Sunday, 26 March, 2023 খ্রীষ্টাব্দ | ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ |




ড. মােমেনের ১০০দিন: কূটনীতির বৈশ্বিক হাওয়া তুঙ্গে

 

সিলেট: জীবনে প্রথমবারের মতাে জাতীয় সংসদ সদস্য হয়ে সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্তির ১০০ দিন পূরণ করলেন ঝানু কূটনীতিবিদ, অর্থনীতির খ্যাতিমান অধ্যাপক ড. এ কে আবদুল মােমেন।

এই ১০০ দিনের সফলতা এবং অর্জন মোটেই কম নয়। কূটনীতির বৈশ্বিক হাওয়া এখন তুঙ্গে বলা যায়।
এগিয়ে যাবার পথে যদিও ছিলো অনেক বাধা বিপত্তি আর সীমাবদ্ধতা তারপরও অল্প সময়ের মধ্যে জার্মানি ও আরব আমিরাতের সাথে ৫টি চুক্তি ছাড়াও ৬ বছর ধরে বন্ধ থাকা সংযুক্ত আরব আমিরাতের সাথে শ্রমবাজারের ১৯ ক্যাটাগরিতে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়া।

প্রথমবারের মতাে সৌদি আরবের মন্ত্রী পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকায় এসে বিনিয়ােগের আগ্রহ প্রকাশ করা। যার প্রেক্ষিতে বড় ধরনের বিনিয়ােগের আশা করছে ঢাকা।

সব কিছু মিলিয়ে এই অল্প সময়ে নানা দিক দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ড. মােমেন এর ১০০দিন যথেষ্ট সফল এমনটাই অভিজ্ঞদের অভিমত। যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মােমেন বলছেন, রােহিঙ্গা ইস্যুতে এখনাে দৃশ্যমান সফলতা আসেনি, কথা বার্তা চলছে। সফলতা আসতে কিছুটা সময় লাগবে।
আর খােদ পশ্চিমাদের বিশেষ করে মার্কিনীদের সাথে আলােচনা ইতিবাচক এবং বেশ পজিটিভ, এর সফলতাও আসবে ধীরে ধীরে। ইতোমধ্যে মার্কিন ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরের ৭ই জানুয়ারি যাত্রা শুরু করা সরকারের মূল প্রাধিকার নির্ধারিত হয়েছিল ইকোনমিক ডিপ্লোমেসি বা অর্থনৈতিক কূটনীতি। যার ফোকাসে ছিল ৪টি বিষয়। বাণিজ্য সম্প্রসারণ, বিনিয়ােগ আকর্ষণ, শ্রমবাজারের উন্নয়ন এবং কনস্যুলার সেবার মান বৃদ্ধি।

বিনিয়ােগ বাণিজ্য সম্প্রসারণে সাফল্যঃ
বাণিজ্য সম্প্রসারণ এবং বিনিয়ােগ আকর্ষণে জার্মানী এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে অন্তত ৫টি করে চুক্তি সই হয়েছে। সৌদি আরবের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। দেশটির বড় বিনিয়ােগ আশা করছে ঢাকা।

শ্রমবাজারের দরজা খুললােঃ
৬ বছর ধরে বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ আমিরাতের শ্রমবাজার পুরােপুরি উন্মুক্ত না হলেও ১৯ ক্যাটাগরিতে তারা কর্মী নিতে নতুন করে আগ্রহ দেখিয়েছে। এ সংক্রান্ত ঘােষণাও এসেছে। ভূটান বাংলাদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সদ্য সমাপ্ত সফরে। বিষয় দুটিকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসাবে দেখছেন মন্ত্রীসহ অন্যরা। কনস্যুলার সেবায় খানিক পরিবর্তন এসেছে।

২৪ ঘন্টা হটলাইন চালু সহ প্রবাসি হয়রানি বন্ধে ব্যবস্থাঃ
বিদেশস্থ মিশনগুলােতে সপ্তাহ জুড়ে ২৪ ঘন্টা হট লাইন চালুর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রবাসী হয়রানী বন্ধে সিসিটিভি লাগানাে এবং মনিটরিং জোরদার করা হয়েছে। সেবায় গতি আনতে অ্যাপস চালু হয়েছে। ডকুমেন্ট সত্যায়নে ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার বাড়ানাের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

রােহিঙ্গা ইস্যুতে চীন রাশিয়াকে বুঝাতে ব্যস্তঃ
তবে রােহিঙ্গা ইস্যুতে এখনও চীন ও রাশিয়ার অবস্থানে কোন পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়নি ঢাকাইয়া কূটনীতি। তবে পূর্বের দেশগুলাের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্ককে আরও জোরদারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। ‘লুক ইস্ট’ পলিসি বাস্তবায়নে সরকারের পূর্ণ মনােযােগ রয়েছে। এর অংশ হিসাবে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের বেইজিং সফর এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মস্কো সফরের আমন্ত্রণ এবং প্রস্তাব। আলােচনায় আছে। পশ্চিমাদের সাথে সম্পর্কের উন্নতিঃ পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে সরকারের সম্পর্কে শীতল ভাব বিরাজ করছে নানা কারণে। যদিও বাণিজ্য এবং অন্য রুটিন কার্যক্রমে বেশ গতি রয়েছে। কার্যকর গণতন্ত্র, নির্বাচন, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলাে শক্তিশালীকরণ, মানবাধিকার পরিস্থিতি, মুক্তমতের চর্চা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে পশ্চিমা দুনিয়ার চাওয়া এবং বাংলাদেশের অবস্থান প্রশ্নে ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের উদ্বেগও আছে। এ অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ইউরােপীয় ইউনিয়নসহ পশ্চিমা দুনিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক বাড়াতে কূটনৈতিক চেষ্টার কোন কমতিই ছিল না গত ১০০ দিনে।

ভােট প্রশ্নে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করে বিদেশী উদ্বেগ নিরসনের চেষ্টা হয়েছে। চলতি মাসে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও’র আমন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মােমেন। হােস্ট মাইক পম্পেও’র সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপ-প্রধান, সিনেটর এবং আমেরিকান দাতব্য সংস্থার শীর্ষ পর্যায়ে বৈঠক হয় তার। ওই সব বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে আলােচনা হয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষ্য মতে বৈঠকগুলােতে বাণিজ্য, বিনিয়ােগ, নিরাপত্তা, রােহিঙ্গা সংকট এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ মােকাবিলা, বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরত আনাসহ ইস্যু ভিত্তিক অত্যন্ত কার্যকর এবং ইতিবাচক আলােচনা হয়েছে। যার ফল বাংলাদেশ পাবে ধীরে ধীরে। কিন্তু ওই সফরে যে ৩ টি বিষয় ফোকাস ছিল

(১) বাংলাদেশ প্রশ্নে মার্কিনীদের মনােভাবে পরিবর্তন। বিশেষত: ভােট এবং নতুন সরকারের কার্যক্রম বিষয়ে ইতিবাচক ধারণা দেয়ার পাশাপাশি সম্পর্কের মতভিন্নতা দূর করে দেশটির বাজারে বাংলাদেশী পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকারের সুযােগ সৃষ্টি, বড় বিনিয়ােগ আকর্ষণসহ বাংলাদেশের স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে মার্কিনীদের সমর্থন এবং সহযােগিতা নিশ্চিত করা।

(২) বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরানাে এবং তার বিরুদ্ধে আদালতের দেয়া দণ্ড কার্যকরে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা পাওয়া।

() বাংলাদেশ যে মার্কিন নাগরিকসহ সব বিদেশীদের জন্য নিরাপদ এবং এখানে যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের জিরাে টলারেন্স নীতি রয়েছে সেটি বুঝানাে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ বিভিন্ন পর্যায়ে ড. মােমেন এ নিয়ে আলােচনা করেন এবং মার্কিনীদের তরফে অনেক ক্ষেত্রে ইতিবাচক রেসপন্স বা জবাব রয়েছে বলে দাবি করেন।

কিন্তু তিনি ওয়াশিংটনে থাকা অবস্থায় মার্কিন নাগরিকদের জন্য অতি ঝুকিপূর্ণ ৩৫টি দেশকে ‘কে’ ক্যাটাগরিভুক্ত করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট নতুন করে যে ভ্রমণ সতর্কবার্তা জারি করে সেটাতে বাংলাদেশের নাম ওঠে যাওয়া এবং বঙ্গবন্ধুর খুনিকে ফেরাতে প্রশাসনিক চেষ্টা না করে আইনী লড়াই শুরু করতে মার্কিনমন্ত্রীর নতুন পরামর্শ মন্ত্রীর সফরের অর্জনকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দেয়। অবশ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিরাপত্তা সতর্কতাকে সামান্য বিষয় হিসবেই দেখছেন। বুধবার সিলেটের টাটার মােটর উদবােধনী অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতাে কিছু নেই- এটা কিছু না। আমাদের মধ্যে ভাল আলােচনা হয়েছে। ড. মােমেন বলেন কেবল পূর্ব নয়, পশ্চিমা দুনিয়ার কাছের এবং দূরের সবার সঙ্গেই বাংলাদেশের ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে। -দৈনিকসিলেটডটকম

 

Developed by :