জনগণ ভ্যাট দেওয়াতে সরকার নিজস্ব
অর্থায়নে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে
—- এনবিআর সদস্য শাহীন আক্তার
সিলেট: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর প্রশাসন ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সদস্য মিজ শাহীন আক্তার বলেছেন, জাতীয় অর্থনীতির মূল যোগানদার হলো রাজস্ব বোর্ড। দেশের জনগণ ভ্যাট দেয় বলেই সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মতো মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রূপকল্প ২০৪১ হচ্ছে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। আর এটি বাস্তবায়ন করতে হলে ভ্যাট ও কর বিভাগের প্রত্যেক অংশীজনের অবদান থাকতে হবে। তাহলেই সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে সিলেট নগরীর একটি অভিজাত হোটেলের হলরুমে জাতীয় ভ্যাট দিবস ও ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন উপলক্ষে সেমিনার ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ভ্যাট ও ট্যাক্স বিভাগের কর্মকর্তা এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সংবাদকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের মিজ শাহীন আক্তার আরো বলেন, দেশের উন্নয়ন কর্মকা- বাস্তবায়নে এক সময় বৈদেশিক সাহায্য ছিল অপরিহার্য। কিন্তু বর্তমান সরকার পরনির্ভরশীলতা কাটিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে উন্নয়নযজ্ঞ চালিয়ে যেতে সক্ষমতা অর্জন করেছে। এজন্য সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে আমাদেরকে বেশি করে ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে হবে।
তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে সচেতনা বৃদ্ধি কিংবা সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মূলতঃ ভ্যাট দিবস উদযাপন করা হয়। এর ফলে করদাতাদের সঙ্গে ভ্যাট বিভাগের সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে। তিনি সরকারি নির্দেশনাগুলো মেনে সরকারের সঙ্গে হাত মেলানো, ব্যবসায়ী ও কমর্মকর্তাদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরী করে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। তিনি সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী পুরস্কারপ্রাপ্ত ৮ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারদের ধন্যবাদ জানান।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের কমিশনার মোহম্মদ আহসানুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সিলেট অঞ্চলের কর কমিশনার মো. সাইফুল হক, সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি’র সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব, সিলেট উইমেন্স চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি স্বর্ণলতা রায়। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিলেটের অতিরিক্ত ভ্যাট কমিশনার রাশেদুল ইসলাম।
অনুষ্ঠানে কর কমিশনার মো. সাইফুল হক বলেন, ভ্যাট ও ট্যাক্স এখন ডিজিটাল যোগে প্রবেশ করেছে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের রোল মডেল। তিনি বলেন, দেশে ’৯১ সাল থেকে ভ্যাটের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বর্তমানে ভ্যাট বিভাগ মহীরূহ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চেম্বার সভাপতি আবু তাহের মো. শোয়েব বলেন, সিলেটের ব্যবসায়ীদের আত্মসম্মান আছে। তারা ভ্যাট, ট্যাক্স দিতে স্বচ্ছন্দবোধ করে। তবে কোনো ধরণের পুলিশি চাপ প্রয়োগ না করে ব্যবসায়ীদের বুঝিয়ে ও সহমর্মিতা দেখিয়ে ভ্যাট আদায় করুন।
তিনি বলেন, সিলেটে বড় কোনো শিল্পায়ন নেই। কেবল ট্রেডিং ব্যবসার উপর নিভর্রশীল। তাছাড়া কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের যারা সিলেটে ব্যবসা করছেন, তাদের ভ্যাট সিলেটের কোটায় নেয়া হলে এ অঞ্চলের ব্যবসয়ীদের উপর থেকে ভ্যাটের চাপ কমবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ এ নেতা আগামীতে ক্যাটাগরি ভিত্তিক পুরস্কার প্রদানের আহ্বান জানান।
স্বর্ণলতা রায় বলেন, বৈশ্বিক করোনা ভাইরাসে গত দু’বছর ব্যবসায়ীরা চরম দুর্দিনে ছিলেন। এ অবস্থায় সকলের পক্ষে ভ্যাট প্রদান করা সম্ভব হয়নি। তিনি ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ১৫ ভাগ ভ্যাট থেকে নামিয়ে তা ৭ ভাগ করার দাবি জানান।
সভাপতির বক্তব্যে ভ্যাট কমিশনার মোহম্মদ আহসানুল হক বলেন, ১৯৯১ সালের ১ জুলাই থেকে বাংলাদেশে ভ্যাট ব্যবস্থা সূচিত হয়। সরকার এ দিনটির গুরুত্ব বিবেচনা করে ২০১৩ সাল থেকে প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর “ভ্যাট দিবস” এবং ১০-১৫ ডিসেম্বর “ভ্যাট সপ্তাহ উদযাপন করছে। তিনি বলেন, করোনাকালেও বিগত বছরের ন্যায় এবার সিলেটে উচ্চতর প্রবৃদ্ধির মূসক আদায় হয়েছে। সিলেটের ব্যবসায়ী এবং মূসক কর্মকর্তাদের সদিচ্ছার ফলে তা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে বলেও জানান তিনি।
অনুষ্ঠানে সিলেট বিভাগের সর্বোচ্চ ভ্যাট প্রদানকারী ৮ প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। এ সময় প্রধান অতিথি মিজ শাহীন আক্তার এর কাছ থেকে প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন, শ্রীমঙ্গলের মেসার্স সাদেক স্টোর এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. আশিকুর রহমান, কুলাউড়ার সাউথ সিলেট এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী হাসিব হোসেন খান, গোলাপগঞ্জের এলপি গ্যাস লিমিটেড এর সহকারি ব্যবস্থাপক আব্দুল মোনায়েম খান, বিয়ানীবাজারের আলিসা মটরস এর পরিচালক জুয়েল আহমদ, সুবিদবাজারের আনন্দ নিকেতন লিমিটেড এর পরিচালক সাবের নাঈম চৌধুরী, মাধবপুরের শাহজীবাজারের চারু সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড এর ব্যবস্থাপক এম এম কামাল উদ্দিন, হবিগঞ্জ সদরের মেসার্স শরীফ ইলেকট্রনিক্স এর স্বত্ত্বাধিকারী মো. শরিফুল ইসলাম ও সুনামগঞ্জের পানসী রেস্টুরেন্ট এর স্বত্ত্বাধিকারী সালাহ উদ্দিন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন মাওলানা মঞ্জুর আহমদ।