বিয়ানীবাজার: পাল্টে যাচ্ছে ভোটের দৃশ্যপট

বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৬ মার্চ ২০১৯, ১০:৫১ পূর্বাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।
বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ১২জন। এরমধ্যে চেয়ারম্যান পদে ছয়জন, পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান তিনজন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তিনজন রয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে প্রার্থীরা রাজনীতি, আঞ্চলিকতা ও ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগিয়ে পুরোদমে প্রচারণা শুরু করেছেন। ভোটাররাও তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে মনস্থির করছেন।
এ মুহূর্তে সমর্থকরা প্রার্থী রদ-বদল করায় নির্বাচনের শুরু দিকের হিসেবের সাথে এখন ভোটের দৃশ্যপট প্রায় পাল্টে যাচ্ছে। এজন্য নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে না এলে তিনপদে জয় সূচকে কারা এগিয়ে কিংবা বিজয়ী হতে পারেন তা অনেকটা বলা সম্ভব হচ্ছে না।
পঞ্চম উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। তবে বিএনপি ও অন্যান্য সংগঠন নির্বাচন বর্জন করেছে। বিয়ানীবাজারেও তাঁরা প্রার্থী দেয়নি। এজন্য চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের একমাত্র দলীয় প্রার্থী নৌকা প্রতীকের আতাউর রহমান খান। তার সাথে আ’লীগের অপর তিন বিদ্রোহী ও জাতীয় পার্টির দু’জন প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
মূল লড়াইয়ে আতাউর খানের সাথে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা থাকলেও জাপা নেতা আবুল হাসনাত যেকোন সময় ক্লিক করতে পারেন। তার সাথে বিএনপি-জামায়াতের একটা গোপন আঁতাত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে পুরুষ ভাইস চেয়ারম্যান পদে খছরুল হক (চশমা), জামাল হোসেন (তালা) ও মামুনুর রশীদ খান (টিয়া) প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। এরমধ্যে খছরু-জামালের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রোকশানা বেগম লিমা (ফুটবল) ও হাসিনা বেগম (হাঁস) আলোচনায় রয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেত্রী জাহানারা বেগমও (কলস) ভোটের মাঠে রয়েছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বর্তমান চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খান (নৌকা), আ’লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেন (আনারস), শামীম আহমেদ (মোটর সাইকেল) ও আবুল কাশেম পল্লব (হেলিকপ্টার), জাতীয় পার্টির স্বতন্ত্র প্রার্থী হাজি আবুল হাসনাত (দোয়াত কলম) ও আলকাছ আলী (ঘোড়া) প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।
জানা যায়, বিগত উপজেলা নির্বাচনে বিয়ানীবাজার উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান দলীয় মনোনয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। সেসময় তাঁর সাথে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেন আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কাশেম পল্লব, বিএনপির আব্দুল মান্নান ও জামায়াতের মাওলানা ফয়জুল ইসলাম। বিগত নির্বাচনের বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী এবার নির্বাচন না করলেও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবুল কাশেম পল্লব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আবার নির্বাচন করছেন। এবার আ’লীগের আরো নতুন দু’মুখ দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ জাকির হোসেন ও কার্যকরি সদস্য শামীম আহমেদ নির্বাচন করছেন।
সর্বশেষ তথ্যমতে, আওয়ামী লীগের চার প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণায় সমানতালে এগিয়ে আছেন। সমর্থকদের দিক থেকে জাকির হোসেন ও আবুল কাশেম পল্লব কিছুটা অগ্রগামী। ক্লিন ইমেজের রাজনীতিক হিসেবে যুক্তরাজ্য প্রবাসী শামীম আহমেদ এর একটা নিরব ভোট রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আতাউর রহমান খান নৌকা প্রতীক পাওয়ায় বিশেষ সুবিধায় রয়েছেন। তবে প্রথমদিকে আ’লীগে অন্তর্দ্ব›দ্ব প্রকট থাকায় তিনি কিছুটা বিপাকে ছিলেন। এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে আসছে।
উপজেলা ও ইউনিয়ন আলীগের দায়িত্বশীল অনেক নেতা নৌকার বিরোধীতা ছেড়ে মূল ¯্রােতে আসতে শুরু করেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। বয়োজ্যেষ্ঠ প্রার্থী জাপার আবুল হাসনাত হঠাৎ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন। তাঁর ঘনিষ্টরা জানিয়েছেন, নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত প্রার্থী না দেয়ার আবকুল হাসনাত নির্বাচন করছেন। ইতিমধ্যে গোপনে জামায়াত তাঁকে সমর্থন করেছে। বিএনপিও ভোট দিতে অনেকটা নমনীয় মনোভাব পোষণ করেছে। সরকার বিরোধী এ দু’দল আবুল হাসনাতকে সত্যিই ভোট দিলে তিনি যেকোন সময় ভোটের মাঠে ফ্যাক্টর প্রার্থী হতে পারেন।
অন্যদিকে কুড়ারবাজার ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আলহাজ আলকাছ আলী সকল হিসেবে পিছিয়ে রয়েছেন। তবে সাম্প্রদায়িক ভোট পেতে তিনি কৌশলে অগ্রসর হচ্ছেন। এ নিয়ে দু’একটি গোপন বৈঠক করেছেন বলেও জানা গেছে। জাপার এ দু’প্রার্থীর ভিন্ন কৌশল ও হিসেব-নিকেশ মিলে গেলে যেকোন সময় ভোটের দৃশ্যপট পাল্টে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
এক্ষেত্রে আবারও নৌকার প্রার্থী আতাউর রহমান খান লাইমলাইটে চলে আসতে পারেন। তবে বিগত ১০ বছর সরকারের সুবিধাভোগী কতিপয় ব্যক্তি কৌশলে সর্বশক্তি দিয়ে নৌকার বিরুদ্ধে মাঠে রয়েছেন। এজন্য জয়-পরাজয় আতাউর রহমান খানের ভাগ্যের উপর নির্ভর করছে।
সূত্রমতে, উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করার জন্য আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন ১১জন। তারা হলেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাছিব মনিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, উপ দপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য যুক্তরাজ্য প্রবাসী কমিউনিটি নেতা শামীম আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য চারখাই ইউপি চেয়ারম্যান মাহমুদ আলী, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব, সিলেট জেলা যুবলীগের সহ সভাপতি আব্দুল বারী, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহবায়ক জামাল হোসেন, ফ্রান্স আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী হোসেন ও বঙ্গবন্ধু শিশু কিশোর মেলার কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ময়েজ আহমদ।
জেলা ও উপজেলা কমিটির দায়িত্বশীলদের বৈঠকে কোন সমঝোতা না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত আলী হোসেন ও ময়েজ আহমদ ছাড়া অপর ৯ প্রার্থীর নাম কেন্দ্রে প্রেরণ করা হয়। সকল জল্পনা কল্পনা শেষে কেন্দ্রীয় মনোনয়ন বোর্ড বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান খানকে দলীয় মনোনয়ন প্রদান করে। কিন্তু কেন্দ্রের দেয়া এ সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারেননি মনোনয়ন বঞ্চিত প্রার্থী ও তাদের অনুসারী নেতাকর্মী।
এ অবস্থায় মনোনয়ন প্রত্যাখ্যাত উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য শহীদ পরিবারের সন্তান জাকির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ এবং উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান আবুল কাশেম পল্লব নির্বাচন করছেন।
আর জামাল হোসেন চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী না হয়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন।