হিমঘরে পড়ে আছে ৩১ নবজাতকের মরদেহ

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ৫:৫৬ অপরাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম, বরিশাল।।
প্রায় ১৫ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার হওয়া ৩১ নবজাতকের মরদেহের ময়নাতদন্ত শুরু করেনি বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। বর্তমানে হাসপাতালের হিমঘরে পড়ে আছে নবজাতকদের মরদেহ।
মঙ্গলবার বেলা ৩টা পর্যন্ত ময়নাতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ৩ চিকিৎসক মর্গে না আসায় কাজ শুরু হয়নি।
বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩১ নবজাতকের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় সোমবার রাত ১টার মধ্যে এক এক করে মরদেহগুলোর সুরতহাল রির্পোট তৈরি করে পুলিশ সদস্যরা। রাতেই এ ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হয়।
মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে পুলিশের পক্ষ থেকে মরদেহগুলোর দ্রুত ময়নাতদন্তের জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। তবে বেলা ৩টা পর্যন্ত ময়নাতদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট ৩ চিকিৎসক সেখানে যায়নি।
হাসপাতালের মর্গে অবস্থান করা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানা পুলিশের এসআই মো. সাইদুল জানান, ময়নাতদন্ত শুরু করার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার অনুরোধ করা হয়েছে। ৩১টি মরদেহের ময়নাতদন্ত সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু তারা এখন পর্যন্ত কাজ শুরুই করেননি।
অনুরোধ করলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ময়নাতদন্তের জন্য ৩ সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। একজন হাসপালে থাকলেও বাকি দু’জন এখনও আসেননি। তিনি আসলে কাজ শুরু করা হবে। তাই ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে অপেক্ষা করতে হচ্ছে বলে জানান এসআই মো. সাইদুল।
বিষয়টি জানতে হাসপাতালের পরিচালক ডা. এসএম বাকির হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হয়। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে, সোমবার রাত ৮টার দিকে হাসপাতালের ডাস্টবিন থেকে ৩১ নবজাতকের মরদেহ ও মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পাওয়া যায়। যার অধিকাংশই ছিল বোতলজাত। রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মৃতদেহগুলোর সুরতহাল শুরু করে।
হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা জানান, হাসপাতালে জন্ম নেয়া অপরিণত শিশুর মৃতদেহ কলেজের শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক ক্লাসের জন্য মেডিসিনের মাধ্যমে বোতলে ভরে রাখা হয়। ১৫/২০ বছর পূর্বে অপরিণত এসব শিশুর মৃতদেহ সংরক্ষণ করা হয়। ওই বোতলগুলো গাইনি ওয়ার্ডে সংরক্ষিত ছিল। তাছাড়া বোতলে থাকা মেডিসিনের মেয়াদও শেষপর্যায়ে থাকায় তা মাটিচাপা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ওয়ার্ড বয়রা কোনো কিছু না বলে হাসপাতালের পেছনে ডাস্টবিনে স্তূপকারে ফেলে রাখে। পরবর্তীতে টোকাইরা সেখান থেকে অপরিণত শিশুর মৃতদেহ ও বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বের করে নিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সোমবার রাত ৮টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের লোকজন হাসপাতাল ক্যাম্পাসে ময়লা অপসারণ করতে গেলে জরুরি বিভাগ সংলগ্ন পানির ট্যাংকির নিচ থেকে অপরিণত শিশু এবং মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ পায়। এ ঘটনা জানাজানি হলে শত শত মানুষ ভিড় করে।
এ প্রসঙ্গে সোমবার হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেছিলেন, কলেজের গাইনি বিভাগের ল্যাবরেটরিতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মৃত শিশু এবং মানবদেহের নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সংরক্ষিত থাকে। তৃতীয় থেকে পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হাতে কলমে শেখানোর জন্য এগুলো ব্যবহার হয়। যেগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে সেগুলো নিয়মানুযায়ী মাটিতে পুঁতে ফেলতে হয়।
কিন্তু গাইনি বিভাগের প্রধান ডা. খুরশিদ জাহানের নির্দেশে ওই বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির নারী কর্মচারীরা শিশু ও মানবদেহের অঙ্গগুলো মাটিতে না পুঁতে ড্রেন ও ডাস্টবিনে ফেলেছে। যা মোটেই ঠিক হয়নি।