গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে নৌকা, না বিদ্রোহী?

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৮ মার্চ ২০১৯, ২:১৫ অপরাহ্ণসিলেট অফিস।।
সিলেটের প্রবাসী অধ্যুষিত দু’টি উপজেলা বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ। এ দু’উপজেলা নিয়ে সিলেট-৬ সংসদীয় আসন গঠিত। বিগত সংসদ নির্বাচনে এ দু’উপজেলায় নৌকার প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। কিন্তু আগামী ১৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে এ দু’উপজেলায় নৌকার অবস্থা তেমন ভালো নয়। বিয়ানীবাজারে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খানের সাথে দলের ৩ বিদ্রোহীসহ ৫জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
অপরদিকে গোলাপগঞ্জে দলের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী একক প্রার্থী হলেও দলীয় কোন্দলে তিনিও ধরাশায়ী হওয়ার পথে। দু’উপজেলায় নির্বাচন এখনো পুরোমতে জমেনি। টাকা ছড়াছড়ি হওয়ার আভাস থাকলেও জয়-পরাজয় সমীকরণ জটিল হওয়ায় এখন পর্যন্ত কোন প্রার্থীই হাত খুলেননি।
বুধবার (০৬ মার্চ) সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি দু’দিনের সফরে নির্বাচনী এলাকায় এসেছিলেন। ইসির বিধিনিষেধ থাকায় তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন না। তারপরও দলীয় নেতাকর্মীরা আশাবাদী, এমপি নাহিদ দায়িত্বশীল নেতাদের সাথে মতবিনিময় কিংবা কঠোর নির্দেশনা দিলে এ দু’উপজেলায় নৌকা প্রতীক বিজয়ী করা মোটেও কষ্টসাধ্য হবে না। শেষ পর্যন্ত বিয়ানীবাজারে হয়তো নৌকা জয় বন্দরের দেখা পেলেও গোলাপগঞ্জ নিয়ে অনেকেই সন্দিহান রয়েছেন। এক্ষেত্রে বিগত জাতীয় নির্বাচনের রেশ থাকছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা রাজনীতি, আঞ্চলিকতা ও ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে পুরোদমে প্রচারণা শুরু করেছেন। ভোটাররাও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে মনস্থির করছেন। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগে উন্মুক্ত প্রার্থী থাকায় দলীয় সমর্থকরা সাপোর্ট রদ-বদল করতে দেখা গেছে। প্রথম দিকে বিদ্রোহীদের পক্ষে থাকলেও এখন অনেকেই নৌকায় ভিড়তে শুরু করেছেন। ফলে দিনদিন নৌকার আওয়াজ বাড়তে শুরু করেছে। এজন্য বিয়ানীবাজারে ভোটের দৃশ্যপট প্রায় পাল্টে যাচ্ছে। তবে গোলাপগঞ্জে দলীয় নেতাকর্মীরা ইকবাল চৌধুরীর পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচারণা চালালেও ভেতরে ভেতরে অনৈক্য প্রকট আকার ধারণ করেছে। বিগত সংসদ নির্বাচনে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুৎফুর রহমান নৌকার পক্ষে কাজ করেননি।
অথচ উপজেলা নির্বাচনে তাঁর হাতে নৌকার দায়িত্ব থাকায় মূলধারার আ’লীগ নেতাকর্মী নিরবে বিক্ষুব্ধ হচ্ছেন। যত সময় গড়াচ্ছে উপরের একটি ইশারায় নৌকায় ভাটা পড়ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি দলীয় অনুগতদের সাথে কথা বলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলে যেকোন সময় নৌকার পক্ষে জোয়ার উঠতে পারে।
এদিকে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিতব্য উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠন নির্বাচন বর্জন করেছে। বিয়ানীবাজারে জাতীয় পার্টির দু’নেতা স্বতন্ত্র নির্বাচন করলেও তাদের সাথে ভোটারের তেমন সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু গোলাপগঞ্জে বিএনপি সমর্থক মাওলানা রশীদ আহমদ স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন। বিগত নির্বাচনেও তিনি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বি ছিলেন। তখন দলীয় কোন্দলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ইকবাল আহমদ চৌধুরীকে পরাজিত করে জামায়াতের প্রার্থী বিজয় লাভ করে। এবারও ইকবাল চৌধুরীকে পরাজিত করতে দলের ঠাণ্ডা মাথার কারিগররা সক্রিয় রয়েছেন। ফলে রশীদ আহমদ এ পর্যন্ত অনেকটা এগিয়ে থাকার খবর পাওয়া গেছে।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬ প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীর মধ্যে বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান (নৌকা), আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন (আনারস), কার্যকরি সদস্য শামীম আহমেদ (মোটর সাইকেল) ও সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব (হেলিকপ্টার), জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি আবুল হাসনাত (দোয়াত কলম) ও আলকাছ আলী (ঘোড়া) প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এরমধ্যে নৌকা সমর্থকরা নিরব থাকায় আ’লীগ নেতা জাকির-পল্লব অনেকটা অগ্রগামী রয়েছেন। তবে আলকাছ আলীর সাম্প্রদায়িক ভোটে প্রভাব এবং বিএনপি নিরবে শামীম আহমেদকে সমর্থন করায় কিছুটা বিপাকে পড়তে যাচ্ছেন জাকির-পল্লব। এক্ষেত্রে নৌকার আতাউর রহমান খানের ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমনকি নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি এলাকায় এসে দলের ক্ষুব্ধ নেতাকর্মীর সাথে কথা বলার আভাস পাওয়া গেছে। এরপর থেকে আবারও নৌকার পালে হাওয়া লাগতে শুরু করেছে বলে একটি সূত্র ইঙ্গিত দিয়েছে।
অপরদিকে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় মোট ভোটার দু’লাখ ২৬ হাজার। নারী-পুরুষ প্রায় সমান। এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরমধ্যে উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপির এডভোকেট মাওলানা রশীদ আহমদ (আনারস), ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী জহির আহমদ (মিনার)।
তবে এডভোকেট ইকবাল চৌধুরী ও এডভোকেট রশীদ আহমদের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপির একটি অংশ রশীদ আহমদের প্রকাশ্যে বিরোধীতা করায় তিনিও চাপের মধ্যে আছেন। আবার অশীতিপর বৃদ্ধ ইকবাল চৌধুরীকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত আন্তরিক না হলে বিগত উপজেলা নির্বাচনের মতো এবারও তাঁকে ভাগ্যবরণ করতে হবে।
যদিও তিনি প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে প্রানপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।