সিলেটে স্কুলছাত্রী পপি আত্মহত্যায় প্ররোচিত আসামীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মে ২০১৯, ১:৩০ অপরাহ্ণবার্তা২৪ ডেস্ক: পথেঘাটে হুমকি-ধমকি টানাহেঁচড়া, তাও একবার নয় বারবার। আইনের আশ্রয় নিয়েও রক্ষা হয়নি তার। বখাটেরা একদিন তুলে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে কিশোরী স্কুলছাত্রী পপিকে (১৭)। তারপর অপমান যন্ত্রণার হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যার পথটাকেই বেছে নিতে বাধ্য হয়েছিল সে।
তবে তার আত্মহত্যার পিছনে যারা দায়ী, সেই পাষাণ্ডদের একজন ছাড়া অন্যরা এখনো বহাল তবিয়তে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ওয়ারেন্ট জারির পরও অজ্ঞাত কারনে পুলিশ তাদের গ্রেফতার করছেনা। তারা এখন পপির মা বোন এবং ভাইকেও নানাভাবে হুমকি দিয়েই যাচ্ছে।
পপির পুরো নাম দিলরুবা আক্তার পপি। নগরীর ভাতালিয়া এলাকার দেলোয়ার হোসেনের কন্যা। ২০১৮ সালে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে দায়েরকৃত মামলায় তার পিতা জেলের ঘানি টানছেন দীর্ঘদিন ধরে। এই সুযোগে যাদের সাথে বিরোধ, তার সেই চাচাতো ভাই ও তাদের সঙ্গি-সাথিরা নানাভাবে পপি, তার মা ও ভাইকে মৌখিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছিল। এমনকি ফেসবুকেও ছবি দিয়ে তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলে তারা। নানা অপমানজনক স্ট্যাটাস দিয়ে মানসিক নির্যাতন করেই থেমে থাকেনি, বিভিন্ন সময়ে তাকে শারীরিকভাবেও লাঞ্চিত করেছে।
ইভটিজিং ও শারীরিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে তার মা রফা বেগম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। সেই মামলার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, ৯৬ ভাতালিয়ার আং মান্নানের পুত্র আব্দুল শহীদ সেলিম (৪৫) ও তার ভাই ইকবাল হোসেন (৩৫), আব্দুল গণির পুত্র ইব্রাহিম হোসেন (৩৩), আতাউর রহমান মিয়াছাবের পুত্র মাহবুবুর রহমান মবু (৪৫), শেখঘাটের আব্দুল হকের পুত্র আমিন আহমদ (২৮) তার মেয়েকে পথেঘাটে সবসময় বিরক্ত করতো। তাকে তারা বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দিলেও পপি তা প্রত্যাখ্যান করে। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করলে আমি নিজের বাসা তালা দিয়ে বাগবাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতে শুরু করি।
তিনি অভিযোগে উল্লেখ করেন, ২০১৮ সালের ৮ জুনে তিনি তার ভাতালিয়ার বাসায় ফিরে দেখেন, তার মূল্যবান জিনিসপত্র কে বা কারা নিয়ে গেছে। এনিয়ে তিনি কথা বললে আসামীরা এসে মা-মেয়েকে ধর্ষণে উদ্যত হয়। তাদের চিৎকার চেচামেচিতে আশপাশের লোকজন এসে তাদের উদ্ধার করেন। পপি মঈনুন্নেছা বালিকা স্কুল থেকে এবছর (২০১৯) এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। ২০১৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্কুলের সামনের রাস্তায় পপিকে আক্রমন করে ইকবাল ও আমিন। তাদের সাথে ছিল আরো ৭/৮ জন। তারা তাকে অপহরণ করতে চাইলে টানাহেঁচড়ায় তার জামাকাপড় ছিঁড়ে যায় এবং পথচারীরা তাকে উদ্ধার করেন। এরপর থেকে কিশোরী পপি স্কুল ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়্।
শুধু পপি নয়, বখাটেরা তার মা রফা বেগমকেও কুপ্রস্তাব দেয় ও নাজেহাল করে। ঐ বছরের ২৭ অক্টোবর ছোট মেয়ে অপিকে (৮) স্কুল থেকে আনতে গেলে মধুশীদ রাস্তায় তাকেও আসামী ইকবাল আরো ৬/৭ জন সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়। এই হামলায় তিনি ও তার শিশু সন্তান অপি মারাত্মক আহত হন।
এ ব্যাপারে থানায় জিডি করতে গেলে তারা আদালতে মামলাদায়েরের পরামর্শ দেন। পরে রফা বেগম নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাদায়ের করেন।
এত কিছুর পরেও শেষ রক্ষা হয়নি পপির। গত ১৯ জানুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় সে বাসায় ফিরে তার মাকে জানায় যে, আসামী জাকারিয়া, আমিন, ইকবাল, রুমেল ও রুকন তাকে বাগবাড়ি পয়েন্ট থেকে অপহরণ করে একটি অন্ধকার ঘরে নিয়ে পালাক্রমে ধর্ষন করে। পরে একটি লাইটেসে নিয়ে এসে তাকে বাসার সামনে ফেলে যায়।
রফা বেগম তাকে শান্তনা দিয়ে ডাক্তারে নিয়ে যেতে চাইলে পপি পরদিন যাবে বলে বাসায় বসে কান্নাকাটি করতে থাকে। পরদিন ২০ জানুয়ারি বিকেল ৪টায় মেডিকেলে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে ৩টার দিকে তার মা ও বোন তাকে ঘরের ফ্যানের সাথে ঝুলতে দেখতে পান। তাকে নামানোর পর দেখেন সে আর বেঁচে নেই। পরে থানায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগে মামলাদায়ের করলেও সেটি রেকর্ড হয় অপমৃত্যুর মামলা হিসাবে।
এদিকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে দায়ের করা মামলা তদন্ত শেষে প্রথামিক সত্যতার প্রমান পেয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তারা। গত ১১ মার্চ ও ১১ এপ্রিল আদালতে দাখিলকৃত পৃথক দতন্ত প্রতিবেদনে তারা তা উল্লেখ করেছেন। এরপর আসামীদের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্টও জারি করা হয়েছে।
তবে আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ালেও ২ নম্বর আসামী ইকবাল ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে কোতোয়ালি থানার ওসি সেলিম মিয়া বলেন, আসামীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যতদ্রুত সম্ভব তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে বখাটেদের হাত থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখতে পারলেও এখনো তার মা ছোট বোন ও ভাই মোটেও নিরাপদ নয়। ফেসবুকে পপি ও তার পরিবার নিয়ে তারা নানা আজেবাজে মন্তব্যতো করছেই, উল্টো তাদের হুমকি ধমকি দিয়েই যাচ্ছে। রফা বেগম এখন নিজের এবং ছেলে-মেয়ের জীবন নিয়ে আতংকের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সূত্রঃ সিলেটভিউ২৪ডটকম