বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘যৌন নিপীড়নের’ অডিও ভাইরাল

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৭ এপ্রিল ২০১৯, ২:৪৭ অপরাহ্ণগোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে।
বিভাগীয় প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে ওই দুই ছাত্রী যৌন হয়রানির অভিযোগ তোলেন।অন্যদিকে অধ্যাপক মো. আক্কাস আলী অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
এ ব্যাপারে ওই দুই ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিযেছেন। তবে এক মাস পার হলেও ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
শনিবার (৬ মার্চ) বেলা ২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যৌন নিপীড়নের কয়েকটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরি থেকে দ্রুত অপসারণ এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
ভোক্তভূগী এক ছাত্রী ছয় পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে বলেন, বিভাগের চেয়ারম্যান আক্কাস আলী তার থিসিসের সুপারভাইজার। তার তত্ত্বাবধানে তারা তিন ছাত্রী একটি গ্রুপ করে কাজ শুরু করেন।
তিনি অভিযোগ করেন, চতুর্থ বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর থিসিসের কথা বলে ওই শিক্ষক তাদের প্রায়ই তার কক্ষে ডেকে নিতেন।
“এ সময় থিসিসে নম্বর বাড়ানোর কথা বলে আমাকে আপত্তিকর প্রস্তাব দেন ও নানাভাবে যৌন হয়রানি করেছেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেল করিয়ে দেওয়া হবে বলে হুমকি দেন।”
তিনি বলেন, “আক্কাস আলী আমাকে থিসিসের কাজ আছে বলে একা বিভাগে ডেকে নেন। এক পর্যায়ে তিনি আমার সঙ্গে ঘনিষ্ট হয়ে আপত্তিকর আচরণ শুরু করেন। এতে বাধা দিলে আমাকে ফেল করিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। আর রাজি হলে থিসিসে নম্বর বাড়িয়ে দেয়ার প্রলোভন দেখান।”
এরপর তিনি কাঁদতে কাঁদতে সেখান থেকে বেরিয়ে যান এবং পরে তিনি বিভাগের শিক্ষকদের কাছে এ বিষয়ে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। পরে শিক্ষকদের পরামর্শে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান।
হয়রানির শিকার অপর ছাত্রী সাত পৃষ্ঠার লিখিত অভিযোগে বলেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ছিল। কিন্তু আক্কাস আলী তাকে ক্যাম্পাসে এসে তার সঙ্গে দেখা করতে বলেন। থিসিসের কাজ শেষ করে ২৪ জানুয়ারি তারা তিনজন তার সঙ্গে দেখা করেন।
“চলে আসার সময় তিনি আমাকে সেখানে থাকতে বলেন। গলার স্বর নিচু করে পরের দিন শুক্রবার তিনি আমাকে তার সঙ্গে একা দেখা করতে বলেন।”
এভাবে থিসিসের কথা বলে কারণে অকারণে ডেকে নিয়ে ওই শিক্ষক নানাভাবে যৌন হয়রানি করতেন বলে তিনি অভিযোগ করেন।
পরে শিক্ষকদের পরামর্শে বিভাগীয় প্রধানের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক মো. আক্কাস আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিভাগের এক শিক্ষক এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন মডারেশন কমিটির সদস্য ও রেজাল্ট প্রসেসিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আক্কাস আলী। সে সময় রেজাল্ট শিট পরিবর্তন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে আপন ছোট ভাই মো. লিয়াকত মাতুব্বরকে নিজ বিভাগে ভর্তি করান। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এখন থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অন্যদিকে দীর্ঘ দিন ধরে পরীক্ষার ফলাফল পাননি। ফলাফল নিয়েও তারা এখনো শঙ্কিত।