৮ লাখ চুক্তি করে ইটালি পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় সিলেটের দালাল এনাম
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ১৩ মে ২০১৯, ৩:৩৭ অপরাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম।।। ইটালি যাওয়ার পথে তিউনেসিয়ার কাছে ভূমধ্যসাগরে ট্রলার ডুবে মারা যাওয়া ও উদ্ধার হওয়া বেশিরভাগ যাত্রীই সিলেটের। এর মধ্যে মারা যাওয়া ৭ জন ও উদ্ধার হওয়া দুইজনের পরিচয় জানা গেছে। সিলেটের সকল যাত্রী অবৈধ পথে ইটালির উদ্দেশ্যে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন মো. এনামূল হক নামের এক দালালের হাত ধরে। নিরাপদে ইটালি পৌঁছে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাদেরকে উদ্ধুদ্ধ করে চুক্তি হয়েছিল ৮ লাখ টাকার। যাত্রীদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে টাকাও হাতিয়ে নেয় দালাল। গত বৃহস্পতিবার ট্রলার ডুবির ঘটনার পর এনামূল হক নামের ওই দালাল তার প্রতিষ্ঠানে তালা দিয়ে পালিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিলেট নগরীর রাজাম্যানশনের ৩য় তলার ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজ’র মালিক মো. এনামূল হকের বাড়ি গোলাপগঞ্জ উপজেলার মেহেরপুর এলাকার পনাইরচক গ্রামে। ওই গ্রামের মৃত মো. আবদুল খালিকের ছেলে এনাম।
২০১৬ সালের ১ ডিসেম্বর মাসিক ৭ হাজার টাকা ভাড়া চুক্তিতে রাজাম্যানশনের ৩য় তলার ১১৭ নম্বর দোকান ভাড়া নেন এনামুল হক। সেখানে সাইনবোর্ড টানান ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজ’র। ট্রাভেলস ব্যবসায়ের আড়ালে মূলত মানবপাচারই ছিল তার ব্যবসা। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে লোভনীয় উপার্জনের স্বপ্ন দেখিয়ে সিলেটের বেকার যুবকদের উদ্ধুদ্ধ করতো সে। এরপর দালালচক্রের মাধ্যমে তাদেরকে বিভিন্ন দেশে পাঠানোর চেষ্টা করতো।
ভূমধ্যসাগরে ট্রলারডুবিতে এনামের পাঠানো যাত্রীদের মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাজাম্যানশন মার্কেটে তার পরিচিতি ছিল একজন ভালো ট্রাভেলস ব্যবসায়ী হিসেবে। গত বৃহস্পতিবার নৌকাডুবিতে প্রাণহানীর ঘটনার পর ধীরে ধীরে বের হতে থাকে এনামের মানবপাচারের ঘটনা। এনাম যে মানবপাচার চক্রের সাথে জড়িত তা গেলো আড়াই বছরেও ঘুনাক্ষরেও জানতে পারেননি- দাবি ওই মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মাসুদ আহমদের।
তবে ট্রাভেলসের আড়ালে গোপন ব্যবসার আলামত আগেই পেয়েছিল অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্ট অব বাংলাদেশ (আটাব)। তাই তার ট্রাভেলসকে দেয়া হয়নি আটাবের সদস্যপদ। আটকে রাখা হয়েছিল তার আবেদন।
এ ব্যাপারে আটাব সিলেটের সভাপতি আবদুল জব্বার জলিল জানান, ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজ’র ব্যবসা নিয়ে আমাদের সন্দেহ ছিল। তাই আবেদনের পরও তাকে আটাবের সদস্যপদ দেয়া হয়নি। তার কার্যক্রম আমরা পর্যবেক্ষণ করছিলাম। এর মধ্যেই তার মানবপাচারের বিষয়টি ধরা পড়লো। এরকম আরও যেসব অবৈধ ট্রাভেলস ব্যবসায়ী মানবপাচারের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া উচিত।’
এদিকে, ট্রলার ডুবিতে মৃত্যুর ঘটনার পর থেকে ‘নিউ ইয়াহিয়া ওভারসিজে’ তালা ঝুলিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে এনামূল হক। গতকাল রবিবার রাজাম্যানশনের তৃতীয় তলায় গিয়ে দেখা গেছে দোকানে তালা ঝুলছে। ট্রাভেলসের সাইনবোর্ডে লেখা দুটো ফোন নাম্বারই বন্ধ ছিল। এনামের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনটিও ছিল বন্ধ।
প্রসঙ্গত, ভূমধ্যসাগরে তিউনেসিয়া উপকূলে ট্রলার ডুবিতে মারা যাওয়া অভিবাসীদের মধ্যে সিলেটের ৭ জনের পরিচয় জানা গেছে। উদ্ধার হওয়াদের মধ্যে সিলেটের দুই যুবক রয়েছেন। তারা সবাই নিউ ইয়াহিয়া ওভারসীজের মালিক এনামূল হকের মাধ্যমে ইটালী যাওয়ার চেস্টা করছিলেন।
ক্রাইম সিলেট/কালাম/এস