Saturday, 1 April, 2023 খ্রীষ্টাব্দ | ১৮ চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ |




শবে বরাত ও আমাদের সংস্কৃতি

ফখরুল হামিদ চৌধুরী

ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা, এর প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে মানবতার কল্যাণ ও শান্তি, ইসলাম ধর্মের নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে। অন্যধর্ম থেকে আমদানী করা কোন রেওয়াজ বা সংস্কৃতি এ ধর্মে এক্সেপটেবুল নয় ।

ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যেকটি ধর্মের নিজস্ব সংস্কৃতি কিংবা রীতিনীতি রয়েছে – সেগুলোর নিজস্ব সিস্টেম কিংবা পদ্ধতি রয়েছে। প্রত্যেকেই নিজের পরিশুদ্ধি অর্জনের চেষ্টা করে নিজ নিজ সাধ্যের ভিতরে। তাতে কেউ সফল রাস্তা খোঁজে পায় আবার কেউ ব্যর্থ হয় ।

প্রত্যেক ধর্মের লোকদের ভিতরে কিছু কুসংস্কার রয়েছে – এর বিকাশ মূলত অন্য ধর্ম থেকেই আমদানী করার মাধ্যমে । একটি ধর্মের রেওয়াজ কিংবা রীতি যখন অন্য ধর্মের মধ্যে পালন করা হয় তখনই তাকে উক্ত ধর্মের পরিভাষায় ধর্মীয় কুসংস্কার বলা হয়

এ কুসংস্কার গুলো কিছু অল্পশিক্ষিত / অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিরা গ্রহণ করে লোভের বশঃবর্তী হয়ে ধর্মের নামে চালিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ অর্জন করছে । ধর্মীয় কার্যাবলীগুলো নিতান্ত আনন্দ উৎসব নয় – এর তাৎপর্য হল খোদাভীতি অর্জন করা , কিন্তু বর্তমানে ধর্মীয় কার্যকলাপের ভিতরে লৌকিকতা ও কুসংস্কার ঢুকে ধর্মীয় সতীত্ব হরণ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । বস্তুত বর্তমানে ধর্মীয় মহিমান্বিত দিবস বা রজনী গুলো আচার অনুষ্ঠান ও লৌকিকতায় ভরপুর হয়ে গেছে , এটাও অন্য ধর্ম থেকে আমদানীকৃত একটি থিম । কারণ অন্যান্য ধর্মের ধর্মীয় উৎসব গুলো নির্দিষ্ট কার্যাবলী কিংবা নির্দিষ্ট দিনে সীমাবদ্ধ উৎসব ও আনন্দ , কিন্তু ইসলাম ধর্মে এ প্রথা গৃহিত নয় । সরল ও সহজ বাক্যে বলতে গেলে ধর্মের সাবলীলতা বিশ্লেষণ করে ধর্মের মূল থিম অর্জন করার মতো লোকের যথেষ্ট অভাব এখন পরিলক্ষিত হয় ।

মূল প্রসঙ্গে আসি
————————

মহিমান্বিত রজনী শবেবরাত হলেও আমাদের সমাজ সংস্কৃতির কাছে এ রজনীর মর্যাদা নিতান্ত আচার অনুষ্ঠানে সীমাবদ্ধ , আমাদের সংস্কৃতিতে শবেবরাত মানেই গরুর গোস্ত আর খাসির গোস্ত কিংবা মোরগের মাংসে চাহিদা বাড়ানো , আশ্চর্য হলাম সড়কের মোড়ে মোড়ে মোটাতাজা ষাড় গুলো বাধা অবস্থায় রাখা , মনেহল কুরবানির ঈদের গরু ? না তা নয় – তাহলে কারণ হল – শবেবরাতের আগের দিনে ভাগ বন্টনের হিসাব করে গরুর ক্রেতারা জড়ো হবে এবং তাদের হিস্যা অনুযায়ী বন্টন বুঝে নেবে । কিন্তু শবেবরাতের মহিমা কি গরু আর খাসির গোস্তে সীমাবদ্ধ ?
এখানে প্রচলিত আছে এ রাতে গোস্ত দিয়ে ভালো খাবার খেলে সারাবছর ভালো খাবার ঘরে আসবে । এজন্যই …

গ্রাম কিংবা পাড়া মহল্লায় সেদিন পিঠা পায়েশ তৈরির ধুম পড়ে , এ পিঠা পায়েশ গুলো বরাতি পিঠা নামে প্রসিদ্ধ । অন্যদিকে গ্রামে গঞ্জে বরাতের রাতে কিছু অনির্ধারিত সালাত ও আছে , যা ৮/১০ রাকাতের একটি মেজারমেন্টে সীমাবদ্ধ । কয়েকদিন পূর্বে এরকম একজনের প্রশ্নের সম্মুখীন হলাম – যে – তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন – ” বরাতের নামাজের সংখ্যা কত ? এবং এ নামাজের নিয়তটা কি রকম ” ? প্রশ্নটা শুনে নিজেকে কিছুটা সামলে নিয়ে যথাসাধ্য ২/৪ কথা শুনিয়ে তারপর উত্তর দিয়েছিলাম ।

এ রকম হাজারো কু-সংস্কৃতিতে আবদ্ধ আমাদের ইবাদতের কাঠামোগুলো , আবার কোন কোন এলাকায় এ রাতে আলোক সজ্জার ও প্রচলন রয়েছে ,আগরবাতি মোমবাতি জ্বালিয়ে চিৎকার দিয়ে জিকির করাও এ রাতের অন্যতম ফজিলত মনেকরা হয় । এ রাতে একে অন্যের বাড়ীতে সামান্য আপ্যায়ন করলে বিশেষ মর্যাদা বহণ করার চর্চা রয়েছে ।

সবমিলিয়ে শবে বরাতের রজনী এ যেন এক সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম মনে হবে । ১৫/২০ জন মিলে মিছিল করে রানিং করাও ও একধরণের সওয়াবের অংশ হিসাবে মনেকরা হয় । কবর যিয়ারতে ২৫/৩০ জনের বিশাল বহর নিয়ে আমরা এক রাতেই মৃত ব্যক্তিদেরকে জান্নাতে পাঠাতে ব্যস্তহয়ে পড়ি ।

এ আলোচনার অর্থ এ নয় যে , এ রাতে পিঠাপুলি গোস্ত আহার করা যাবেনা , কবর জিয়ারত করা যাবেনা , ভালো খাবার গ্রহণ করা যাবেনা —— না তা নয় । অবশ্যই যাবে । কিন্তু এ গুলোকে এ রাতের সাথে বিশেষ ভাবে এডযাস্ট করা নিতান্ত ধর্মীয় দিক থেকে ছোট জ্ঞানের পরিচয় । যেগুলো আমাদের বিদআত ও কুফুরির দিকে ঠেলে দেয়। ধর্মের নীতি অনুযায়ী ধর্ম পালন করার ভিতরেই কল্যাণ। এর বাহিরে ধর্ম পালন করা নিতান্ত মূর্খতা ও বোকামীর পরিচায়ক ।

 

Developed by :