এভাবেই নতুনরূপে সাজতে যাচ্ছে রাজধানীর রমনা পার্ক। ‘ঢাকার ফুসফুস’ খ্যাত সাত দশক বয়সী এ পার্কের লেক ঘিরে সৌন্দর্য বর্ধনের এই পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া পার্কে দর্শনাথীদের জন্য থাকবে ১১টি উন্মুক্ত কফি কর্নার। শিশু কর্নারে যুক্ত হবে আধুনিক সব রাইড। পার্কের ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার ফুটপাতে বসানো হবে সিরামিক ইট। এ জন্য ‘রমনা পার্কের অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং লেকসহ সার্বিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিকরণ’ নামে দুই বছর মেয়াদি প্রকল্প নিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) অনুমোদনের পর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ কাজের সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৭ কোটি ৯৬ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে গণপূর্ত অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ঢাকা সার্কেল-১) ও রমনা লেক উন্নয়ন সংক্রান্ত প্রকল্পের পরিচালক কে এম সোহরাওয়ার্দী দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রমনার কৃত্রিম লেকের নান্দনিকতার সঙ্গে মিল রেখে ১৫ ফুট প্রস্থ মাইক্রো পাইল আর সিসি ফেয়ার ফেস ফ্রেম, স্টিল জয়েন্ট দিয়ে এমএস পাইপের মাধ্যমে দুটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।

লেকের মাঝামাঝিতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সৃষ্টির লক্ষ্য পানিতে ডুবন্ত একশ ফুট ডায়াগ্রামের ৮ ইঞ্চি পুরু রিটেইনিং ওয়ালের ভেতর মাটি ভরাট ও বনায়ন করা হবে। ’ তিনি জানান, দরপত্র আহ্বানের পর ৫০ জনের মতো প্রতিযোগী এ কাজ করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী সর্বনি¤œ দরদাতা কাজটি পাবেন।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, রমনার লেক পুনঃখনন করে এর দৈর্ঘ্য বাড়ানো ছাড়াও দর্শনার্থীদের বসার আধুনিক বেঞ্চ নির্মাণ, পুরাতন ৩ দশমিক ৬ কিলোমিটার ফুটপাতের পরিবর্তে সিরামিক ইটের রাস্তা নির্মাণ করা হবে। আগামী বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার কথা।

১৯০৮ সালের দিকে রমনাসহ ঢাকা শহরে নিসর্গ পরিকল্পনার কাজ শুরু করেন লন্ডনের কিউ বোটানিক গার্ডেনের অন্যতম কর্মী রবার্ট লুইস প্রাউডলক। তার তত্ত্বাবধানেই গড়ে ওঠে রমনাকেন্দ্রিক নিসর্গশোভা। তিনি বিশ্বের অন্যান্য উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চলের দৃষ্টিনন্দন বৃক্ষগুলো ঢাকায় এনে রোপণের ব্যবস্থা করেন। রমনা পার্ক অবশ্য অনেক পরে ১৯৫২ সালের দিকে হয়েছে। ৬৮ দশমিক ৫ একর জমি ও ৮ দশমিক ৭৬ একরের লেক নিয়ে পার্কটি গড়ে ওঠে। কলকাতার ইডেন গার্ডেনসের অন্যতম নির্মাতা প্রয়াত ফজলুল করিমের হাতেই এর সূচনা। নানা প্রজাতির বৃক্ষশোভা ছাড়াও পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে শিশুদের বিনোদন ও খেলাধুলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ সকাল-বিকেল এখানে হাঁটাহাঁটি করতে আসেন। পার্কের বিভিন্ন বয়সী, বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা সুদীর্ঘ সময়ের ফসল। বৈচিত্র্য থাকায় সারা বছরই কিছু না কিছু ফুল থাকে। প্রায় পাঁচ হাজার গাছ আছে এই পার্কে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, রমনা পার্ক উন্নয়নের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা থেকে গণপূর্ত অধিদপ্তরকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এর পর সংস্থাটি একটি ডিপিপি তৈরি করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সৌন্দর্য বাড়াতে উন্নত দেশের মতো লেক পাড়ে নির্মাণ করা হবে উডেন ডেক। থাকবে পানির ফোয়ারা, লেক আইল্যান্ড, অত্যাধুনিক তিনটি গণশৌচাগার, ১১টি উন্মুক্ত কফি কর্নার।

গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাহাদাত হোসেন দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘রমনা পার্কে শিশু কর্নারটি দীর্ঘদিনের পুরনো। সেখানে খেলার আধুনিক সরঞ্জাম ও রাইড বসানো হবে। লেক পুনঃখননের মাধ্যমে সারা বছর পানি রাখার ব্যবস্থাসহ পর্যাপ্ত আলোকসজ্জা এবং ল্যান্ড স্কেপিং বনায়ন করা হবে। পুরো কাজটি শেষ হলে সত্যিকার অর্থেই অপরূপ রমনার নয়নাভিরাম দৃশ্যে মুগ্ধ হবে দর্শনার্থীরা।’ -দেশ রূপান্তর