আত্মসমর্পণ করছে ৩৫ গডফাদারসহ শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, ১০:০১ পূর্বাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
অবশেষে আত্মসমর্পণ করছে কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকা টেকনাফের তালিকাভুক্ত শতাধিক ইয়াবা ব্যবসায়ী। আগামী শনিবার সকাল ১০টায় টেকনাফ কলেজ মাঠে হবে বহুল প্রত্যাশিত এ আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামাল উদ্দিন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এ সময় উপস্থিত থাকবেন বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন জানিয়েছেন, আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠান আয়োজনে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরও এতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
জেলা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে প্রতীকীভাবে ইয়াবা ট্যাবলেট জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করবে প্রায় ১২০ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী। তাদের মধ্যে অন্তত ৩৫ জন গডফাদার। আত্মসমর্পণের জন্য এরই মধ্যে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার জিম্মায় এসেছে তারা। তাদের মধ্যে রয়েছে টেকনাফের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির তিন ভাই আবদুল আমিন, মো. সফিক ও মো. ফয়সাল, ভাগিনা সাহেদুর রহমান নিপু এবং বেয়াই শাহেদ কামাল।
রয়েছে টেকনাফ সদরের এনামুল হক মেম্বার, ছৈয়দ হোসেন মেম্বার, শাহ আলম, আবদুর রহমান, মোজাম্মেল হক, জোবাইর হোসেন, নূরুল বশর, কামরুল হাসান রাসেল, জিয়াউর রহমান, মো. নুরুল কবির, মারুফ বিন খলিল ওরফে বাবু, মো. ইউনুছ, ছৈয়দ আহমদ, রেজাউল করিম, নুরুল হুদা মেম্বার, দিদার মিয়া, জামাল হোসেন মেম্বারসহ অনেকে।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় ইয়াবা ব্যবসায়ীদের গডফাদার হিসেবে সাবেক এমপি আবদুর রহমান বদির নাম থাকলেও তিনি আত্মসমর্পণ করছেন না। তবে তার নির্দেশে তিন ভাইসহ অন্তত ১০ জন নিকটাত্মীয় আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশ হেফাজতে এসেছে। বদির আরেক ভাই মৌলভী মুজিবুর রহমান এখনও আত্মগোপনে।
শেষ পর্যন্ত সেও আত্মসমর্পণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। টেকনাফের শীর্ষ ইয়াবা গডফাদার সাইফুল করিম আত্মসমর্পণ করছে কি-না এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তালিকায় রয়েছে টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ ও তার চার ছেলের নাম। তবে এলাকায় প্রকাশ্যে বিচরণ করলেও তারা আত্মসমর্পণ করছে না বলে জানা গেছে।
টেকনাফের কয়েকজন ইয়াবা ব্যবসায়ী সমকালকে বলেছেন, ‘বন্দুকযুদ্ধে’ প্রতিদিনই ইয়াবা ব্যবসায়ীদের কেউ না কেউ নিহত হচ্ছে। তাই ভয়ে তারা আত্মসমর্পণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুলিশের একটি বিশেষ শাখার কর্মকর্তারা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ করানোর ব্যাপারে গত দুই মাস ধরে কাজ করছেন। সরকারের শীর্ষ মহল থেকে প্রয়োজনীয় সম্মতি দেওয়ার পর স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ইচ্ছুক ইয়াবা কারবারিদের তালিকা তৈরি হয়।
এ আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়ায় সঙ্গে থাকা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তালিকাভুক্ত শীর্ষ ইয়াবা কারবারিদের অনেকে আত্মসমর্পণ করার জন্য যোগাযোগ করেছে। যারা আত্মসমর্পণ করতে আসছে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। তিনি বলেন, প্রায় ৪৫০ জন নতুন ইয়াবা ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে, যারা তালিকাভুক্ত নয়। তাদের বিরুদ্ধে কোনো থানায় মামলাও নেই। লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে তারা দীর্ঘদিন ইয়াবা ব্যবসা চালিয়ে আসছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের তথ্যমতে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকায় কক্সবাজার জেলায় ১ হাজার ১৫১ জন ইয়াবা ব্যবসায়ী রয়েছে। এদের বেশিরভাগ সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের। ভয়াবহ মাদক ইয়াবার বিরুদ্ধে গত বছরের ৪ মে থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ অভিযান। এ পর্যন্ত ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে ৪২ কারবারি। এর মধ্যে ৩৭ জনই টেকনাফের। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ৭৩ জন গডফাদারের মধ্যে মাত্র চারজন ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছে।
এদিকে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পণ নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যেও রয়েছে নানা সন্দেহ-সংশয়। এ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ইয়াবা গডফাদাররা পার পেয়ে যাচ্ছে কি-না এবং তাদের অবৈধ পথে উপার্জিত সম্পদ বৈধ হতে যাচ্ছে কি-না এ নিয়ে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে সচেতন মহল।
কক্সবাজার জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সদস্য ও দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, এ ধরনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইয়াবা ব্যবসায়ীদের সব অপকর্ম মাফ করে দেওয়া হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে কোনোভাবেই সফলতা আসবে না। আরও অনেকে এ ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন, মাদক ব্যবসা করে যারা কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে, তাদের ব্যাপারে অবশ্যই তদন্ত করতে হবে। তাদের অবৈধ সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে আইনের আওতায় আনতে হবে।
ইয়াবা কারবারিদের আত্মসমর্পণ বিষয়ে পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, কোনো খুচরা ইয়াবা ব্যবসায়ী ও বহনকারীকে আত্মসমর্পণের জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়নি। যারা আত্মসমর্পণের জন্য পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, তারা সবাই শীর্ষ ইয়াবা ব্যবসায়ী ও গডফাদার। -সমকাল