছিনিয়ে নেয়। বর্তমানে তারা সিলেট এমএজি ওসমানি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ঘটনার মাত্র দুই ঘণ্টা পর বর্ণী এলাকায় ডাকাতের কবলে পড়েন ঢোলাখাল গ্রামের আরেক যুবক। তার সবকিছু নিয়ে গেলেও তাকে আঘাত করেনি ডাকাতরা। এর আগে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ডাকাতের কবলে পড়ে সব হারিয়ে গুরুতর আহত হন টুকেরবাজারের ব্যবসায়ী নবী হোসেন।
তবে কোম্পানীগঞ্জ পুলিশ বলছে, তিনটি মোবাইল টহল টিম থাকার পর নিয়মিত ডাকাতি নয় এই রোডে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বর্ণী এলাকা এমনিতেই খারাপ। এরমধ্যে আবার প্রায় ১২ কিলোমিটার রাস্তা ভাঙাচোরা। এসব কারণে নিয়মিত চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলেও পুলিশ ভাঙা রাস্তার কারণে সময়মত স্পটে পৌঁছাতে পারছে না। এছাড়া অনেকেই ছিনতাই কিংবা চুরির স্বীকার হয়ে থানায় অভিযোগও করেন না। এসব কারণে মূলত এই সড়কে চুরি কিংবা ছিনতাই রোধ সম্ভব হচ্ছে না।
আর সিএনজিচালিত অটোরিকশা চালকরা বলছেন, রাতে পুলিশের টহল টিম থাকলেও তারা একটি স্থানে দাঁড়িয়ে থাকায় অন্যপ্রান্তে ডাকাতরা ডাকাতি করে থাকে। আগে রাস্তার অবস্থা খারাপ থাকলেও বর্তমানে রাস্তা অনেকটা ভালো। পুলিশ নিয়মিত টহল দিলে ডাকাতির ঘটনা অনেকটা কমে যেত বলে তারা দাবি করেন।
তবে স্থানীয়রা বলছেন, ডাকাতির ঘটনা এখানে নিয়মিত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। প্রতিদিন এই সড়কে ২ থেকে ৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। ডাকাতের ভয়ে স্থানীয়রা অতি জরুরি না হলে চলাফেরা করেন না। কোয়ারি সচল থাকায় পাথর ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে ডাকাতরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।
স্থানীয় তেলিখাল গ্রামের শরিফ আহমদ জানান, বর্ণী এলাকায় পুলিশের দুটি টিম থাকলেও তেলিখালের দিকে কেউ থাকে না। মাঝে মধ্যে যদি এইদিকে পুলিশের টহল আসে তখন তেলিখাল এলাকায় কোনো ডাকাতি হয় না।
স্থানীয় আরেকটি সূত্র জানায়, গড়ে প্রতিমাসে এই সড়কে ৫০ থেকে ৬০টি ছোট বড় ডাকাতির ঘটনা ঘটে। কিন্তু গত তিন মাসে রহস্যজনক কারণে ডাকাতদের বিরুদ্ধে একটি মামলা ছাড়া আর কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর রহস্যজনক ভূমিকার জন্য দিনদিন ডাকাতির মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছিঁচকে চোরও ডাকাতি করতে উৎসাহী হয়ে ডাকাতের খাতায় নাম লেখাচ্ছে।
এ বিষয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম বলেন, তেলিখাল-বণী-গৌড়িনগর সড়কে যে ঘটনা ঘটে সেগুলো ডাকাতি নয়। সেগুলো চুরি বা ছিনতাই। এই সড়কটি অতিরিক্ত ভাঙাচোরার কারণে গাড়িগুলো ধীরে ধীরে চলে। এসব কারণে চোরেরা সড়কে গাড়ির অবস্থান সহজে চিহ্নিত করতে পারে। এমনকি তারা আমাদের গাড়িও লক্ষ্য করে। পরে সুযোগ বুঝে সবকিছু হাতিয়ে নেয়। আর রাস্তা ভাঙার কারণে আমরা সময়মতো স্পটে পৌঁছাতে পারি না।
ওসি যাত্রীদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, রাত ১০টার পর কেউ যদি চলাচল করেন তাহলে যেন তাদের মোবাইল টিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাহলে তারা নিরাপদে পৌঁছে দেবেন। কারণ চুরি, ছিনতাই রোধে তাদের তিনটি টিম মাঠে কাজ করছে।