ছাদেক আহমদ আজাদ: বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জাতীয় পার্টি ও কমিউনিস্ট পার্টি দলগতভাবে অংশ নিচ্ছে। তবে, বিগত পৌর নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবু নাসের পিন্টু এবার দলগতভাবে অংশ নিচ্ছেন না। ইতোমধ্যে তিনি স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। স্থানীয় নবাং-শ্রীধরা গ্রামের ঐক্যের প্রার্থী হলে তিনি নির্বাচন করবেন নতুবা সরে দাঁড়াবেন। গতকাল শনিবার রাতে নিজের ডাকা এক সভায় তিনি জনসমক্ষে এমন ঘোষণা দিয়েছেন। এবারের নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি অংশ না নিলেও তাদের সমর্থন যেকোন প্রার্থীকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। বিগত নির্বাচনের ফলাফল থেকে এ বিষয়টি আঁচ করা গেছে।
এদিকে, বিয়ানীবাজার পৌরসভায় এবার প্রথমবারের মতো ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এজন্য কেন্দ্র দখল ও ভোট কারচুপির আশঙ্কা না থাকায় বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের মধ্যে অনেকটা আশার সঞ্চার হয়েছে। বিশেষ করে আওয়ামী লীগে শক্তিশালী দু’জন বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকা বিএনপি সমর্থক একজন প্রার্থী হঠাৎ করে তৎপর হয়ে উঠেছেন। প্রকৃতির বৈরি আবহাওয়ার মধ্যে সম্ভাব্য মেয়র ও কাউন্সিলরদের সভা-সমাবেশে সরগরম হয়ে উঠেছে পুরো পৌর এলাকা। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়ে সাধারণ মানুষ ও ভোটারদের মন জয় করতে চাচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মেয়র পদে এ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১১ জন। এর মধ্যে, দলীয়ভাবে নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. আব্দুস শুকুর, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী মো. সুনাম উদ্দিন, কমিউনিস্ট পার্টির এডভোকেট মোহাম্মদ আবুল কাশেম। গতকাল জাপার চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের স্বাক্ষরিত লাঙ্গল প্রতীক পেয়েছেন সুনাম উদ্দিন। গত শুক্রবার রাতে কসবা এলাকাবাসীর সাথে নির্বাচনী মতবিনিময় করেন এডভোকেট আবুল কাশেম।
এদিকে, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী হিসেবে দু’জন স্বতন্ত্র নির্বাচন করতে পারেন- উপজেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু ও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ’৯৪ এর সাবেক জিএস ফারুকুল হক। নানা কারণে নির্বাচনী মাঠে এ দু’জনের বেশ পরিচিতি রয়েছে।
স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বিয়ানীবাজার পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন। তিনি ভোটের লড়াইয়ে এক হিসেবি খেলোয়াড়। সাধারণ মানুষের সাথে তাঁর নানাভাবে বোঝাপড়া রয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রভাষক মো. আব্দুস সামাদও কম নন। প্রার্থী তালিকার হিসেবে যেকোন সময় তিনি আলোচনার মধ্যখানে আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
এছাড়া, নানাবিধ কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সবার মুখে মুখে রয়েছেন আব্দুস সবুর। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী এ নেতা নবাং-শ্রীধরা গ্রামের ঐক্যের প্রার্থী হলে নির্বাচন করবেন নতুবা তিনিও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। আসন্ন বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনে নবাং-শ্রীধরা গ্রামের ঐক্যের প্রার্থী অনেকটা ফ্যাক্টর। এ ঐক্যের মধ্যে তিনজন শক্তিশালী প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, আওয়ামী লীগের আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, বিএনপির আবু নাসের পিন্টু ও বহুল আলোচিত আব্দুর রহিম বছন হাজির পুত্র গ্রাম্য বুদ্ধিজীবী আব্দুস সবুর। এ দু’গ্রামের ঐক্যের দিকে পৌরবাসী চেয়ে আছেন। এছাড়া, স্বতন্ত্র নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী অজি উদ্দিন, কানাডা প্রবাসী আহবাব হোসেন সাজু।
অপরদিকে, নৌকার মাঝি আব্দুস শুকুর ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুকুল হক একই গ্রামের। এ পর্যন্ত তাদের মধ্যে ঐক্য হওয়ার কোন আভাস পাওয়া যাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত কোন কারণে দু’জন নির্বাচন করলে ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।
উল্লেখ্য, বিয়ানীবাজার নির্বাচন অফিস থেকে আগামী ১৭ মে পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া যাবে। আগামী মাসের ১৫ জুন পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনে নারী-পুরুষ মিলে মোট ভোটার ২৭ হাজার ৩৬৯ জন।