ফলোআপ: ‘সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের উপর নজরদারী বাড়ানোর দাবী’
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৭ জুন ২০১৯, ২:২১ অপরাহ্ণছাদেক আহমদ আজাদ: ‘আম্মু, অ আম্মু, আম্মু দুধ দে’ ভেঙ্গে ভেঙ্গে এমন কথা বলেও একসপ্তাহ থেকে মায়ের দেখা পাচ্ছে না ১৮ মাসের শিশু আফরোজা জান্নাত নুরী। দু’খালা, নানী ও দু’মামা নুরীকে আদর সোহাগ দিয়ে আগলে রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু শিশু নুরী এখনো জানতে পারেনি ইহজগতে আর কখনো মায়ের সাথে তার দেখা হবেনা। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে নুরীকে বড় হতে হবে।
গত রোববার দুপুরে বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়নের উত্তর চন্দগ্রামে স্বামীর বাড়ির রান্নাঘরে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় গর্ভধারিনী মা রিমা বেগমের রহস্যজনক মৃত্যু ঘটায় এমন করুণ পরিণতির শিকার হয়েছে শিশু নুরী।
কাতার প্রবাসী স্বামী জুবেল আহমদ স্ত্রী রিমাকে খুবই ভালোবাসতেন। তিনদিন আগে স্ত্রীর জন্য একটি উন্নতমানের মোবাইল ফোন পাঠিয়েছেন। স্বামীর দেয়া ফোন পেয়ে রিমা খুব আনন্দ করেছে। কিন্তু তার আকস্মিক মৃত্যু প্রবাসে থাকা জুবেল কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তিনি যেভাবে হোক মৃত্যুর কারণ উদ্ঘাটনের জন্য বাড়ির লোকদের ফোনে অনুরোধ করেছেন। এজন্য করণীয় ঠিক করতে মঙ্গলবার (আজ) সন্ধ্যায় ঐ গোত্রের সব লোক একত্রিত হবেন। এসব কথা জানান মৃত রিমার ভাই সাহেল আহমদ।
তিনি আরও জানান, ‘আমার ভাগ্নি এখনো সবকিছু বুঝছে না। এজন্য দিনে কম কিন্তু রাতের বেলা ‘আম্মু, অ আম্মু, আম্মু দুধ দে’ এসব কথা বলে কান্নাকাটি করে। আমার মা ও দু’বোন তাকে মাতৃস্নেহ দিয়ে যাচ্ছেন।’
এদিকে একসন্তানের জননী রিমা বেগমের মৃত্যু প্ররোচিত আত্মহত্যা কিংবা পরিকল্পিত হত্যাও হতে পারে। রিমার চোখ, মুখ ও জিহ্বা একজন স্বাভাবিক মৃত মানুষের মতো হওয়ায় তার মা জয়নব বেগম ও ভাই সাহেল আহমদ এটাকে আত্মহত্যা বলে মেনে নিতে পারছেন না। তাদের দাবী, রিমাকে বালিশ চাপা দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তারা অবিলম্বে রিমার ননদ জামাই হোসেন আহমদ ও শ্বশুর-শ্বাশুরিকে জিজ্ঞাসাবাদ করার জোর দাবী জানান। পাশাপাশি তারা হোসেন আহমদ যেকোন সময় দেশত্যাগ করতে পারে বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মামুনুর রশীদ মামুনও একই সুরে কথা বলছেন। এ প্রতিবেদকের সাথে সেলফোনে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘রিমা মেয়েটা অত্যধিক ভালো। আমালও (নামাজ রোজা) তার ঠিক আছে।
তিনি বলেন, দুঃসংবাদের খবর পেয়ে বাড়িতে গিয়ে রিমার মরদেহ দেখেছি। এতে আমার কাছে আত্মহত্যা বলে মনে হয়নি। কারণ অনেক আত্মহত্যার মরদেহ দেখেছি কিন্তু রিমার সাথে মিল মোটেও পাইনি। তার মুখে ফেনা কিংবা দাঁত দিয়ে জিহ্বাতে কামড় নেই। এসব কারণে চেয়ারম্যান মামুন তার সন্দেহের কারণ জানান।
পাশাপাশি ইউপি চেয়ারম্যান মামুন এ ঘটনায় বিভিন্নভাবে প্রকাশিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের নজরদারিতে রাখতে পুলিশ প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার এসআই সিরাজুল ইসলাম বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের করার কিছু নেই। এ সময়ে সন্দেহভাজনরা দেশত্যাগ করলেও আইনানুগভাবে তাদেরকে আটকাতে পারবো না।
উল্লেখ্য, বিয়ানীবাজারে গৃহবধূ রিমার মৃত্যু: প্ররোচিত আত্মহত্যা, না পরিকল্পিত হত্যা? শিরোনামে গতকাল অনলাইনে অপর একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ হয়।