বিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম: বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনের আর মাত্র আট দিন বাকি। তার আগেই পৌর প্রশাসকের দায়িত্ব পাচ্ছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আশিক নূর। মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার দীর্ঘ ১২ দিন কালক্ষেপণের পর অবশেষে দায়িত্ব হস্তান্তরের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে। সোমবার (০৬ জুন) বেলা ৩ টায় ইউএনও’র কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন পৌর মেয়র আব্দুস শুকুর।
রোববার (০৫ জুন) রাতে এ তথ্য জানান পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ ব্যানার্জি। এ খবরে বেশ ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন মেয়র প্রার্থীরা। তাঁরা নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরিতে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ইউএনও মো. আশিক নূর জানান, পৌর প্রশাসক সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের চিঠি পেয়ে গত ২৬ মে লিখিতভাবে পৌরসভাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে বলেছি। কিন্তু এতোদিন তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। তিনি বলেন, আমাকে সোমবার দায়িত্ব বুঝিয়ে নিতে বলা হয়েছে। এ দিনের জন্য আমি পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছি।
এদিকে, উঠান বৈঠক, সভা, গণসংযোগসহ ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় জমে উঠেছে পৌর নির্বাচন। ২-৩ জন ব্যতীত ১০ মেয়র প্রার্থীর সবাই ভোটারদের হিসেবের তালিকায় রয়েছেন। এজন্য জয়-পরাজয়ের নামের তালিকা প্রতিদিন রদবদল হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কঠিন এ সমীকরণে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন দু’স্বতন্ত্র প্রার্থীর সাথে এক দলীয় প্রার্থী। তবে, দিন দিন আওয়ামী লীগের এক ‘প্রতিবাদী’ স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রতি সাধারণ ভোটারদের আগ্রহ বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
পৌর নির্বাচনে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী সরাসরি অংশগ্রহণ করছে না। তবে, দু’জন স্বতন্ত্রের ‘মোড়কে’ অংশ নেয়া দলীয় প্রার্থীকে তারা বিচ্ছিন্নভাবে সমর্থন দিচ্ছেন বলে খবর রটেছে। শেষ পর্যন্ত যে প্রার্থী অগ্রসর হবে তাকে তারা পর্দার আড়ালে পুরোপুরি সমর্থন জানাবে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
এরই মধ্যে পোস্টারে পোস্টারে ছেয়ে গেছে পুরো পৌর এলাকা। গত দু’দিনের বৃষ্টি নির্বাচনী রুটিন ওয়ার্কে কিছুটা ছেদ পড়লেও বৈরি আবহাওয়া উপেক্ষা করে মেয়র, কাউন্সিলর প্রার্থীরা প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। শহরের রেস্টুরেন্ট কিংবা গ্রামের চায়ের স্টলে বসে প্রার্থীদের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের নানা মন্তব্য নির্বাচনী পরিবেশকে করছে প্রাণবন্ত।
তবে, দু’তিন জন মেয়র প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বক্তব্যে কাদা ছোঁড়াছুড়ির বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বেশ ট্রল হচ্ছে। এতে স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও অনেকেই লেখালেখিতে অংশ নিচ্ছেন। সবমিলিয়ে নির্বাচনী পরিবেশে ক্রমশঃ হিংসাত্মক ও বৈরিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। সচেতন মহলের মতে, প্রার্থী ও ভোটার সবাই সবার পরিচিত, এখানে বক্তৃতা দিয়ে কোন লাভ নেই। এর পরিবর্তে মেয়র হলে আগামী ৫ বছর কী করবেন, তা নিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার প্রকাশ করুন। তাহলে শত্রুতা ও বৈরিতা অনেক কমে আসবে। সৃষ্টি হবে সৃজনশীল প্রতিযোগিতা, তৈরি হবে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বলেও তাঁরা মনে করেন।
বিয়ানীবাজার পৌর নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের ‘প্রতিবাদী’ বিদ্রোহী মেয়র প্রার্থী জিএস ফারুকুল হক জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন। তিনি চামচ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। একই গ্রামের আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর। গ্রামের দায়িত্বশীলরা কোনভাবেই দু’জনের মধ্যে ঐক্য করতে পারেননি। বরং ফারুকুল হককে ‘ভালো মানুষ’ আখ্যা ও সমর্থন দিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন গ্রামের অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিয়ানীবাজার সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুক আহমদ। তাঁর সমর্থন ভোটের মাঠে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এছাড়া, আওয়ামী লীগের অপর দু’বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ টিটু (হেলমেট) ও আহবাব হোসেন সাজু (কম্পিউটার) রয়েছেন। তিন বিদ্রোহীকে নিয়ে পুরোপুরি উল্টো স্রোতে ভাসছে নৌকা। তবে, যেকোন সময় নৌকার পালে হাওয়া লাগতে পারে।
নির্বাচনে ভোটের দৌঁড়ে হিসেবের তালিকায় রয়েছেন, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুছ টিটু (হেলমেট) ও সাবেক পৌর প্রশাসক তফজ্জুল হোসেন (জগ)। স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুস সামাদ আজাদ (হ্যাঙ্গার) ও মো. আব্দুস সবুর (মোবাইল)। এ দু’জনের একজনকে শেষ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সমর্থন দিতে পারে। যিনি সমর্থন পাবেন তিনি মূল লড়াইয়ে আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে। এছাড়া, মেয়র পদে নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির সুনাম উদ্দিন (লাঙ্গল), বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির এডভোকেট আবুল কাশেম (কাস্তে), স্বতন্ত্র অজি উদ্দিন (নারিকেল গাছ)।
এদিকে, পৌর নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের সভায় কেন্দ্রীয় নেতাদের বক্তব্যের পালা শুরু হয়েছে। গতকাল রোববার বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির কাস্তে প্রার্থীকের মেয়র প্রার্থী এডভোকেট মো. আবুল কাশের এর সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের সাবেক সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। আগামীতে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষেও কেন্দ্রীয়, জেলা নেতাদের বক্তব্য শোনা যেতে পারে।
বিয়ানীবাজারে কেন্দ্রীয় নেতা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ভারতের গোলামীর জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়নি, হয়েছে পরাধীনতার জিঞ্জির ছেঁড়ার স্বপ্ন নিয়ে। তিনি বলেন, রাজনীতি এখন সঠিক জায়গায় নেই। সর্বত্র লুটেরা সিন্ডিকেটের দাপট। সাধারণ মানুষের কথা কেউ ভাবেনা। ধনীক শ্রেণী নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। তিনি কমিউনিষ্ট পার্টির মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আবুল কাশেমের পক্ষে কাস্তে মার্কায় ভোট প্রার্থনা করেন।
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখন, মেয়র প্রার্থী এডভোকেট আবুল কাশেম, এডভোকেট আনোয়ার হোসেন সুমন, উপজেলা কমিউনিষ্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান, প্রভাষক ফয়সল আহমদ, প্রভাষক বিজিত আচার্য প্রমুখ।
অপরদিকে, রোববার সন্ধ্যায় নৌকার সমর্থনে বিয়ানীবাজারে বক্তব্য রেখেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট মো. নাসির উদ্দিন খান। এ সময় তিনি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে পৌরসভার অভূতপূর্ব উন্নয়নের ঘটাতে নৌকাকে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি তিনি নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত হতে দলীয় নেতাকর্মীদের কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন।
জানা যায়, আগামী ১৫ জুন বিয়ানীবাজার পৌরসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৩ হাজার ৬২৫ জন ও নারী ভোটার ১৩ হাজার ৭৪৪ জন। ৯ ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রের ৮০টি কক্ষে ভোট নেয়া হবে।
নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কমকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন জানান, আচরণবিধি অনুযায়ী প্রতিদিন বেলা দু’টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণা চলবে। প্রার্থীদের সবধরণের নির্বাচনী কার্যক্রম শেষ হবে আগামী ১৩ জুন মধ্যরাত ১২ টায়।
উল্লেখ্য, ২০০১ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারণে প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল। আওয়ামী লীগের নির্বাচিত মেয়র মো. আব্দুস শুকুর শপথ নেন ২২ মে এবং পরদিন ২৩ মে তিনি পৌরসভার দায়িত্বগ্রহণ করেন।