বিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম: বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগে অনৈক্যের ডামাঢোল বাজছে। স্বাধীনতা ও নৌকা প্রশ্নে একপক্ষ অনঢ় থাকলেও অপরপক্ষ নুুরুল ইসলাম নাহিদের উপর ভরসা রেখে রাজনীতি চালিয়ে যাচ্ছেন। সঠিক নেতৃত্বের অভাবে দু’পক্ষের মধ্যে ঐক্য হওয়ার ন্যূনতম সম্ভাবনাও এ মুহূর্তে দেখা যাচ্ছে না।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ গুজব এবং ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা তৈরি এবং পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ কার্যক্রমেও স্থানীয় আওয়ামী লীগে অনৈক্য দেখা যায়। গত মঙ্গলবার দলের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খানের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ডেঙ্গু নিধনে সচেতনতা ও জাতীয় শোক দিবস পালনের লক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপজেলা ও ইউনিয়ন আ’লীগের পাশাপাশি মহিলা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। যদিও এ সভায় উপজেলা আ’লীগের সভাপতি হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়াকে দেখা যায়নি।
আয়োজকরা জানিয়েছেন, নৌকাবিরোধীদের কারণে তাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে এবং হচ্ছে। অথচ আ’লীগ সভাপতি ও তাঁর অনুসারি কতিপয় নেতা নৌকাবিরোধীদের সাথে নিয়ে নুরুল ইসলাম নাহিদের সভায় যাচ্ছেন, উল্লাস প্রকাশ করছেন। ওসমানী স্টেডিয়ামে মেলার নামে জুয়া-নৃত্য কারা করাচ্ছেন তাও আমাদের অজানা নয়। এজন্য আমরা চিহ্নিত কতিপয় নেতাকে বয়কট করে রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। সময় এলে এসবের মূলহোতো জনপ্রতিনিধিকেও জবাব দেব।
এদিকে, বিগত কিছুদিনের দলীয় কার্যক্রম দেখে বোঝা যাচ্ছে সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান খানের সাথে উপজেলা ও ইউনিয়ন আ’লীগের দায়িত্বশীল নেতারা রয়েছেন। তাঁরা উপজেলা নির্বাচনে নৌকাবিরোধীদের সাথে বসে রাজনীতি করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এজন্য সাবেক মন্ত্রী নাহিদের ডাকেও তাঁরা সাড়া দেননি। এক্ষেত্রে উপজেলা আ’লীগ সভাপতি হাজি আব্দুল হাছিব মনিয়া অনেকটা কৌশলী রাজনীতি করছেন। তিনি প্রকাশ্যে গ্রæপিং সভা-সমাবেশ না করলেও তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো খÐন করে ভেতরে ভেতরে নেতাকর্মীর মন জয়ের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
যদিও রাজনীতির এ দুর্যোগ মুহূর্তে হাছিব মনিয়ার পাশে নেই সাবেক ছাত্রনেতা দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল! রাজনীতিতে দূরদর্শীতার বিকল্প নেই; এই ছকে এগুচ্ছেন আউয়াল। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, দলের বড় পদ পেতে মনিয়া-আতাউর তাঁর কাছে সমানে সমান। বিগত পৌর ও উপজেলা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার দৃশ্য কূটকৌশলী আউয়াল এখনো ভুলতে পারেননি। তিনি কড়াগড়ায় হিসেব মেলাতে এখন নিজেকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
একাধিক সূত্রমতে, দলের সভাপতি ও বয়োজ্যোষ্ঠ রাজনীতিক হাছিব মনিয়াকে মাইনাস করে আতাউর খান সমর্থকরা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করেছেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর এ অনুষ্ঠানে উপজেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দ ছাড়াও প্রায় প্রত্যেক ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত ছিলেন। এর কিছুদিন পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি বিয়ানীবাজার সফরে আসেন। উপজেলা আ’লীগের কার্যকরি কমিটি এবং ইউনিয়নের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিয়ে বৈঠকে বসেন। কিন্তু এ বৈঠকে সভাপতি আব্দুল হাছিব মনিয়া, উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী মোহাম্মদ জাকির হোসেনসহ হাতেগোনা কয়েক নেতা এবং তিলপাড়া ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ব্যতীত কেউ উপস্থিত হননি। এ থেকে দলীয় রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে মোড় নিয়েছে তা অনেকেই অনুধাবন করতে পেরেছেন।
রাজনীতিক নুরুল ইসলাম নাহিদেরও বুঝতে অসুবিধা হয়নি। মনিয়া-আউয়াল মিলে উপজেলা যুবলীগের একটি রূপরেখা সাবেক মন্ত্রী নাহিদের কাছে পাঠিয়েছিলেন। অপরদিকে, আতাউর খান-বাবুল-দীপু মিলে আরেকটি তালিকা পাঠান বিচক্ষণ রাজনীতিক নাহিদের কাছে। তিনি দু’টি তালিকা হাতে নিয়ে নিজের খলিফাদের দেওয়া তালিকা পাঠান যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমন ফারুকের কাছে। যদিও এ তালিকায় নুরুল ইসলাম নাহিদের কোন সুপারিশ ছিলনা। এ কারণে জেলা যুবলীগের সম্মেলনের আগে বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিটি হওয়ারতো দূরের কথা, এ তালিকার একজনও সম্মেলনে কাউন্সিলর হতে পারেননি। এমপি নাহিদ খলিফাদের কাছে জিম্মি নয়, এ ঘটনার মধ্য দিয়ে তিনি দলীয় নেতাকর্মীর কাছে স্বচ্ছ ম্যাসেজ পৌঁছাতে পেরেছেন বলে অনেকেই মনে করছেন।
কথিত রয়েছে, নুুরুল ইসলাম নাহিদ ১০ বছর মন্ত্রী থাকাকালে যারা কূটকৌশল এঁটে কিছু ব্যক্তিবিশেষের কাছ থেকে তাঁকে দূরে রেখেছিলেন। তাদের কারণে তিনি জননন্দিত না হয়ে খলিফানন্দিত হয়েছিলেন। তারাই এখন নাহিদের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতায় অন্ধ কিংবা কালো টাকার ভাগবাটোয়া পেতে প্রকাশ্যে হাত মিলিয়ে চলছেন। এতে দলমত নির্বিশেষে পুরো বিয়ানীবাজার কেন, সিলেটবাসী হতাশ ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তাদের প্রতি তিরস্কার, ধিক্কার দিচ্ছেন। পাশাপাশি যারা সত্যিকার অর্থে ব্যক্তি নাহিদকে ভালোবাসেন, তাঁর সার্বিক মঙ্গল চান; তাদেরকে কোনঠাসা করার হীনচেষ্টায় খলিফারা ব্যস্ত। হয়তো বিষয়টি আঁচ করতে পেরেছেন নুরুল ইসলাম নাহিদও।
দলীয় পদ ও ক্ষমতা থেকে দূরে অনেকের মতে, সিলেট-৬ আসনের সত্যিকার উন্নয়নের রূপকার সাবেক মন্ত্রী নুুরুল ইসলাম নাহিদ এমপি। এজন্য তাঁর আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা থাকার কথা ছিল। কিন্তু এমনটি না হয়ে কেন নাহিদকে ঘায়েলের শিকার হতে হয়েছে তা বিচার-বিশ্লেষণ করা অনেকটা জরুরি। আবার আওয়ামী লীগের মধ্যে ঐক্য ফিরিয়ে আনতে নুরুল ইসলাম নাহিদকে উদ্যোগী হওয়ার আহ্ব্বান জানিয়েছেন দলের তৃণমূল নেতাকর্মীরা।