দুর্নীতি কমাতে পারলে গ্যাসের দাম বাড়াতে হয় না: হাই কোর্ট
বিয়ানীবাজার বার্তা ডেস্ক
প্রকাশিত হয়েছে : ০২ এপ্রিল ২০১৯, ১২:৩৯ পূর্বাহ্ণবিয়ানীবাজারবার্তা২৪.কম ডেস্ক।।।
পেট্রোবাংলা ও তিতাসে দুর্নীতির ৫০ ভাগ কমালেই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে মন্তব্য করেছে উচ্চ আদালত।
আদালত বলেছে, আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের যে মূল্য রয়েছে সেটা মেনেই দেশে গ্যাসের দাম বাড়ানো বা কমানো উচিৎ। কারণ ভারত যেখানে ছয় ডলার দিয়ে গ্যাস কিনছে, সেখানে বাংলাদেশ কেন ১০ ডলার দিয়ে কিনবে?
গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়ার মধ্যে ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের এক রিট আবেদনের শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ থেকে এই মন্তব্য আসে।
পেট্রোবাংলা-তিতাসের দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের ভূমিকা নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করে বিচারক বলেন, দুদক একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান। আইনে তাদের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার।
“অথচ তারা পেট্রোবাংলা ও তিতাসের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের কাছে তদন্ত করার অনুমতি চেয়ে পাঠিয়েছে। এই চিঠি চালাচালি কেন? দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করতে না পারলে সেখানকার দায়িত্বশীলদের পদত্যাগ করা উচিৎ।”
দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এই মামলায় পক্ষভুক্ত করতে বলে গ্যাস আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিটিকে (বিইআরসি) প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
গ্যাসের দাম বাড়াতে বিইআরসির শুনানি চলার মধ্যে তা স্থগিত চেয়ে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাই কোর্টে আবেদন করে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।
ক্যাবের আবেদনে বলা হয়, বিইআরসি গত বছরের ১৬ অক্টোবর গ্যাসের সঞ্চালন ও বিতরণ ফি বাড়ানোর পর একটি রিট আবেদনে হাই কোর্ট রুল জারি করেছিল। ওই রুল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় আবারও গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করে গত ১১ মার্চ থেকে ১৪ মার্চ গণশুনানি করে, যা বেআইনি।
গ্যাসের দাম বাড়ানোর বিরোধিতা আছে রাজনৈতিক অঙ্গনেও
আবেদনে বলা হয়, “২০১০ সালের আইনে গ্যাসের বিতরণ ও সঞ্চালন সংক্রান্ত প্রবিধানমালায় গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কতগুলো সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণের কথা বলা আছে। কিন্তু এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ না করেই অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়াতে চাইছে পেট্টোবাংলা ও বিইআরসি। এখানে দাম বৃদ্ধির নামে যেটা হচ্ছে, সেটা হল কোনো একটি বিশেষ মহলকে সুবিধা দেওয়া।
এই আবেদনের উপর গত ১৩ মার্চ শুনানি নিয়ে আদালত রোববার পরবর্তী আদেশের জন্য রেখেছিল। এদিন শুনানির পর কোনো আদেশ না দিয়ে আবেদনটি নথিভুক্ত করে রাখে।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার, রিট আবেদনকারী পক্ষে ছিলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, বিইআরসির পক্ষে ছিলেন কামাল হোসেন মিয়াজী।
ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিইআরসি যেন শুনানি করতে না পারে, সেটা স্থগিতাদেশ চেয়ে আবেদন করেছিলাম। এর মধ্যে ১১ ও ১৪ মার্চ (বিইআরসিতে) শুনানি হয়ে গেছে।
“বিইআরসি আইনের ৩৪(৬) ধারা অনুযায়ী গণশুনানির পর ৯০ দিনের মধ্যে বিইআরসিকে একটা সিদ্ধান্ত দিতে হয়। বিইআরসি যেহেতু সিদ্ধান্ত দেয়নি, ফলে আদালতের এতে হস্তক্ষেপ করার সুযোগ আছে।
“আদালত বলেছে, বিইআরসি আদেশ দিক, আমরা দেখব। আপনাকে নতুন মামলা করতে হবে না। তার মানে আদালতের পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ থাকছে কী আদেশ দেয়, সেটা দেখার।”
ফাইল ছবি
এই আইনজীবী বলেন, “পেট্রোবাংলা ও তিতাসের দুর্নীতি নিয়ে ২০১৪ সালের দুদকের একটা অনুসন্ধান প্রতিবেদন আমরা জমা দিয়েছিলাম আদালতে। এ বিষয়ে আদালতের জিজ্ঞাসা ছিল, দুদক এ নিয়ে কী করেছে?
“এটার পরিপ্রেক্ষিতে তখন আদালত বলেন, দুদককে পক্ষভূক্ত করতে। আমরা এটাও দেখতে চাই যে দুদক কী করেছে। আমরা দুদক এবং এনবিআরকে এ মামলায় পক্ষভুক্ত করার কথা ভাবছি। আদালত আমাদের আবেদনটা নথিভুক্ত করে রেখেছে।”
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বিইআরসিকে শুনানির পর একটা আদেশ দিতে হবে। সেটা আটকাতে আবেদন করেছিল ক্যাব।
“আদালত বলেছেন, যেহেতু উনারা পাবলিক হেয়ারিং করেছেন, তাই একটি সিদ্ধান্ত দেওয়ার সুযোগ আছে। যদি তারা সিদ্ধান্ত দেয় এবং আপনারা সংক্ষুব্ধ হন, তাহলে আদালতে আসার সুযোগ আছে। তখন আপনারা আসবেন, তখন আমরা এটা স্থগিত করব। উনাদের (বিইআরসি) কাজ করতে দিতে চাই। উনারা ভালো সিদ্ধান্তও তো নিতে পারে। ফলে আদালত অন্তর্বর্তী কোনো আদেশ দেননি।”