Sunday, 26 March, 2023 খ্রীষ্টাব্দ | ১২ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ |




অরম্য

গাজাঁ কাহন -২

।। ফুজেল আহমদ।।

বিয়ানীবাজারে সাংবাদিক মিলাদ ভাইয়ের অফিসে ঢুকেই পঞ্চান্ন -ষাট বছরের একজন মুরব্বীকে বসে থাকতে দেখে সালাম দিয়ে পাশে বসলাম .…

মিলাদ ভাই উনার কাজ শেষ করে বল্লেন ফুজেল ভাই তানরে ছিনওইন্নি .……

আমি না বোধক উত্তর দিলে উনি মুচকি হাসি দিয়ে বল্লেন তাইন আমরার শুক্কুর আংকেল বা ভাই .…
তাইন গাইঞ্জা বেছইন .……
আমি তো তব্দা লাগা অবস্থায় …!!!
শুক্কুর আঙ্কেল ই হাসি দিয়ে বল্লেন হ্যাঁ আমি ……

অতপর মিলাদ ভাইকে উনার কি একটা এপ্লিকেশন লিখে দেওয়ার জন্য বলে আমি শুক্কুর সাহেবের সাথে কথপোকথন শুরু করলাম .……

এই বয়সে কেন গাজাঁ বিক্রি করেন সেইটা দিয়ে শুরু করে উনার সাথে খুবই আন্তরিকতার সাথে পারিবারিক সুখ দুঃখের কাহিনী শুনার সাথে বের করার চেষ্টা করি গাজাঁ ব্যবসার পুরো ব্যবস্থাপনাটি ……

যার সারমর্ম দাড়ায় এইভাবে ……

মাত্র তিন থেকে পাচ হাজার টাকার গাজাঁ উনি পাইকারি ভাবে কিনে আনেন এবং সেটা নগদে বাকিতে মিলাইয়া খুচরা ভাবে (২০০৮/২০০৯ সালের হিসাবে ) ২৫ থেকে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে সক্ষম হন .……
এবং সেটা কখনো মাসে দুইবার কিংবা দুই মাসে তিনবার ট্রার্নওভার করাইতে পারেন .…

পৃথিবীর সকল পেশাজীবীদের মতোই যে যেটাতে অভ্যস্ত হওয়ার পর যেমন এক রহস্যময় কারনে বের হতে পারেন না কিংবা চেষ্টা করেন না আমাদের শুক্কুর সাহেব ও তেমনি কি করবো কেমনে করবো এই অনিশ্চয়তার ভয়েই শেষ পর্যন্ত গাজাঁ বিক্রিতেই রয়ে যান .……

তাছাড়া মাত্র পাচ হাজার টাকার পুঞ্জিতে এতো লাভজনক ব্যবসা ও তো আর নেই .……

বতর্মান বিশ্বে গাজাঁর যে চাহিদা এবং এলিট শ্রেণীর যে গ্রাহক সেখানে আমাদের শুক্কুর সাহেব তো পাইওনিয়ার একজন এবং শুধু মাত্র পেঠের তাগিদে তিনি জড়িয়ে পড়েছেন গাজাঁর প্যাচে .……

তবে তিনি ব্যবসায়ী হলে ও যাদের চাদাঁ দিতেন তাহারা কিন্তু ছিলেন সমাজের নীতিনির্ধারক .……

যেমন দুইজন ট্রাফিক পুলিশকে বখরা হিসাবে প্রতিদিন প্রায় পঞ্চাশ টাকার গাজাঁ দিতে হতো .…

পুলিশের একজন এস আই কে দিতে হতো প্রতিদিন পঞ্চাশ টাকার গাজাঁ .…

একজন বিশাল ছাত্রনেতা কে দিতে হতো পঞ্চাশ টাকার গাজাঁ এবং ক্যাশ পঞ্চাশ কিংবা একশত টাকা……

দুএকজন সংবাদ কর্মী কে মাঝে মধ্যে গাজাঁ এবং টাকা দিতে হতো ব্যবসার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে .…

আরো খুচরো ফাউ কাস্টমস তো ছিলোই ……

তো উনার সব শুনে উনাকে করা প্রথম প্রশ্নটি প্রত্যাহার করে নিয়ে বল্লাম আপনার জন্য কি করতে পারি সেটা ই চিন্তা করতেছি .…

আপনি ভালো থাকুন অন্যদের ও ভালো রাখুন .…
এইটা বোধহয় নিয়তি ……

বিয়ানীবাজার থানার ওসি একবার আমাকে বল্লেন তোমার এলাকার মাদকাসক্তদের একটি তালিকা আমাকে দিও এক সপ্তাহের মাঝে .……

আমি তখন আমার এলাকার জনপ্রতিনিধি .তো এক্টু তামাশা করে বল্লাম স্যার যারা গাজাঁ খায় তাদের ও নাম দিবো নাকি .……

উনি বল্লেন গাজাঁকে কি তোমার কাছে মাদক মনে হয় না .…

বল্লাম স্যার গাজাঁ তো দেখি জ্ঞানীগুনিরা খান .…

এবার ওসি সাহেব চমৎকার করে বল্লেন ওকে ঠিক আছে তোমার এলাকার জ্ঞানী গুনিদের নামের তালিকাটা দিয়ে দিও .……

তো আমি ও প্রায় ১৫/১৬ জনের একটি তালিকা দেই এবং একজনের ব্যাপারে সুপারিশ করি কোন প্রকারের হয়রানী না করার জন্য .…

কারন এই একজন ছিলেন কাঠুরিয়া .…

শুধু কাজের জন্যই গাজাঁ খেতে দেখতাম .…

অন্যকোন ঝামেলায় কখনোই ছিলেন না সেই দিনমজুর .…

অতপর ওসি উনার অধস্থনদের বলে ও দিয়েছিলেন ব্যাপারটা .…

আমি সেই লোকটিকে ব্যাপারটা জানালে সে আমাকে বলেছিলো ভাই অনেক উপকার করেছেন পারলে চেয়ারম্যান এর কাছ থেকে একটি লাইসেন্স যদি করে দেই .…
পার্মিশন টাইপ .…
দেওয়া হয়নি তবে চেয়ারম্যান কে ঠাট্টাস্থলে বলেছিলাম ..…

আমার এক বন্ধু সবে সিগারেট খাওয়া শিখেছে তো তাদের ই মহল্লার একজনের পাল্লায় পড়ে একবার গাজাঁ খেয়ে বাসায় ফিরার পর উল্টাপাল্টা কথা বলা শুরু করে .…
ঐ লোকটি আবার কি হতে কি হয় ভেবে তাহার বাসায় গিয়ে তাহার আম্মাকে বল্লো খালা সে মনে হয় সিগারেট খাইলাইছে .…
তাহার আম্মা কথা শেষ করার আগেই ঐ লোকের মুখে যে থাপ্পড় দিয়েছিলেন আজ ১৫ বছরে সে আর বন্ধুর বাসা মুখো হয়নি……

আমাদেরই গ্রামের একজন নাসির বিড়ির সাথে গাজাঁ ও টানতেন .…
তো একবার অন্য এক জন একটি বিড়ি ধার করে খাওয়ার পর উল্টাপাল্টা শুরু করলে বিড়ির মালিক জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কি উল্টানো বিড়ি নিছো .…

অন্যজন হ্যাঁ বল্লে …তিনি বল্লেন কিচ্ছু করার নাই আপ্নে কড়া ডোজ নিয়ে নিছেন .…

আমরা ও জানলাম উল্টো টা হলো;
চিনার জন্য এক্সট্রা স্ট্রং আইমিন গাইঞ্জা …

লেখক: কানাডা প্রবাসী।

 

Developed by :