‘দেশে শতকরা ৩০ জন হৃদরোগের কারণে মৃত্যুবরণ করছেন’

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ জুলাই ২০১৯, ৭:৩১ অপরাহ্ণসিলেট: ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক বলেছেন, ‘বাংলাদেশে সংক্রামক ব্যাধি অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এসেছে কিন্তু জীবন ধারার পরিবর্তনের সাথে সাথে খাদ্যাভ্যাস এবং কায়িক পরিশ্রমের অভাবের ফলে অসংক্রামক ব্যাধি দিন দিন বেড়েই চলছে। ২০১৮ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে বাংলাদেশে শতকরা ৬৭ জন সংক্রামক ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছে, তন্মধ্যে শতকরা ৩০ জন হৃদরোগের জন্য মৃত্যুবরণ করছেন। এতে উচ্চ রক্তচাপের রোগীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।
শনিবার (৬ জুলাই) সকালে সিলেট ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে এই প্রকল্পের আওতাধীন সিলেটের বিয়ানীবাজার, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ এর সর্বস্থরের চিকিৎসকদের সাথে উচ্চ রক্তচাপের পাইলট প্রকল্পের মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য দেন। ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এনসিডিসি প্রোগ্রাম, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহায়তায়, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেট এর মাধ্যমে এবং রিসোলভ টু সেইভ লাইভস ইউএসএ এর সাহায্য পৃষ্ঠপোষকতায়, সিলেটের ৪টি উপজেলায় এই পাইলট প্রকল্পের কাজ চলছে।
এসময় আব্দুল মালিক আরো বলেন, ‘প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে শতকরা ২০ থেকে ২৫ ভাগের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ পরিলক্ষিত হয় এর মধ্যে অধিকাংশই জানেনা যে তাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে। এ জন্য উচ্চ রক্তচাপকে বলা হয় নীরব ঘাতক। যার কারণে অনেকের মধ্যে স্ট্রোক, হার্ট এ্যাটাক, কিডনি সমস্যা বা অন্ধত্ব দেখা দেয়। কাজেই উচ্চ রক্তচাপকে আমাদের নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। তাই প্রত্যেকের খেয়াল রাখা উচিত যেমন লবণ কম খাওয়া, ওজন ঠিক রাখা, শাকসবজি ফলমূল খাওয়া, কাইক পরিশ্রম এবং ধুমপান বা তামাক জাতীয় দ্রব্য সেবন থেকে বিরত থাকলে অনেকাংশে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। তারপরও যদি উচ্চ রক্তচাপ হয়ে যায় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ সেবন করলে স্বাভাবিক জীবন যাপন করা সম্ভব হয়।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সমাজের প্রত্যেক শ্রেণী পেশার জনগণকে সুস্থ রাখতে হলে সচেতনতা বাড়াতে হবে। প্রত্যেকেরই উচিত যে কেনা রোগের কারণে ডাক্তারের শরণাপন্ন হলে পাশাপাশি রক্তচাপ মাপা উচিত এবং যাদের মা বাবার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে, তাদের সময় সময় রক্তচাপ মাপা জরুরী।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রফেসর ডা. এ এইচ এম এনায়েত হোসেন বলেন, ‘প্রত্যেকটি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে উচ্চ রক্তচাপের রোগী চিহ্নিত করতে হবে। কারণ অনেকেই জানেনা তার উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে। আমাদের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তন করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপর জোর দিতে হবে।
হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ম্যানেজার ডা. মাহফুজুর রহমান ভূইয়া জানান গত মার্চ ২০১৯ থেকে এই প্রকল্পে ১৬ হাজার ৪ শত ৩৪ জনের রক্তচাপ মাপা হয় এর মধ্যে ৩ হাজার ১ শত ৬৬ জনের উচ্চ রক্তচাপের রোগী সনাক্ত করা হয়।
প্রকল্পের সমন্বয়কারী আবু তালেব মুরাদের পরিচালনায় এবং ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেটের সভাপতি প্রফেসর ডা. এম এনায়েত উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল প্রফেসর ডা. এ এইড এম এনায়েত হোসেন, সিলেটের সিভিল সার্জন ডা. হিমাংশু লাল রায় এবং স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেট এর রোগ নিয়ন্ত্রণ সহকারী পরিচালক ডা. আনিসুর রহমান।
সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন সিলেট এর সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ডা. মোঃ আমিনুর রহমান লস্কর। পরে প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন হাইপারটেনশন কন্ট্রোল প্রোগ্রামের প্রজেক্ট ডিরেক্টর ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল এন্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের ইপিডিমোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে ৪টি উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বনাথের ডা. মো. আব্দুর রহমান, বিয়ানীবাজারের ডা. মোয়াজ্জেম আলী খান চৌধুরী, গোলাপগঞ্জের ডাঃ তৌহিদ আহমেদ এবং ফেঞ্চুগঞ্জের ডা. মো. শফিকুল আলম। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রজেক্ট অফিসার ডা. শামীম জুবায়ের, মনিটরিং অফিসার এহসানুল আমিন ইমন এবং মনিটরিং অফিসার ডা. শাহিনুল ইসলাম।