বিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম: বিয়ানীবাজার পৌরসভা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। আগামী ১৫ জুন দ্বিতীয়বারের মতো এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঐদিন পৌরসভার ৯ ওয়ার্ডে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে।
গতকাল সোমবার তফসিল ঘোষণা করেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মো. হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৭ মে। বাছাই ১৯ মে এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ২৬ মে। প্রার্থীদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২৭ মে।
গতকাল সোমবার রাতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা সৈয়দ কামাল হোসেন বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো ভোটের ফাইনাল সিডি পাওয়া যায়নি। এজন্য ভোটারের সঠিক তথ্য এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, এবারের নির্বাচনে নারী-পুরুষ মিলে ভোটার ২৯ থেকে ৩০ হাজারের কাছাকাছি হবে।
এদিকে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে উঠেছেন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ আবারও দলগতভাবে অংশগ্রহণ করবে। কিন্তু বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, জাসদ দলগত, না স্বতন্ত্র নির্বাচন করবে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব হচ্ছে না। তবে, বিএনপি ও জামায়াত দলীয় না হলেও স্বতন্ত্রের মোড়কে শক্তিশালী প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে, এটা প্রায় নিশ্চিত। আবার, পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেনকে এবারও নির্বাচনী মাঠে দেখা যাবে। এলক্ষ্যে বেশ কিছুদিন থেকে তিনি নির্বাচনী হোমওয়ার্ক শুরু করেছেন।
১৫ জুন অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকার প্রতীকের জন্য মাঠে রয়েছেন বেশক’জন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরি কমিটির সদস্য ও দলের বিয়ানীবাজার উপজেলার সাবেক সভাপতি হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়া, বর্তমান মেয়র মো. আব্দুস শুকুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের ক্রীড়া সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুছ টিটু, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ ’৯৪ এর জিএস মৃত্যুঞ্জয়ী ছাত্রনেতা ফারুকুল হক, বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জামাল হোসেন। এবার আওয়ামী লীগে প্রার্থী বাছাই সঠিক না হলে আঞ্চলিকতার সমর্থন নিয়ে দলের একাধিক প্রার্থী বিদ্রোহী নির্বাচনের ঘোষণা দিয়ে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া বিগত ইউপি নির্বাচনের রেশও পৌরসভায় বর্তানোর আভাস পাওয়া গেছে। এজন্য নির্বাচন শুরুর আগেই দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। তবে, মেয়র প্রার্থী নির্ধারণে উপজেলা আওয়ামী লীগ দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখার সুযোগ পেলে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহীদের দমন করাও সম্ভব হতে পারে। বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার প্রতি আস্থাশীল দলের নিবেদীত নেতাকর্মীরা সেদিকে চেয়ে রয়েছেন।
এদিকে, বিগত নির্বাচনে বিএনপি’র ধানের শীষ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন আবু নাসের পিন্টু। তিনি তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শেষ পর্যন্ত পরাজিত হন। এবার তিনি প্রার্থী হবেন কি-না তা জানা যায়নি। নির্বাচনী মাঠেও তার সরব প্রচারণা চোখে পড়েনি। বিএনপি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নিলে প্রার্থী হতে পারেন পৌর বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমান রুমেল। তিনি নির্বাচন না করলে শেষ পর্যন্ত ট্রাভেলস ব্যবসায়ী ও ক্রীড়া সংগঠক আব্দুল হান্নান আঞ্চলিক ইস্যুতে নির্বাচন করতে পারেন। এছাড়া, উদীয়মান সমাজকর্মী প্রভাষক আব্দুস সামাদ দীর্ঘদিন থেকে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। তিনি মূলতঃ জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হলেও দক্ষিণাঞ্চলের সমর্থন নিয়ে স্বতন্ত্র নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে। কমিউনিস্ট পার্টির ব্যানারে নির্বাচন করতে পারেন এডভোকেট আবুল কাশেম। আবার, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হওয়ায় আগামীতে দেশি-বিদেশী আরো অনেক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে দেখা যেতে পারে।
জানা যায়, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে ২০০১ সালে বিয়ানীবাজার পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু সীমানা সংক্রান্ত মামলার কারণে প্রতিষ্ঠার ১৬ বছর পর প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল। ঐদিন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পর ৮ ওয়ার্ডে ফলাফল ঘোষণা করা হলেও কসবা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে মৃদু সংঘর্ষ ও জাল ভোটের অভিযোগ উঠায় নির্বাচন কমিশন ঐ কেন্দ্রে ভোট গণনা বন্ধ রাখে। পরবর্তীতে স্থগিত ৩নং ওয়ার্ডে ৮ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের মো: আব্দুস শুকুর পান ৫ হাজার ৮২ ভোট। পৌরসভার প্রথম নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চেয়ে ১১৯০ ভোট বেশী পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষের আবু নাসের পিন্টু পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৮৯২ ভোট ও তফজ্জুল হোসেন পেয়েছিলেন ৩ হাজার ৪৬২ ভোট।
এদিকে, বিয়ানীবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত মেয়র মো. আব্দুস শুকুর একই বছরের ২২ মে শপথ নেন এবং পরদিন দায়িত্বগ্রহণ করেন। এরপর থেকে তিনি বিগত ৫ বছর প্রবাসী অধ্যুষিত বিয়ানীবাজার পৌরসভার দায়িত্ব পালন করছেন।