ছাদেক আহমদ আজাদ
রবীন্দ্র সংগীতের ‘আজি মেঘ কেটে গেছে সকালবেলায়’ গানের দু’টি উপমা ‘দুঃখ সুখের বাঁধন তারি গ্রন্থি’ দিব খুলে/আজি ক্ষণেক-তরে মোরা রব আপন ভুলে।’ এই সুর লহরির সঙ্গে বিয়ানীবাজারের জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৪জন প্রাক্তন শিক্ষককে সম্মান জানানো হচ্ছে। এর মধ্যে ৭জন শিক্ষক পাচ্ছেন মরণোত্তর সম্মাননা।
জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের ১৯৮২ থেকে ১৯৮৭ সালের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা আজ শনিবার সকাল ১০ টায় স্কুল প্রাঙ্গণে ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। এতে শিক্ষকদের সম্মাননা স্মারক, আর্থিক সহায়তা ও ইন্টারনেট সুবিধাসহ স্মার্ট ফোন প্রদান করা হবে। স্কুলের ‘৮২-৮৭ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের পক্ষ থেকে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সকলের উপস্থিতি কামনা করা হয়েছে।
অনুষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা আব্দুল কুদ্দুছ জানান, আমরা ১৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ৭ জনকে মরণোত্তর এবং অপর ৭ শিক্ষক অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সম্মাননা স্মারক গ্রহণ করবেন। তিনি আরো জানান, শুধুমাত্র শিক্ষক নন, অনুষ্ঠানে আমরা অবসরপ্রাপ্ত দু’জন অফিস সহকারীকেও সম্মান জানাবো।
মরণোত্তর সম্মাননায় ভূষিত শিক্ষকরা হলেন, জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আজির উদ্দিন, প্রধান শিক্ষক মো. আকমল আলী, সহকারি শিক্ষক মো. হারিছ আলী, নৃপেন্দ্র কুমার দাস, রঙ্গ বিহারী দাস, মো. রইছ আলী ও মাওলানা মো. ছরকুম আলী।
এছাড়া সম্মাননা পাচ্ছেন, একই স্কুলের প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুল হাছিব, প্রাক্তন সহকারি শিক্ষক মো. কবির খান, অদ্বৈত্য কান্ত দাস, মাওলানা মো. মাহমুদুর রহমান, বিধান চন্দ্র দাস, শ্যামা কান্ত দাস, মো. সাহাব উদ্দিন। ব্যতিক্রমী এ অনুষ্ঠানে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা দু’জন অবসরপ্রাপ্ত অফিস সহকারী সজল ও সুনীল দাসকে সম্মান জানানো হবে।
এ প্রসঙ্গে শিক্ষক সম্মাননায় ভূষিত সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. কবির খান এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলেন, প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাক্তন শিক্ষক হিসেবে সম্মান পাওয়া অনেক আনন্দের এবং গৌরবের। তিনি বলেন, শিক্ষকরা কর্মজীবনে থাকলে যে সম্মান পান, অবসরে গেলে তাদেরকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হয় না। এমন সময়ে প্রাক্তন ছাত্রছাত্রী তাদের শিক্ষকদের খুঁজে বের করে সম্মান জানাবে, তা কল্পনাতীত। এরমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন এমন ৭ শিক্ষক রয়েছেন।
’৮২-৮৭ বর্ষের শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয় উল্লেখ করে স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক কবির খান বলেন, শিক্ষকদের প্রতি সম্মান জানানোর উদ্যোগে অনুমিত হচ্ছে তাদের হৃদয়ে আমাদের ‘শিক্ষক’ স্থান রয়েছে। দৃষ্টান্তমূলক এ অনুষ্ঠান থেকে ভালো কাজে আরো শিক্ষার্থী অনুপ্রাণীত হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
পাইলট স্কুলের প্রধান শিক্ষক কবির খান আরো বলেন, শিক্ষকরা মরেও অমর। জলঢুপ স্কুলের ৭ শিক্ষককে মরণোত্তর সম্মান জানানোর উদ্যোগ তাদের পরিবারের জন্য বড় পাওনা। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সচরাচর এভাবে মূল্যায়ন করলে আগামীতে এ পেশায় তরুণ প্রজন্ম আরো আকৃষ্ট হবে। তিনি প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের এ উদ্যোগকে ধন্যবাদ জানিয়ে তাদের সকল ভালো কাজে সহযোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
এদিকে, শিক্ষকদের সম্মান জানানোর এ অনুষ্ঠানে অতিথিও করা হয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বরেণ্য সাংবাদিকদের। তাঁরা প্রত্যেকেই জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন, সিলেট শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ রফিক আহমদ, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক দ্বারকেশ চন্দ্র নাথ, বিয়ানীবাজার সরকারী কলেজের সাবেক প্রভাষক প্রেমানন্দ নাথ, জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কবি ও সাংবাদিক মুস্তাফিজ শফি, দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব আজিজুল পারভেজ।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ওই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র চ্যানেল এস’র রিপোর্টার ফয়সল আহমদ রুহেল এর উদ্যোগে লন্ডন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে থাকা সহপাঠিদের নিয়ে ‘বন্ধু ৮২-৮৭ জলঢুপ উচ্চ বিদ্যালয়’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ গঠন করেন। এ গ্রুপের পক্ষ থেকে প্রাক্তন শিক্ষকদের এ সম্মান জানানো হচ্ছে।