বিনাঅস্ত্রপাচারে ৪২৮ নবজাতক ভূমিষ্ট আলোচনায় সেবিকা সানজানা শিরীন
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ৩০ মে ২০১৯, ১:৩৩ পূর্বাহ্ণসাত্তার আজাদ:: অল্পবয়সী একজন অদম্য মেধাবী সেবিকা, পরিশ্রমী, স্বেচ্চাসেবী, মানবতাবাদি কন্যা শিরীনের নেশা-পেশা ভাগ্যহতদের মুখে হাসি ফুটানো। জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে থাকা মানুষের রক্তদান, অনাহারির মুখে আহারের সংস্থান, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দিতে চেষ্টা তার। শিরীন পেশায় সেবিকা (নার্স)। শিরীনের প্রিয় শখই হচ্ছে নরমাল বাচ্চা ডেলিভারি করানো। বিনা অস্ত্রপাচারে তার হাতে ৪২৭টি বাচ্চা ভূমিষ্ট হয়। আর এসব জন্মদাতা মায়েরা গরিব বা চা শ্রমিক।
সর্বশেষ তার হাতে ৪২৮ নম্বর শিশু ভূিমষ্ট হয় গত সোমবার। মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ঈটা চা বাগানের সীতা গোয়ালার বাচ্চা পেটের অনেক উপরে ছিল। অস্ত্রোপচার ছাড়া শিশু জন্মদান অনেকটা অসম্ভব। সেখানেও ১ ঘন্টা চেষ্টার পর ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে ৩.৮কেজি ওজনের একটি ছেলে শিশু ভূমিষ্ট করায় সে।
শিরীনের বাড়ি হবিগঞ্জ জেলায়। চাকরি কমলগঞ্জে চা বাগান এলাকায় ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। ৬ বোন ২ ভাইয়ে মধ্যে সে তৃতীয়। বাবা মুদির দোকানদার। শিরীন এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হতে বড় ভাই বারণ করলেন। ভাইকে বুঝিয়ে বৃন্দাবন সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাশ করে। পরে সে চাইল ম্যাটসে ভর্তি হবে। এতে পরিবারের আপত্তি। ১৫-২০ দিন কান্নাকাটি করে উপায় না দেখে সিলিংফ্যানে ওড়না বেঁধে সুইসাইডের চেষ্টা করে শিরীন। বিষয় আঁচ করে দরজা ভেঙে ফাঁসের আগেই উদ্ধার করা হয় তাকে এবং অনুমতি দেওয়া হয় ভর্তির। সে মৌলভীবাজার ম্যাটসে ও একই সাথে মৌলভীবাজার সরকারি কলেজে ডিগ্রিতেও ভর্তি হয়।
২০১৬ সালের ১৭ অগাস্ট চাকরী হয় তার প্রাইভেট ক্লিনিকে। ২১ নভেম্বর সে যোগদান করে হবিগঞ্জের নিজামপুরে প্যারামেডিক পদে মা মনি এইচএস প্রজেক্টে। গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করানো শুরু তার। কিন্তু বড় ভাই চাননি শিরীন চাকরি করুক। আর এতে সে রাজি না হলে প্রায় আড়াই বছর ধরে শিরীনের সাথে কথা বলে না তার ভাই।
কাজের পাশাপাশি শিরীন রক্ত সংগ্রহ করে মুমূর্ষু রোগীর সহযোগিতা করে। এতে সব সময় ফোন ব্যস্ত থাকায় কর্মস্থলের কর্মকর্তাদের সন্দেহ হয়। এই অভিযোগে চাকরিও চাড়তে হয় তাকে। পরে তার চাকরী ঝুটেএফআইভিডিতে প্যারামেডিক পদে সিলেটের জৈন্তাপুরে। নানা প্রতিকূলতায় সেই চাকরিও ছাড়তে হয় তাকে। তবে সেখানে তিন মাসে ৯৯টা নরমাল ডেলিভারি করায় সে। বর্তমান কর্মস্থলে তার চাকরি হয় ২০১৮ সালের ৭ সেপ্টেম্ব।
এই শিরিন নবম শ্রেণি থেকে মানবিন কাজে লিপ্ত। তখন সে ঘর থেকে রাস্তাভাড়া ১০টাকা পেত। এ থেকে বাঁচিয়ে দিনে ৪-৫ টাকা জমিয়ে প্রতি শুক্রবার সে রাস্তায় বসে থাকা একজন প্রতিবন্ধীকে নিয়ে দিত।
তার রক্তদান শুরু হয় মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে ডিউটিরত অবস্থায়। একদিন ওয়ার্ডে গিয়ে দেখে গর্ভবতীর বাচ্চা উল্টো হয়ে এক হাত বের করে আছে। রোগী ব্যথায় চিৎকার করছে। তার অপারেশন ও রক্তের প্রয়োজন। এই রোগীকে সে প্রথম রক্ত দেয়। এ পর্যন্ত ১৪ বার রক্তদান করেছে সে।
শিরীনের স্বপ্ন- নিজের পরিশ্রমের তার অনেক টাকার দরকার। শিরীন আক্ষেপ করে বলে, ভালো একটা কাপড়ের অভাবে কারও বিয়েতে যেতে পারত না সে। একটা বিয়েতে নাকি গিয়েছিল আত্মীয় বড় বোনের জামা ধার করে পরে। শিরিনের একটা বৃদ্ধাশ্রম বানানোর স্বপ্ন। একটা এতিম বাচ্চার দায়িত্ব নিয়েছে সে। তাকে লেখাপড়া করাচ্ছে।