সিলেট: জকিগঞ্জ রারাই এলাকার বাসিন্দা, আরব আমিরাতের সাবেক বিচারপতি, প্রখ্যাত শায়খুল হাদিস, ইছামতি দারুল উলুম কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ আল্লামা হাবিবুর রহমান ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ৬টার দিকে তিনি নিজ বাড়িতে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিলো ৮৯ বছর। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা রোগি ভোগছিলেন। উল্লেখ্য, গত এক সপ্তাহ আগে তাঁর স্ত্রীও ইন্তেকাল করেন।
মরহুমের জানাযার নামাজ মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৩টায় নিজ বাড়ির উত্তর পাশের মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এতে পরিচিত সকলের উপস্থিতি ও দোয়া কামনা করা হয়েছে।
এক বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী ছিলেন প্রতিথযশা এই আলেম। প্রচারবিমুখ এক বুযুর্গ ছিলেন আল্লামা হাবিবুর রহমান।
জন্ম:-আল্লামা হাবিবুর রহমান ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে সিলেটের জকিগঞ্জের রারাই এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মাওলানা মুমতায আলী (র.)।
নিজ এলাকায় প্রাইমারি শেষে প্রথমে জকিগঞ্জের পাশে ভারতের বদরপুর সিনিয়র মাদরাসায়, পরে কানাইঘাটের সড়কের বাজার আহমদিয়া মাদরাসায়, এরপর সিলেটের গাছবাড়ি জামেউল উলূম মাদরাসায় ভর্তি হন।
এই মাদরাসা থেকে তিনি পূর্ব পাকিস্তান মাদরাসা এডুকেশন বোর্ডের অধীনে ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে আলিম পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বাদশ স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে, ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে ফাযজিল পরীক্ষায় বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় তৃতীয় স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে, ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে হাদিস বিভাগে কামিল পরীক্ষায় বোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় দ্বাদশ স্থান লাভ করে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন।
এরপর ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে ছামতি দারুল উলূম সিনিয়র মাদরাসায় সহকারী মাওলানা পদে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি ফুলবাড়ি আজিরিয়া মাদরাসায় শিক্ষক হিসাবে যোগদেন। তবে এবছরই তিনি প্রধান মুহাদ্দিস হয়ে চলে যান সৎপুর দারুল হাদিস মাদরাসায়। ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি তিনি ইছামতি দারুল উলুম মাদরাসায় অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। এরপর কিছুদিন সৎপুর দারুল হাদিস মাদরাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব আদায় করেন। ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত আরব আমিরাতে ছিলেন। ১৯৮২ খ্রিস্টাব্দে দেশে আবার ইছামতি মাদরাসার অধ্যক্ষ পদে যোগদান করে ১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বৃটেন-আমেরিকা সহ বিশ্বের বেশকিছু দেশ সফর করেছেন। রাজনৈতিক জীবনে তিনি নেজামে ইসলাম পার্টি এবং বাংলাদেশ আঞ্জুমানে আল-ইসলাহ’র সাথে সম্পর্কিত ছিলেন। আধ্যাত্মিকতায় তিনি আল্লামা আব্দুল লতিফ ফুলতলী (র.)-এর খেলাফতি লাভ করেন। ২০০০ খ্রিস্টাব্দে তিনি জকিগঞ্জের থানাবাজারে হিফজুল কুরআন মাদরাসা ও এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করেন।
রচনার জগতে অবদান: লেখালেখিতেও শায়খুল হাদিস আল্লামা মো. হবিবুর রহমানের প্রচুর অবদান রয়েছে। ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের দিকে তাঁর সম্পাদনায় সিলেট শহর থেকে ‘মাসিক শাহজালাল’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশিত হয়, যা ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত চালু ছিলো। তাঁর লেখা ১৭টি বই প্রকাশিত হয়েছে বলে জানা যায়; ১. আল কাউলুল মাকবুল ফী মিলাদির রাসুল (১৯৭৭ খ্রি.), ২. দোয়ায়ে মাসনুনা ও তেত্রিশ আয়াতের ফজিলত (২০১০খ্রি.), ৩.মাসআলায়ে উশর : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ (২০০৬ খ্রি.), ৪.দুরূদ শরীফের ফযীলত ও ওযীফা (১৯৯৯ খ্রি.), ৫. যিয়ারতে মদীনা মুনাওয়ারা (১৯৯৯ খ্রি.), ৬. আসহাবে বদর (১৯৯৮ খ্রি.), ৭. ওযীফা (১৯৯৮ খ্রি.), ৮. হজ্জ ও যিয়ারত (১৯৯৯ খ্রি., ৯. হাদিয়াতুল লাবীব ফী নাবযাতিম মিন সীরাতিন নাবিয়্যিল হাবীব (আরবী ভাষায় লেখা সংক্ষিপ্ত সীরাতের কিতাব, ২০১১ খ্রি.), ১০. যাখীরাতুল আহাদীসিল আরবাঈন ফী ফাদায়িলি সায়্যিদিল মুরসালীন (২০১১খ্রি.), ১১. কানযুল আহাদীসিল আরবাঈন ফী মানাকিবি আহলি বাইতিন নাবিয়্যিল আমীন ( ২০১১খ্রি.), ১২. তুহফাতুল লাবীব বিআসানীদিল হাবীব (১৯৮৫ খ্রি.), ১৩. আত তুহফাতুল লাতীফাহ ফী আহাদীসিল মুসালসালাতিল মুনীফাহ (২০০৯ খ্রি.), ১৪. দালাইলুল খাইরাত (২০১০ খ্রি.), ১৫. আল হিযবুল আযম (২০১৬ খ্রি.), ১৬. দারসে হাদীস-১ (২০১৮ খ্রি.), ১৭.সালাতুত তারাবীহ (২০১৯ খ্রি.)।