আত্মসমর্পণে প্রস্তুত টেকনাফের ইয়াবা গডফাদারসহ ৯৮ ব্যবসায়ী

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ৩:০৭ অপরাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
আত্মসমর্পণে প্রস্তুত রয়েছে ৩২ ইয়াবা গডফাদারসহ ৯৮ শীর্ষ ব্যবসায়ী। শনিবার সকালে টেকনাফ পাইলট স্কুল মাঠে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে আত্মসমর্পণ করবেন পুলিশের সেফহোমে থাকা এসব ইয়াবা ব্যবসায়ী।তবে এর মধ্যে টেকনাফ উপজেলা ছাড়া আর কোনো উপজেলার ইয়াবা ব্যবসায়ী নেই। এ ছাড়া ইয়াবা সাম্রাজ্যের ডন হিসেবে খ্যাত হাজী সাইফুলসহ অন্তত ২০ গডফাদাররা।
সর্বশেষ সেফহোমে প্রবেশ করেছেন সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির ভাই ইয়াবা ডন আবদু শুক্কুর।পুলিশের নির্ভযোগ্য সূত্রমতে, মরণনেশা ইয়াবা নির্মূলে বর্তমান সরকার কোমর বেঁধে মাঠে নামে। পাশাপাশি সরকারের ইয়াবা নির্মূলের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কক্সবাজার জেলা পুলিশ কঠোর ভূমিকা পালন করছে।
একপর্যায়ে ইয়াবা উদ্ধার অভিযানে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির কথিত বন্দুকযুদ্ধে মারা যায় ৫১ ইয়াবা ব্যবসায়ী। এর মধ্যে ছিল ১০ গডফাদারও।তারা হলেন- আকতার কামাল, একরামুল হক, শামসুল হুদা, ইমরান প্রকাশ পুতিয়া মিস্ত্রি, মো. কামাল, জিয়াউর রহমান, হাবিব উল্লাহ, মো. ইউসুফ জালাল বাহাদুর, মোস্তাক আহমদ মুছু, বার্মাইয়া শামশু।
এদিকে বন্দুকযুদ্ধ শুরু হলে জীবন বাঁচাতে আত্মসমর্পণের পথ বেছে নেয় এই মাদক ব্যবসায়ীরা। গত এক মাসে পুলিশের সেফহোমে চলে গেছে ৩২ গডফাদারসহ ৯৮ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী।তবে বরাবরের মতোই ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে ইয়াবা সাম্রাজ্যের আলোচিত নাম সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদি, বদির ভাই কাউন্সিলর মৌলভী মুজিবুর রহমান, ইয়াবা ডন হাজী সাইফুল করিম, আনিসুর রহমান ইয়াহিয়া, উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদ, পুত্র টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া, বাহারছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ উদ্দিন ও উপজেলা চেয়ারম্যান ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন, উখিয়া গুয়ালিয়ার ইউপি সদস্য মোস্তাক আহমদ, টেকনাফের নুরুল হক ভুট্টো, ছিদ্দিক আহমদ, কক্সবাজার শহরের বাসটার্মিনাল এলাকার শাহাজান আনসারী, একই এলাকার আবুল কালাম, চকরিয়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল ইসলাম সোহেলসহ অনেকেই।
ইতিমধ্যে যে ৩২ ইয়াবা গডফাদারসহ ৯৮ জন পুলিশের সেফহোমে এসেছে, তারা হলেন- সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির চার ভাই যথাক্রমে আবদু শুক্কুর, শফিকুল ইসলাম, আবদুল আমিন, ফয়সাল রহমান ও এমপির ভাগিনা সাহেদ রহমান নিপু এবং সাহেদ কামাল।
এ ছাড়া আছেন টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমদের পুত্র দিদার মিয়া ও পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ, পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, নাজিরপাড়ার এনামুল হক মেম্বার, সাবরাংয়ের মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ ধানু মেম্বার, আলী খালির জামাল মেম্বার, শাহপরীর দ্বীপের রেজাউল করিম মেম্বার, সাবরাংয়ের সামশু মেম্বার, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, পশ্চিম লেদার বোরহান, সাবরাংয়ের নুরুল আমিন, নাজিরপাড়ার ভুট্টোর ভাগিনা আফসার, হ্নীলার রমজান ও বড় হাবিবপাড়ার ছিদ্দিক, আলী আহমদ চেয়ারম্যানের দুই পুত্র আবদুর রহমান ও জিয়াউর রহমান, হ্নীলার পশ্চিম সিকদারপাড়ার ছৈয়দ আহমদ, নাজিরপাড়ার আবদুর রহমান, পুরনো পল্লানপাড়ার শাহ আলম, জাহাজপুরার নুরুল আলম, হ্নীলা পশ্চিম সিকদারপাড়ার রশিদ আহমদ, ওয়ালিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভীপাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইলপাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরীপাড়ার মং সং থেইন প্রকাশ মমচি ও দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার জুবাইর হোসেন।
এ ছাড়া পুলিশ হেফাজতে থাকা আরও ৬৬ শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী হলেন- হ্নীলা পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, নাজিরপাড়ার সৈয়দ হোসেন, নাইটংপাড়ার মো. ইউনুস, সাবরাং আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, হ্নীলা ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, শামলাপুর জুমপাড়ার শফিউল্লাহ, একই এলাকার ছৈয়দ আলম, উত্তরলম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিমমাঝি, রাজারছড়ার আবদুল কুদ্দুছ, জাহেলিয়াপাড়ার মো. সিরাজ, সাবরাংয়ের আবদুল হামিদ, নাজিরপাড়ার মো. রফিক, নতুন পল্লানপাড়ার মো. সেলিম, নাইট্যংপাড়ার মো. রহিম উল্লাহ, নাজিরপাড়ার মো. হেলাল, চৌধুরীপাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়াঘোনার দিল মোহাম্মদ, একই এলাকার মোহাম্মদ হাছন, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নূর মোহাম্মদ, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, মধ্যম জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক, ডেইলপাড়ার আবদুল আমিন, উত্তর আলীখালীর শাহ আজম, দক্ষিণ নয়াপাড়ার আলমগীর ফয়সাল, সাবরাং ডেইলপাড়ার মো. সাকের মিয়া, সাবরাংয়ের আলী আহমদ, উত্তর শীলখালীর মো. আবু ছৈয়দ,
জাদিমুরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, রাজারছড়ার হোসেন আলী, সাবরাং নয়াপাড়ার মো. তৈয়ব, উত্তর জালিয়াপাড়ার নুরুল বশর মিজি, নাজিরপাড়ার জামাল হোসেন, মৌলভীপাড়ার মো. আলী ও এই এলাকার আবদুল গনি, জালিয়াপাড়ার মো. হাশেম, পুরনো পল্লানপাড়ার ইসমাইল, নাইট্যাংপাড়ার আইয়ুব, সাবরাংয়ের হোসেন আহমদ, সাবরাংয়ের শওকত আলম, নাইট্যাংপাড়ার হাবিব, আলীখালীর হারুন, মাঠপাড়ার কামাল, সাবরাংয়ের রাসেল, ডেইলপাড়ার নুরুল আমিন, শীলবনিয়াপাড়ার আইয়ুব, জালিয়াপাড়ার আলম, লেদার হামিদ, মুন্ডর ডেইলয়ের মনজুর, লেদার রবিউল আলম, সাবরাংয়ের মৌলভী বশির, হ্নীলার মাহাবুব, বাজারপাড়ার মো. শাহ, লেদার ফরিদ আলম, লেদার মো. হোছন, জালিয়াপাড়ার নুরুল আলম, লেদার জহুর আলম, আবু তাহের, ফুলের ডেইলের আলী নেওয়াজ ও আবু তৈয়ব।
পুলিশের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, আত্মসমর্পণকৃতদের বিরুদ্ধে দুই লক্ষাধিক ইয়াবা উদ্ধারের একটি মামলা হবে।ওই মামলায় তারা কারাগারে যাবে। পরে দুদকসহ আরও কয়েকটি সংস্থা তদন্তে নামবে তাদের বিরুদ্ধে।সূত্রটি আর্ও জানায়, পুলিশের সেফহোমে আসার সময় ইয়াবা গডফাদার ও শীর্ষ ব্যবসায়ীরা নিজেদের অপরাধ স্বীকার করে যার যে পরিমাণ ইয়াবা আছে তা নিয়ে আসে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সিদ্ধান্তমতে পৃথক মামলায় না গিয়ে এক মামলায় সবাইকে আসামি করা হচ্ছে।
পুলিশের সেফহোমে থাকা একরামুল হক জানান, দুই শর্তে আত্মসমর্পণ করেছি। প্রথম শর্ত জীবনে আর ইয়াবা ব্যবসা না করা। দ্বিতীয় শর্ত ছিল সমাজে ইয়াবাবিরোধী প্রতিরোধ গড়ে তোলা।তিনি আরও জানান, আইনি প্রক্রিয়া শেষে যদি সুস্থভাবে এলাকায় ফিরতে পারি, তা হলে ইয়াবা প্রতিরোধে নিজেকে সর্বদায় সম্পৃক্ত রাখব।জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, শনিবার টেকনাফ পাইলট স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিতব্য অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
বিশেষ অতিথি থাকবেন কক্সবাজারের চার এমপি- সাইমুম সরওয়ার কমল, আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম ও শাহিন আকতার।এ ছাড়া থাকবেন আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল, বিজিবির রিজেন্ট কমান্ডার জেনারেল সাজেদুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন, ডিজিএফআইয়ের কর্নেল জিএস ইমরান ইবনে রূপসহ পুলিশ ও বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। সভাপতির আসনে থাকবেন কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন।
এদিকে আত্মসমর্পণের ব্যাপারে কক্সবাজার পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসাইন বলেন, যারা পুলিশের হেফাজতে এসেছে, তারা আইনি প্রক্রিয়া শেষে ভালো পথে ফেরার সুযোগ পাবে।যদি বের হয়ে অপরাধে না জড়ায় তা হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে সুখে থাকতে পারবে। কিন্তু যারা আসেনি তারা অবশ্যই অসৎ উদ্দেশ্যে এবং ইয়াবা ব্যবসা করার জন্যই আসেনি। শনিবারের পর তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
পুলিশ সুপার বলেন, এ পর্যন্ত একশর কাছাকাছি ইয়াবা গডফাদার ও ব্যবসায়ী পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। তাদের আত্মসমর্পণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট অপরাধে কারাগারে পাঠানো হবে।