ভেজালে সয়লাব সিলেটের রাজমহল-রিফাত-মধুবন-স্বাদ
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০৯ মে ২০১৯, ৪:৪৩ পূর্বাহ্ণসিলেটঃ রিফাত থেকে মধুবন, রাজমহল থেকে স্বাদ সব প্রতিষ্ঠানেই ভেজাল। প্রায় প্রতিদিন জরিমানা গুণতে হলেও টনক নড়ছেনা এইসব অভিজাত খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তাদের।
আর রমজানের শুরুতে তাদের কারখানা বা শো-রুমের পরিবেশ ও ভেজাল পণ্যের সমারোহ দেখে আতংকিত হয়ে পড়েছেন সচেতন মানুষ। তারা প্রশ্ন তুলছেন, তথাকথিত আভিজাত্যের মোড়কে ঢাকা এইসব প্রতিষ্ঠান থেকে সারাবছর তারা খাদ্যপণ্য কিনেতো তারা প্রতারিত হয়েছেন বা হচ্ছেন।
সিলেটে যেক’টি মিষ্টিজাত খাবার প্রতিষ্ঠান আভিজাত্যের মোড়কে নিজেদের আবৃত করে চুটিয়ে ব্যবসা করছে, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য রিফাত অ্যান্ড কোং, মধুবন, রাজমহল ও স্বাদ।
এসব প্রতিষ্ঠানে নানা ধরণের মিষ্টিজাত খাবার, বিস্কুট, দই ও দুগ্ধজাত অন্যান্য খাদ্যপণ্য উৎপাদন করা হয়। এগুলোর মান যাইহোক না কেন, তাদের চাকচিক্য ও প্রচারণায় মোহগ্রস্ত হয়ে সিলেটের মধ্যবিত্ত থেকে অভিজাত শ্রেণীর মানুষজন হুমড়ি খেয়ে পড়েন।
নিজেদের জন্যতো বটে, আত্মীয়স্বজনের বাড়ি বেড়াতে যেতেও তারা এসব প্রতিষ্ঠানের উপর ভরসা রাখেন। তবে মাঝেমাঝেই এগুলোর গুমর ফাঁস হয়ে যায়। কখনো কারখানা, কখনোবা শো-রুমগুলো থেকে জব্ধ করা হয় মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য।
শুধু কি তাই? প্রায়ই নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদন ও পরিবেশনের কারণে মোটা অংকের জরিমানা গুণতে হয় তাদের।
এবার রমজানের শুরুতেও তাই। পহেলা রমজান (৭ মে) জিন্দাবাজারের সহির প্লাজাস্থ রিফাতের শো-রুমে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমান আদালত। সেদিন বিভিন্ন ধরণের মেয়াদ উত্তীর্ণ খাদ্যদ্রব্য পাওয়া গেছে যা বিক্রির চেষ্টা করছিলেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা। সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্যাট মাত্র ৮ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেন তাদের।
এতে চরম অসন্তুষ্ট কয়েকজন কাষ্টমার। জিন্দাবাজার এলাকারই ব্যবসায়ী হারুনুর রশীদ (৪৫) সিলেটভিউর সাথে আলাপকালে বলেন, তাদের উপর ভরসা রাখা আমাদের পাপ। তাই সরলতার ও ব্যস্ততার সুযোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সাথে সংশ্লিষ্টরা কাষ্টমারদের জীবনকে ঝুঁকির মুখে ফেলছেন।
হারুনের প্রশ্ন, আমাদের জীবন কি এতই সুলভ যে, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকির কাজ করেও, ভেজাল পণ্য বিক্রির অপরাধে মাত্র ৮ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেই দায়িত্ব শেষ করা হবে?
তার দাবি, প্রয়োজনে ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধন করে রিফাতের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য আরো কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।
এদিকে রমজানের দ্বিতীয় দিনেই গোমর ফাঁস হয়েছে আরো ৩টি তথাকথিত অভিজাত খাবার প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের। সেগুলো হচ্ছে স্বাদ, রাজমহল ও মধুবন।
বুধবার বিকেলে সিলেট জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্র্যাট শাহিনা আক্তার নগরীর স্টেশন রোড ও বাবনার মোড় এলাকায় ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন।
এসময় প্রচুর মেয়াদ উত্তীর্ণ খাবার ও পানীয় জব্দ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি থেকে আদালত তাৎক্ষনিকভাবে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
এরপর আরেক তথাকথিত অভিজাত প্রতিষ্ঠান বাবনা পয়েন্টের রাজমহলেও পাওয়া যায় একই ধরণের পণ্য। মেয়াদ উত্তীর্ণ দই, কোমল পানীয় ও আরো কয়েকটি দুগ্ধজাত পণ্য পাওয়ায় ভ্রাম্যমান আদালত তাৎক্ষনিক ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।
সিলেট ষ্টেশন রোড এলাকার মধুবন শাখাকেও ভ্রাম্যমান আদালত ৫ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন। তাদের অপরাধ, অত্যন্ত নোংরা পরিবেশে খাবার সংরক্ষণ ও বিক্রি যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
কোটি কোটি টাকা মুনাফার অর্জনের মাধ্যমে পকেট ফুলেফেঁপে দিনদিন বড় হতে থাকলেও এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকরা জনগনের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে শতভাগ উদাসীন। বারবার ভ্রাম্যমান আদালতের জরিমানা তাই প্রমাণ করে।
বিষয়টি নিয়ে আলাপকালে দক্ষিণ সুরমার সচেতন ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন (৫৪) এই প্রতিবেদককে বলেন, আসলে আইনি দুর্বলতার কারণেই এদের নজর কেবল লাভের দিকে। যেনতেন প্রকারে ব্যবসা করাই তাদের টার্গেট। নইলে মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ্য কেউ বিক্রির জন্য রাখে?
তিনিও দাবি করেন, ভোক্তা অধিকার আইন সংশোধন করে আরো কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। নইলে সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়বে বই কমবেনা।
সিলেটভিউ২৪ডটকম/ ৯ মে ২০১৯/এক