নোয়াখালীর সুবর্ণচরে স্বামীকে আটকে রেখে ৬ সন্তানের জননী গণধর্ষণ ঘটনার মামলায় আরও ৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার ধর্ষিতার স্বামীর দায়ের করা মামলায় ওই রাতে ও মঙ্গলবার সকালে তাদের লক্ষ্মীপুর জেলার রামগতি উপজেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতরা হলো উত্তর বাগ্যা গ্রামের সেকান্দার মিয়ার ছেলে রুবেল (২২), একই গ্রামের ইউছুফ মাঝির ছেলে আরমান (২৪) ও আবুল কাশেমের ছেলে রায়হান (২০)।
এর আগে ওই মামলায় সোমবার দুপুরে উত্তর বাগ্যা গ্রামের আবুল বাশার ও ইউসুফ মাঝিকে সুবর্ণচর থেকে গ্রেফতার করে ডিবি ও চরজব্বার থানা পুলিশ। এ মামলায় ৮ আসামির মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হলো। তবে ঘটনার পর থেকেই প্রধান অভিযুক্ত আসামি আবদুল মতলবের ছেলে বেচু মাঝি (৪০) এলাকাছাড়া।
এদিকে, মঙ্গলবার বিকেলে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানুর নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষিতাকে দেখতে যায়। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা, পরিচালক (লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি) মাকসুদা আক্তার ও জনা গোস্বামী। তারা নির্যাতিত নারীর সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। নারী প্রতিনিধি দলের কাছে ধর্ষিতা তার ওপর পাশবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন। মালেকা বানু ও জনা গোস্বামী বলেন, এ ঘটনায় তারা উদ্বিগ্ন। পরে প্রতিনিধি দলটি জেলা পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরিফ ও জেলা প্রশাসক তন্ময় দাসের কাছে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনার দাবিতে পৃথক স্মারকলিপি দেন। এরপর প্রতিনিধি দলটি বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শনের জন্য সুবর্ণচরের উদ্দেশে মাইজদী থেকে রওনা দেয়।
মঙ্গলবার বিকেলে ধর্ষিতার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, এখনও তিনি শরীরে তীব্র ব্যথা অনুভব করছেন। সারা শরীরে নির্যাতনের জায়গাগুলো রক্ত জমে কালো হয়ে আছে।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার সৈয়দ মহিউদ্দিন আবদুল আজিম বলেছেন, তিনি এখন ভালো আছেন।
ওই নারীর চিকিৎসার জন্য বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের গাইনি ডা. শাহানাজ আক্তার লিপিকে আহ্বায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি মঙ্গলবার বিকেলে ধর্ষিতার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছেন। জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. খলিল উল্লাহ বলেন, চরজব্বার থানা পুলিশের চাহিদাপত্র অনুযায়ী নারীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আলামত সংগ্রহ করে ল্যাবরেটরি পরীক্ষার জন্য আবদুল মালেক উকিল মেডিকেল কলেজের পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, ধর্ষিতার স্বামী ও তার ছোট বোন বলেন, সোমবার সন্ধ্যায় মামলার প্রধান আসামি বেচু মাঝি, ইউসুফ ও আবুল বাশারের লোকজন ধর্ষিতার বাড়িতে এসে তার মেয়েদের তুলে নেওয়ার হুমকি দিয়ে যায়। এতে ওই নারী তার সন্তানদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।
চরজব্বার থানার ওসি মো. শাহেদ উদ্দিন বলেন, এ মামলায় ৮ আসামির মধ্যে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের ধরতে অভিযান চলমান রয়েছে।
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরিফ বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
রোববার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নিজের পছন্দের প্রতীকে ভোট দেওয়ায় নোয়াখালীর সুবর্ণচরে বাড়ি যাওয়ার সময় স্বামীকে আটক রেখে গৃহবধূকে তুলে নিয়ে একটি কলাবাগানে বেচু মাঝি, ফজলু, আবুল বাসার, রুবেল, রায়হানসহ তাকে গণধর্ষণ ও নির্যাতন করে। রোববার রাত সোয়া ১২টার সময় তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।