মো. জয়নুল ইসলাম।।
বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক দু’বারের ভিপি ও জিএস মোহাম্মদ জাকির হোসেন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে চেয়ারম্যান হওয়ার প্রাণপন চেষ্টা করছেন। তিনি বিজয়ী হবেন একথা জনগণকে বুঝানোর চেষ্টা করছেন। কেন হবেন, তাও বর্ণনা করছেন।
গত শুক্রবার দক্ষিণ বিয়ানীবাজারে পথসভায় জাকির হোসেন বলেছেন, ‘আমি বিজয়ী হলে বিয়ানীবাজারে ছিনতাই, গাড়ি চুরি, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড হবে না। এমনকি তাদের গডফাদাররাও জায়গা দখল করে রেহাই পাবে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিজয়ী হলে স্থানীয় এমপি, পৌর মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে সমন্বয় করে উপজেলায় অভ‚তপূর্ব উন্নয়ন করবো। কারো সাথে বৈরিতা কিংবা হিংস্বায় জড়াবো না।’
জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার বড় ভাইয়ের (তফজ্জুল হোসেন) নির্দেশমতে সাধারণ জনগণের কল্যাণে আমি কাজ করবো।’ তিনি বলেন, ‘যারা আমার ভা য়ের বিরুদ্ধে ১৮ বছর পৌরসভা আটকে রাখার অপবাদ দেন, আমিও বিজয়ী হলে উপজেলায় তাই করবো বলে প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছেন। আসলে তাদের উপজেলা পরিষদ বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞান নেই। জাকির হোসেনের নির্বাচনী প্রচারণা দেখে এবং জনগণের সাথে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে, তিনি এবারের নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্ব।
হার-জিত যাই হোক, জাকির হোসেনের সাথে সাধারণ জনগণ, আওয়ামী পরিবারের নেতাকর্মী এবং ভোটারের দীর্ঘ সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। এমনকি চেয়ারম্যান পদে যে ৬জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন তাদের মধ্যে তিনি সর্বোচ্চ শিক্ষিত। বিয়ানীবাজার পৌরসভার সাবেক প্রশাসক মো. তফজ্জুল হোসেন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ ময়নুল হোসেনের ছোট ভাই চেয়ারম্যান প্রার্থী জাকির হোসেন শহীদ পরিবারের সন্তান। তাঁর পিতা মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন এবং যুদ্ধপরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে জাকিরের একভাই নিহত হন। এসব কারণে জাকিরের প্রতি মানুষের অন্যরকম আবেগ-অনুভ‚তি কাজ করছে।
প্রথমবার নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বাজিমাত করার নেশায় মত্ত জাকির ও তাঁর ভক্ত অনুরাগীরা। সেলক্ষে আনারস প্রতীকের প্রত্যেকটি কর্মকান্ড পরিকল্পিত হওয়ায় সহজেই জনগণের নজর কেড়েছে। জাকির হোসেনের পরিবারের সবাই ইউরোপ ও আমেরিকা প্রবাসী। নির্বাচনী প্রচারণায় সবাই দেশে এসে যোগ দিয়েছেন। একমাত্র তিনি স্থায়ীভাবে দেশে বসবাস করেন। সকাল-সন্ধ্যা রাজনীতি নিয়ে সময় কাটান। এভাবে দীর্ঘদিনে গড়ে তুলেছেন বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক শুভাকাক্সিক্ষ। যা এবারের নির্বাচনে প্রতীয়মান হচ্ছে এবং দলীয় প্রতীক নৌকা থাকা সত্তে¡ও নেতাকর্মী প্রকাশ্যে আনারসের পক্ষে মাঠে রয়েছেন। খাঁটি বঙ্গবন্ধুপ্রেমী কর্মীর কাছে বিষয়টি লজ্জাজনক হলেও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত এবং স্থানীয় পারিপাশির্^ক অবস্থার কারণে অনেকেই বিষয়টি গৌণ হিসেবে দেখছেন। এজন্য আপাদমস্তক রাজনীতিবিদ জাকির হোসেন অন্য প্রতিদ্ব›িদ্ব প্রার্থীর চেয়ে মোটেও পিছিয়ে নেই। সরল হিসেবে তিনি বাজিমাত করতেও পারেন।
আওয়ামী লীগ নেতা জাকির হোসেনের সাথে কয়েকটি ইউনিয়ন এবং বিপুল সংখ্যক ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ্যে মাঠে কাজ করছেন। বিয়ানীবাজার পৌরসভার অধিকাংশ দায়িত্বশীল আ’লীগ নেতা নৌকা ছেড়ে আনারসের পরিচর্যায় ব্যস্ত রয়েছেন। হাতেগোনো কয়েকজন ব্যতীত অপর নেতারাও হেলিকপ্টার উড়াতে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। নানা কারণে বিষয়টি পুরো উপজেলাবাসীকে যেমন স্তম্ভিত করেছে তেমনি ইতিহাসে তা কালো অধ্যায় রচিত করবে। কালো আর সাদা যাই হোক পৌরসভার ভোটে জাকির হোসেন অনেকটা ভাগ্যজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
একাধিক সূত্রমতে, উপজেলা আ’লীগের সদস্য সাবেক চেয়ারম্যান এমাদ উদ্দিন, আলীনগর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি নজরুল হোসেন জায়গীরদার, দলের দুবাগ ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক তৌফিক আহমদ চৌধুরী, তিলপাড়া ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল আমীন, লাউতা ইউনিয়নের আলীওর মেম্বার, পৌর কাউন্সিলর সরাজ উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন ও মিছবাহ উদ্দিন প্রকাশ্যে আনারসের সাথে আছেন।
তাছাড়া দলের বেশকিছু দায়িত্বশীল নেতা গোপনে জাকির হোসেনের সাথে আঁতাত করেছেন। এমনকি ছাত্রলীগের পাভেল গ্রæপ সক্রিয়ভাবে প্রচারণা মাঠে থাকায় প্রত্যেক ইউনিয়নে আনারসের প্রচারণা চোখেপড়ার মতো। জাকির হোসেনের বাড়ি পৌর এলাকার পশ্চিম নয়াগ্রামে হওয়াতে আঞ্চলিকতা হিসেবে পাশর্^বর্তী গ্রামগুলোতেও আনারসের আধিপত্য রয়েছে। তবে পৌরসভা ছাড়া অন্যকোন ইউনিয়নে আনারস প্রতীকের একক আধিপত্য লক্ষ করা যায়নি। আলীনগর, চারখাই, দুবাগ, তিলপাড়া ও মুড়িয়া ইউনিয়নে শক্ত প্রতিদ্ব›িদ্বতা হবে। অপর ইউনিয়নগুলোতেও জাকির হোসেনের আনারস প্রতীকের কমবেশি ভোট রয়েছে।
সবমিলিয়ে জাকির হোসেনের যেমন সহজ জয় হবে না, তেমনিভাবে একেবারে যে পিছিয়ে আছেন তাও কিন্তু নয়। সার্বিক তথ্য বিশ্লেষণে, ভোটের হিসেবে অনেকটা ভাগ্যের উপর তাঁর হার-জিত নির্ভর করছে।